নারায়ণগঞ্জে বহুরূপী প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুুয়েন্টিফোর ডটকম:

র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা হতে বহুরূপী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৪ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  ৯ মে রবিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুুরী।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৮ মে শনিবার র‌্যাব-১১, সিপিএসসি’র অভিযানে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা হতে বহুরূপী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৪ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।  গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ এসহাক আলী, মোঃ মামুন, খন্দকার মোঃ রাজু আহমেদ ওরফে মাসুদ ও মোঃ ফারুক কবির।

র‌্যাব আরও জানায়, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকজনদের টার্গেট করে বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কখনও ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দেওয়া, কখনো ডিলারশীপ পাইয়ে দেওয়া কখনোবা এজেন্ট নিয়োগের কথা বলে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভাড়াকৃত সুসজ্জিত অফিসে ডেকে নিয়ে আসে এবং জামানত/বিনিয়োগ বাবদ প্রতারণামূলকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে।

প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কৌশলে এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্যরা তাদের পাতানো প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সহজ সরল ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত করে আসছে।  তাদের প্রতারণায় ভূক্ত হওয়া কিছু ভুুক্তভোগীর অভিযোগ:

১ম অভিযোগ- টিউবওয়েল স্থাপনের ঠিকাদার নিয়োগের নামে প্রতারণা

মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে এবং পেশায় একজন শিক্ষক।  একটি বেসরকারী কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গভীর ও অগভীর আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল বসানোর ঠিকাদারী কাজ করতেন।  ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রের কিছু সদস্য মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর সাথে দেখা করে সৌদি সংস্থা কর্তৃক কুমিল্লা জেলার লাকসাম, লালমাই ও মনোহরগঞ্জ থানা এলাকায় কয়েক শত টিউবওয়েল স্থাপনের ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সুসজ্জিত অফিসে ডেকে নিয়ে ৩০ লক্ষ জামানত দেওয়া হলে উক্ত কাজের ঠিকাদারী পাইয়ে দেবে বলে প্ররোচিত করে।  বিভিন্ন ছল চাতুরী ও কলা কৌশল করে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের ঠিকাদারী কাজের জামানত বাবদ প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে এবং সু-কৌশলে আত্মগোপন করে।  ভুক্তভোগী মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন যার নম্বর-৩০, তারিখ- ০১/০১/২০২০ ইং এবং র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।

২য় অভিযোগ- দরজা ও চৌকাঠ নেয়ার নামে প্রতারণা
মোঃ আল আমিন, বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় এবং পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী।  গত মার্চ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদেরকে রিয়েল এষ্টেট কোম্পানীর মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাদের নির্মাণাধীন কয়েকটি বহুতল ভবনে প্রায় ২২০টি কাঠের দরজা ও দরজার ফ্রেম লাগানোর লোভনীয় প্রলোভন নিয়ে মোঃ আল আমিন এর সাথে দেখা করে।  উক্ত কাঠ ব্যবসায়ীকে তাদের সুসজ্জিত অফিসে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ছল চাতুরী ও কলা কৌশল করে প্রায় ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক চক্রটি তাদের অফিস পরিবর্তন করে কৌশলে গা ঢাকা দেয়।  ভুক্তভোগী মোঃ আল আমিন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে উক্ত প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করেন।

৩য় অভিযোগ- ভুট্টা ক্রয়ের এজেন্ট প্রদানের নামে প্রতারণা
মোঃ আবু তাহের, বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় এবং পেশায় সে একজন কীটনাশক ঔষধ, বিভিন্ন প্রকার বীজ ও সার ব্যবসায়ী।  প্রতারক চক্রের একজন গত মার্চ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তার সাথে দেখা করে সু-কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাকে বলে, প্রতারক ব্যক্তির জনৈক দুলাভাই ফ্রেশ কোম্পানীর মালিক।  তার দুলাভাই কুমিল্লা এলাকা হতে মাসিক ৮০/৯০ লক্ষ টাকার খোলা ভুট্টা ক্রয় করার জন্য একজন স্থানীয় লোক খুজতেছে এবং ভূক্তভোগী মোঃ আবু তাহের যদি খোলা ভুট্টা কিনে দিতে পারে তাহলে তাকে ফ্রেশ কোম্পানীর এজেন্ট পাইয়ে দিবে বলে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন নিউ চাষাড়া জামতলা এলাকার সু-সজ্জিত ফ্রেশ কোম্পানীর অফিসে আসতে বলে।  পরবর্তীতে তাকে প্রলুব্ধ করে কুমিল্লা জেলার ভুট্টার এজেন্ট পাইয়ে দেবার এবং উক্ত কোম্পানীর মাসিক ৮০/৯০ লক্ষ টাকার ভুট্টার অর্ডার পাইয়ে দেবার কথা বলে অত্যন্ত সূ² কৌশলে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারক চক্রটি অফিস গুটিয়ে নিয়ে অন্যত্র কেটে পড়ে।  প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী মোঃ আবু তাহের র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে উক্ত প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করেন।

উল্লিখিত ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের প্রতিটি অভিযোগ অত্যধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে র‌্যাব-১১ এর একটি চৌকস গোয়েন্দা দল দীর্ঘ ও নিবিড় অনুসন্ধান করে এই বহুরূপী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটিকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।  অতঃপর র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল কর্তৃক অভিযান চালিয়ে গত ৮ মে দুপুর ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন মাসদাইর এলাকা হতে উক্ত বহুরূপী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য খন্দকার মোঃ রাজু আহমেদ ওরফে মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একই বিকেল ৫টায় অভিযান চালিয়ে উক্ত প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ এসহাক আলী ও তার সহযোগী মোঃ ফারুক কবিরকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন দেওভোগ লিচুবাগ এলাকায় আসামী মোঃ এসহাক আলী’র বাসা হতে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বহুরূপী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটির মূলহোতা মোঃ এসহাক আলী’র দেওয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অদ্য ৯ মে রাত দেড়টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর মডেল থানাধীন গলাচিপা এলাকা হতে উক্ত প্রতারকচক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোঃ মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উপরোক্ত মাত্র ৩ জন ভুক্তভোগীর অভিযোগ র‌্যাবের কাছে আসলেও প্রকৃতপক্ষে এই প্রতারক চক্রের প্রতারণায় প্রায় শত শত জন ব্যবসায়ী নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।  গত ১৫ বছর যাবৎ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি এতটাই সূকৌশলে তাদের প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল যে ইতঃপূর্বে তারা কখনও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়নি।  উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রত্যেকেই প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে।