বিয়ের প্রলোভনে টানা দুই বছর ধর্ষণ: মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর মামলা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

হেফাজতে ইসলামের সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন তার কথিত সেই ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ জান্নাত আরা ঝর্ণা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৩০ এপ্রিল শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি।  নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগ করেছেন- শহীদুল ইসলামের সঙ্গে ঝর্ণার দাম্পত্য জীবন সুখে শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল।  তাদের ১৭ ও ১৩ বছর বয়সী দুই সন্তান আছে।  স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্ণার পরিচয় হয়।  তাদের বাসায় অবাধ যাতায়াত থাকার সুবাধে ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে মামুনুল সুকৌশলে প্রবেশ করে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন।  সাংসারিক টানাপড়েনের এক পর্যায়ে মামুনুলের ‘কুপরামর্শে’ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট শহীদুলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।

জান্নাত এজাহারে আরও অভিযোগ করেন, বিচ্ছেদের পর তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল তাকে ঢাকায় আসার জন্য ‘প্ররোচিত’ করেন।  ঢাকায় আসার পর তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় রেখে মামুনুল নানাভাবে তাকে ‘কুপ্রস্তাব’ দেন।  এর ধারাবাহিকতায় মামুনুলের পরামর্শে কলাবাগানে এক বাসায় সাবলেট থাকতে শুরু করেন এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক তার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পকও করেছেন।  কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

বাদীর অভিযোগ, ঘোরাঘুরির কথা বলে ২০১৮ সাল থেকে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে তাকে নিয়ে যেতেন।  সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরতে নিয়ে গিয়েও মামুনুল হক তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন।

এদিকে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) গণমাধ্যমকে জান্নাত বলেন, রিসোর্টে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে।  পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়।  কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন।  কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।

জান্নাত বলেন, পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি।  পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।  পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়।  সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

তিনি বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন ও প্রতারণা করেছেন।  আমি রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই।

এদিকে জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ।  আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।  এরপর ২৬ এপ্রিল মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন তিনি।  পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্নাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ঝর্না উদ্ধার হওয়ার তিন দিনের মাথায় এই মামলা করলেন।

উল্লেখ্য, মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন।  ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে মামুনুল হককে ঘেরাও করেন।  পরে ওই রিসোর্টে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে ব্যাপক ভাংচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

তবে ঘেরাও থাকা অবস্থায় এই হেফাজত নেতা ওই সময় দাবি করেছিলেন, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী।  দুই বছর আগে তিনি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেছেন।  কিন্তু ঘটনার রাতে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড ফাঁস হয়।  সেখানে শোনা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না।  এছাড়া তিনি রিসোর্টে স্ত্রীর নাম সঠিক বলেননি।  তবে ঝর্নার পরিবার দাবি করেন, মামুনুল তাকে বিয়ে করেননি।  বিয়ের প্রলোভনে ব্যবহার করেছেন।