মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে আওয়ামীলীগ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও এমপি একেএম সেলিম ওসমানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিস্ফোরক মন্তব্যের বিষয়ে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে আওয়ামীলীগের নেতারা। এমপি শামীম ওসমানকে ছিচকে গুন্ডা ও সেলিম ওসমান অন্যের টাকায় দানবীর সাঁজছেন বলে মেয়র আইভী মন্তব্য করেছেন।

এমন মন্তব্যের বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিদ্যুত কুমার সাহা স্বাক্ষরিত প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই প্রতিবাদ জানায় মহানগর আওয়ামীলীগ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর প্রদত্ত বক্তব্য পর দিন রবিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়। মেয়র আইভী একজন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়ে এ ধরণের অরাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে নিজ দলের নেতা ও সংসদ সদস্য নিয়ে যে ধরণের বিরূপ অশালিন মন্তব্য করেছেন, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। আমরা অবিলম্বে মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যর জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

প্রতিবাদে আরাও বলা হয়- আমরা সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই এমপি শামীম ওসমান তো অনেক দুরের কথা; আপনি পারলে আগে আমাদের মোকাবেলা করুন। আপনার তথাকথিত সত্যের বুলি জনতার সামনে প্রকাশ হচ্ছে। আপনার অরাজনৈতিক আচারণ সংযত করুন। নইলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, বিশ্ব মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মীদের রোষানল থেকে রক্ষা পাবেন না। আপনার এমন কর্মকান্ড দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে, যা আমরা মেনে নিবনা। মেয়র আইভীর বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, ওনার নানা অপকর্মের তথ্য সমৃদ্ধ খবর জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়াতে উনি উম্মাদ হয়ে গেছেন।

‌’আমরা মনে করি, ওনার দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। বিশাল অট্টালিকা থাকার পরও যদি চিকিৎসা নিতে অর্থ কষ্ট হয়, আমরা তার চিকিৎসার ব্যায় বহন করতে রাজি আছি। আপনি (মেয়র আইভী) নারায়ণগঞ্জের রাজধানী দেওভোগ উল্লেখ করে, অন্যান্য এলাকা অসম্মান করে দেওভোগবাসীর সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরী করে ফায়দা লুটতে চান। দেওভোগবাসীকে মূলা ঝুলিয়ে তাদের ঐবক্যবদ্ধের নাটক সাজিয়ে ভোটের রাজনীতির দূরভিসন্ধি আপনার সফল হবে না।’

‘আমরা আশা করি আপনার দখলদারিত্বের পক্ষে দেওভোগবাসী অন্যায়কে সাপোর্ট দিবে না। আপনি নারায়ণগঞ্জের সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্যকে নিয়েও কটাক্ষ্য করেছেন। আপনি ভুলে গেছেন, সেলিম ওসমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত হয়েই নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে অপমান করে পরোক্ষভাবে আপনি আমাদের মাতৃতুল্য জননেত্রীকে অসম্মান দেখানোর দৃষ্টতা পেলেন কোথায়। আমরা শেষবারের মতো আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই, আপনার কৃতকর্মের জন্য স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির কাছে এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কাছে ক্ষমা চান। নইলে আপনার অপকর্মের দায়ভার দল বহন করবে না।

এই যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি হান্নান আহমেদ দুলাল, সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ রশিদ, সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম সাইফুল্লা বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগ সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বিন্দু, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশরাত জাহান স্মৃতি, সাধারণ সম্পাদক রেহানা পারভীন ও মহানগর যুব মহিলা লীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমি।

এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলও মিডিয়াতে বিবৃতি মেয়র আইভীকে এ ধরণের বক্তব্যের বিষয়ে সাবধান করেছেন। কঠোর জবাবও দেন জানান তিনি। এ ছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী সান নারায়ণগঞ্জকে বলেছেন, এ ধরণের বক্তব্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

