যেখানেই হেফাজতের অরাজকতা সেখানেই প্রতিরোধের ঘোষণা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

হেফাজতে ইসলাম ধর্মের নামে কোথাও কোনো অরাজকতা করার অপচেষ্টা চালালে সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাংচুর, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই নেতার বাড়িঘর, ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠা ভাংচুরের ঘটনার পর পরিদর্শনে ৭ এপ্রিল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় মাহাবুবুল আলম হানিফ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানান। এর আগে সকাল ১০টার পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

হানিফ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যেখানেই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম ধর্মের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করবে, সেখানেই প্রতিরোধ করতে হবে। যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের তালিকা করতে হবে। এদের খুঁজে বের করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, একজন ধর্ম ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে। তাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে, যুবলীগের নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই— ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল তার সঙ্গে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একজন নারীকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন এবং অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন বলেই সাধারণ মানুষ তাকে ধরেছে। এই বিষয়টি কেন্দ্র করে তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীরা যে ভাঙচুর ও নির্যাতন করেছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম-ঠিকানার সংগ্রহ করতে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, যারা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করেছে, মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে, এসব হামলার সঙ্গে যুক্তদের পরিচয় সংগ্রহ করুন। বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করুন। কে কোন ব্যবসায় যুক্ত, এসব তথ্য সংগ্রহ করুন। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। কিন্তু ধর্মের নাম করে অধর্মের কাজ করা, ভাঙচুর করা বরদাস্ত করা হবে না। এই ঘটনায় জড়িত প্রত্যাককেই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আর যারা ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করবে, তাদের হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করব। ধর্মের নাম করে যারাই ভাঙচুর করেছে, এদের ছাড় দেওয়া হবে না।

হামলার শিকার হয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে মামলা করার পরামর্শ দেন মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের ওপর যে আঘাত করা হয়েছে, এই আঘাতের প্রতিঘাত করা হবে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সারাদেশে এই ধর্মের নাম দিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত পরিচয়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে— এখন থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা সরকারের পাশে থেকে এই সকল অপশক্তিকে কঠোরভাবে দমন করবে। আশা করি আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হবেন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাকালীন এই দুর্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে এবং মাস্ক পরিধান করে পুরো জাতিকে করোনার সুরক্ষা দিতে হবে। আর আগামী দিনে সব অপশক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের এমপি একেএম শামীম ওসমান, সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় পরিদর্শ ছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনির বাড়িঘর ভাংচুরের দৃশ্য পরিদর্শন করেন।

এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩ এপ্রিল শনিবার সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে এক নারী সহ আসেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক। ওইদিন স্থানীয় লোকজন তাকে নারী সহ অবরুদ্ধ করেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সোহাগ রনি। অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে হেফাজতের লোকজন রয়েল রিসোর্ট ভাংচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। একই সময়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় এবং নান্নু ও সোহাগ রনির বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর চালায়।