সোনারগাঁয়ে দল নয় ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি: কাল বিদ্রোহী আজ নৌকায়!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

কদিন আগেও বিদ্রোহী ছিলেন মোশারফ হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। ওই সময় আজকের যিনি বর্তমানে বিদ্রোহী মাহফুজুর রহমান কালাম তিনি ছিলেন মুল ধারায়। কিন্তু আজ তিনি বিদ্রোহী। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হলেও নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন কায়সার হাসনাত। ওই নির্বাচনে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন কালাম। তিনি ছিলেন দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অটুট। কিন্তু তাদের এমন রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট যে তারা উভয় গ্রুপই দলের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতিতে ব্যস্ত। কারন ওই জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত কালাম মেনে নিলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কালাম!

নেতাকর্মীরা বলছেন, গত জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে কোনঠাসা থাকা মোশারফ হোসেন ও কায়সার হাসনাত এখন ফুরফুরে মেজাজেই রাজনীতিতে নেমেছেন। যেখানে কালাম এখন রয়েছেন সেই কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেনের অবস্থানে। ওই নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের সিংহ প্রতীকের পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর পর মোশারফ হোসেন ও কায়সার হাসনাত নির্যাতিত নেতাকর্মীদের কোন খোজ খবর রাখেননি।

এমনকি ওইসব নির্যাতিত হয়রানির শিকার নেতাকর্মীদের পাশেও দাড়াননি মোশারফ হোসেন ও কায়সার হাসনাত। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আসায় আবারও সেই সব নেতাকর্মীদের নিজেদের বলয়ে ডাকছেন তারা চাচা ভাতিজা। কাচপুরের যুবলীগ নেতা পারভেজের বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও তার পরিবার ও পারভেজের কোন খোজ খবর নেননি মোশারফ ও কায়সার। একইভাবে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় এবার কালামও দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। পরিস্থিতি জাতীয় নির্বাচনের মত হলে কালামকেও সেই কায়সার হাসনাতের পরিস্থিতি বহন করতে হবে বলেও মনে করছেন সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা। যদিও কালামের পিছনে স্থানীয় এমপির সমর্থনও রয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেকেই।

এদিকে গত ৪ মার্চ সোমবার সোনারগাঁয়ে মনোনয়ন পত্র জমাকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কালাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পাল্টা পাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে উভয় পক্ষের দুই নেতা। যেখানে তাদের পাল্টাপাল্টি মামলায় বাদী করা হয়। মোশারফ হোসেনের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা এসকে সজীব বাদী হয়ে কালামের লোকজনদের আসামী করে মামলা করেন। অপর মামলাটি মোশারফ হোসেনের লোকজনদের আসামী করে কালামের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা নুবনুর রহমান সাবিক। সোমবার রাতে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বর্তমানে এমপি হিসেবে রয়েছেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন হলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে পুলিশ তার বাড়িতে হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করলে কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি।

জাতীয় নির্বাচনের আগে মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী বেশকটি সভায় এমপি খোকার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিলে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে গেলে এখানে এমপি নির্বাচিত হন খোকা। এ নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। কালাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুইবার নির্বাচনে করে তিনি পরাজিত হয়েছেন।