আদালতে পিপি খোকনের নিয়োগ বাতিল, দায়িত্ব পেলেন মনিরুজ্জামান বুলবুল

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদ থেকে অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকনের নিয়োগ বাতিল করে তার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুলকে নিয়োগ দিয়েছে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ।

একই সঙ্গে ২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকনের নিয়োগ ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর পদ থেকে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুলের নিয়োগ বাতিল করে তাকে সাময়িকভাবে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।  মন্ত্রনালয়ের উপ-সলিসিটর মোশতাক আহাম্মদ স্বাক্ষরিত স্বারকে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলা দায়েরের পর চলতি বছরের ১১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।  সেখানে ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউর হিসেবে দায়িত্ব নেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল।

অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত একেএম বজলুর রহমানের ছেলে। ওইদিন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন।

ওইদিন এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন জানিয়েছিলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন, ৫ খুন, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, শিশু হত্যা, নারী হত্যাসহ অসংখ্য মামলায় সাফল্য অর্জন করেছি।  কিন্তু হঠাৎ করেই গত মাসে (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুদক থেকে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, ১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর নামে ২৭ লাখ টাকার অধিক সম্পদের তথ্য গোপন করেছি।  আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি ৮৫ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছি।

‘৩১ বছর বিশাল ব্যবধান।  জাপানে ছিলাম, ওকালতি পেশা, ৫ বছরের পিপির পেশা।  এতদিনে একজন শ্রমিক বা রিকশাওয়ালারও এর চেয়ে বেশি সম্পদ থাকে।  জিনিসটা আমার কাছে খুব বিব্রতকর মনে হলো, আমি জেলা বিচার ব্যবস্থার একজন প্রধান।  আমার যারা অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন, তারা আমাকে উপদেশ দিল তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তুমি অবসর নাও।  যোগ্য একজনকে দায়িত্ব দাও।  আমার ৭ জন এডিশনাল পিপির মধ্যে সব কিছু চিন্তা করে মনিরুজ্জামান বুলবুলকে যোগ্য মনে করি।  তাই আমি তাকে ভারপ্রাপ্ত পিপি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছি।

তিনি আরও বলেছিলেন, আমি নিজে যেহেতু বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই আমি নিজেও বিব্রতবোধ করি।  কারণ আমি একটা ভালো চেয়ারে বসে থাকলে তদন্ত কর্মকর্তা বার বার আমাকে স্যারই বলবে।  এতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে।  তাই আমি তদন্তের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  আমাদের দেশে সচরাচর এটা কেউ পালন করে না, আমি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

অন্যদিকে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও মহানগর আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন ও তার স্ত্রী সেলিনা ওয়াজেদ মিনুর বিরুদ্ধে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন।  ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পিপি ও তাঁর স্ত্রী আত্মসমর্পণ করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

দুদকের প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন, পাবলিক প্রসিকিউটর, নারায়ণগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেন।  তা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে গোপন করা সম্পদসহ মোট ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৫ টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

অপর মামলায় বলা হয়েছে, পিপির স্ত্রী মিসেস সেলিনা ওয়াজেদ মিনুর দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৬১ টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিতো।  স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে উক্ত গোপন করা সম্পদসহ মোট ১ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৪ টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগে মামলা করা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকনের আয়ের অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।  ওই বছরের ২৮ মে ওয়াজেদ আলী খোকনকে চিঠি পাঠায় দুদক।  পরে ২৯ মে তাকে দুদক কার্যালয়ে এক ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে।