যেভাবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সম্পৃক্ত হয় গ্রেপ্তারকৃত দুই জঙ্গী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১) এর অভিযানে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই জঙ্গী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৬ মার্চ শনিবার ভোর ৬টায় নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন পলাশ থেকে এলাকা থেকে ওই দুই জঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ সহ উদ্রাবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন (পিপিএম) শনিবার বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

র‌্যাব-১১ জানায়, র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল শনিবার ভোর পৌনে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন পলাশ নামক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) এর সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন ওরফে সৌরভ ও মাহাদী হাসান ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমান উগ্রবাদী বই ও জঙ্গীবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন ওরফে সৗরভ ২০০৯ সালে শাহাবউদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমী, মনোহরদী থেকে এসএসসি, ২০১১ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১৫ সালে মিলিটারী ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, মিরপুর থেকে ম্যাক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে। ২০১৬ সাল হতে নরসিংদীর পলাশে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছে। সে ২০১৩ সালে অধ্যয়নরত অবস্থায় জসিম উদ্দীন রাহমানির লেকচার শুনে উগ্রবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।

মূলতঃ ২০১৪ সালের দিকে সে ফেসবুকে আফগানিস্থান ও সিরিয়াসহ মুসলমানদের উপর বিভিন্ন হামলার চিত্র দেখে তার মধ্যে উগ্রবাদী চেতনা আরো বেশি প্রকট হয়। পরবর্তিতে কথিত বড়ভাই এর মাধ্যমে ২০১৬ সালে আনসার আল ইসলাম (আনসারুল্লাহহ বাংলা টিম) এ যোগদান করে। ২০১৮ সালে নরসিংদীর পলাশে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করা কালীন আনসার আল ইসলামের কয়েকটি সেলের সমন¡য়কের দায়িত্ব পায়।

সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অসংখ্য ভূয়া ফেসবুক আইডি, টেলিগ্রাম, প্রটেকটেড টেক্ট, টর ব্রাউজার ইত্যাদি এ্যাপস্ ব্যবহার করত। সে অনলাইনে আনোয়ার আল আওলাকি, আব্দুল্লাহ আয্যাম, জসিম উদ্দীন রাহমানি সহ বিশে¡র বিভিন্ন উগ্রবাদী লেখকদের লেখাগুলো সম্পর্কে ব্যাপক ষ্টাডি করে নিজেই উগ্রবাদী নোটসীট তৈরি করে তার নিজস্ব কম্পিউটার ও প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে সংগঠনের সদস্যদের কাছে বিতরণ করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

সে আরো জানায় যে, তার নেতৃত্বে নরসিংদীর পলাশে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হত সেখানে মিলিত হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগঠনের সদস্যরা আসতো। তার মাধ্যমে মাহাদী হাসা ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ গত ৪ মাস আগে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। রাশেদ মূলত আনসার আল ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার পরে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার ও দাওয়াতী কাজ করত। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

র‌্যাব-১১ দাবি করে-প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র‌্যাব-১১ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। ২০১৭-২০১৮ বছরে র‌্যাব-১১ কর্তৃক বেশ কয়েকটি সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সকল অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ ১০৬ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত এ সকল জঙ্গিদেরকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রমের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রাপ্ত সে সকল তথ্যাদি যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের পর জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত যে সকল সদস্য এখনও গ্রেপ্তার হয়নি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।