মহানগর যুবদল বাতিল ঘোষণা: নতুন কমিটির নেতৃত্বের লড়াইয়ে দৌড়ঝাপ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি বাতিল ঘোষণা করার পর নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন ডজন খানিক যুবদল নেতা। কমিটি বাতিল ঘোষণার পর দিন থেকেই কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতাদের দ্বারে দ্বারে দৌড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দ্বারেও ঘুরছেন তদবির আদায় করতে।

এ ছাড়াও জেলা ও মহানগরীতে বিএনপির শীর্ষ রাজনীতিকদের সমর্থন নিয়েও কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ করছেন যুবদলের বেশকজন নেতা। এসব তদবির ইতিমধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌছানোর চেষ্টাও চলছে বলেও কেউ কেউ জানান।

সূত্রমতে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তুর নেতৃত্বে গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি বাতিল করা হয়। কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় যুবদলের প্যাডে মহানগর যুবদলের বর্তমান কমিটি বাতিল করার বিষয়টি জানান।

এদিকে মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এক সময় মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় যুবদলের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম। পরবর্তী কমিটিতে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পান খোরশেদ। এরপর সুপার ফাইভের কমিটিতেও তাকে সভাপতি করা হয়। সুপার ফাইবের বাকি চার জনের মধ্যে রয়েছেন সেক্রেটারি পদে মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রশিদুর রহমান রশু।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এই পাঁচনজনকে বহাল রেখে বিরাট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। যেখানে নেতাও যুগ্ম সম্পাদক, আবার তার কর্মীও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। একই দশা সহ-সভাপতি পদের ক্ষেত্রেও। এসব নিয়ে তুমুল সমালোচনা, বিরোধ, পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ, পাল্টা কর্মসূচি ছিল ব্যাপক সমালোচনায়।

এসব সমালোচনাতেও খোরশেদের পদ বহাল রেখেছিল কেন্দ্রীয় যুবদল। কিন্তু করোনা কালে যুবদল নিয়ে খোরশেদের ভুমিকা বিরাট প্রশ্ন তুলে দেয়। যুবদল এমনকি বিএনপির নাম ভুলে গিয়ে তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে করোনাকালে মানুষের সেবায় নামেন। যেখানে তিনি দল ও তার দলের চেয়ারপারসনের নাম কখনও মুখেও নেননি। এমনকি সরকারি দলের এমপির দেয়া একটি মন্তব্যকে নিজের খেতাব হিসেবে দাবি করে জাহির করতে থাকেন। এসব বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় যুবদলের কাছে তুলে ধরেন অন্যান্য নেতারা। ফলে সত্যতা পাওয়ায় এই কমিটি বাতিল করে দেয়।

কিন্তু এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যেমন তেমন হোক খোরশেদের মত একজন সভাপতি পদে কে আসতে যাচ্ছেন। আহ্বায়ক কিংবা সভাপতি পদে সম্ভাব্য আলোচনায় রয়েছেন মমতাজ উদ্দীন মন্তু। সেক্রেটারি পদে একাধিক নেতার দৌড়ঝাপ থাকলেও সভাপতি যোগ্য উত্তরসূরী পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

যদিও কেউ কেউ জানিয়েছেন সভাপতি পদে ইতিমধ্যে কেন্দ্রে রানা মুজিবের যোগাযোগ চলছে। যিনি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন বেশ জোরালো। পুুলিশি নির্যাতনে তার হাতের দুটি আঙ্গুল এখনও ভাঙ্গা। তিনি গত কমিটির সহ-সভাপতি। হামলা মামলায় জর্জরিত এই নেতা। একই সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপনের নামও ওঠে এসেছে এই তালিকায়।

আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম সজলকে সভাপতি পদে বসানোর জন্যও জোর তদবির চলছে কেন্দ্রে। এই পদে নেতাকর্মীদের মুখে আলোচনায় নাম ওঠেছে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানেরও। সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বাতিল কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখনও।

এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদেও আলোচনায় বেশ রয়েছেন মহানগর যুবদলের বাতিল কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু, মহানগর যুবদলের যুবদলের সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহাম্মেদও। একই সঙ্গে সেক্রেটারি পদে আলোচনায় রয়েছেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিকও। যদিও খোরশেদের রোষানলেই মুলত মহানগরীতে রাজনীতি করা পারভেজ মল্লিককেও জেলা যুবদলে যাওয়া হয়। কিন্তু এবার তিনি মহানগরীতেও ফিরার আভাশ দিয়েছেন।

তবে সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে যারাই আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে তিনটি বলয়ে রাজনীতি করেন এমন নেতার সংখ্যাই বেশি। কেউ কেউ রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সুদৃষ্টিতে, কেউ কেউ রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের সুদৃষ্টিতে, কেউ কেউ রয়েছেন জেলার আলোচিত আইনজীবী নেতা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সুদৃষ্টিতে, কেউ কেউ রয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলয় থেকেও। এসব নেতারাও চাচ্ছেন যার যার পছন্দের নেতাদের হাতেই উঠুক মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব। এখন দেখার বিষয় কাদের নেতৃত্বে আসছে মহানগর যুবদলের কমিটি।