অন্যদিকে গত শনিবার মেয়র আইভী সেদিন বলেছেন, হিন্দু মুসলমান ক্ষেপিয়ে মনে করেছে শামীম ওসমান অনেক বড় গুন্ডা। না, তিনি প্রকৃত অর্থে একটা ছিচকে গুন্ডা। সাহস নাই। সে সাহস থাকলে আমার সাথে লড়ুক। যদি সত্য সাহস থাকে, তাহলে আসুক আমার সাথে। আমি তাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি, সামনে আসুক।

হিন্দু সম্প্রদায়ের জিউস পুকুরের জমি দখলের অভিযোগ ও আন্দোলন নিয়ে আইভী আরো সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ওই জিউস পুকুর নিয়ে, ফতুয়া দিয়ে, সিধুর পরেছি, হিন্দু হয়ে গেছি; এই ধরণের কথা বার্তা এই যোগের মানুষ এখন খায় না। এইটা শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন ছেলে মেয়েরা সারা দুনিয়ার তথ্য ঘরে বসে বের করে ফেলে। এখানে দখল দারিত্ব আর দখলের জায়গা নেই।’

নগরীর বাগে জান্নাত মসজিদ মাদ্রাসার বিষয়ে মেয়র আইভী আন্দোলনকারী ওলামা পরিষদ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘বাগে জান্নাত মসজিদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নিজেস্ব জমিতে। আপনি অবৈধভাবে সিটির জায়গায় মসজিদ করে রাখবেন? ওয়াক্ফ করার কি প্রয়োজন নাই? ওয়াক্ফ ছাড়া কি নামাজ হয়? আপনারাই বলেন। ওফাক্ফ ছাড়া আপনারা নামাজ পড়ছেন। আমরা বলেছি, এটাকে বৈধভাবে করে দেই। সেখানে কার বাড়া ভাতে ছাই পড়লো? কেন পানি ঘোলা করা হচ্ছে?’

ওলামা পরিষদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্দোলন রাজনৈতিক কারন হিসেবে তিনি দাবি বলেন, ‘৫ বছর পর পর নাটক মঞ্চস্থ করতেই হয়। সেই নাটকে এবার আসছে জিউস পুকুর ও মসজিদের পর্ব। আমি মসজিদ ভাঙ্গবো কি কারণে? যেখানে আমি ৬টা মসজিদ করে দিয়েছি। শেখ রাসেল পার্কের পাশেই আরেকটি বড় মসজিদ সরকার করে দিচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে সহযোগীতা করছি। শুনেন মিথ্যা কিন্তু বেশি দিন টিকে থাকে না। সত্য আসবেই। আমি সত্য কথা বলি, মিথ্যা কথা কোন দিন বলি না। আমি সত্য কথা বলি সব সময়। কাজ করি, মানুষকে সম্মান করি।’

এমপি একেএম সেলিম ওসমান পরের টাকায় দান করে দানবীর সাঁজছেন বলে মন্তব্য করে মেয়র আইভী বলেছেন, দুই ভাই শেখ হাসিনাকে ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের মেয়র ঘোষণা করে দেন। আপনি জাতীয় পার্টিতে আছেন, জাতীয় পার্টি নিয়েই থাকেন। আর নারায়ণগঞ্জকে নারায়ণগঞ্জ থাকতে দেন। নইলে আপনার প্রার্থী দেওয়ার যোগ্যতা নাই, সমর্থনও নাই।’

তিনি সেলিম ওসমানকে আরো বলেন, ‘অন্যের টাকা দান করে দানবীর হয়ে যান। ব্যবসায়ীদের টাকা দান করেন, দানবীর হয়ে যান। যেখানে আছেন সেখানে থাকেন। দানবীর আছেন দানবীর অবস্থায় থাকেন। মোল্লাদের নিয়ে, হিন্দুদের নিয়ে সাংস্কৃতি কর্মীদের নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি কইরেন না। আপানাদের তৌফিক দিক নাটক মঞ্চস্থ করার আর আমাদের তৌফিক দিক জনগণকে নিয়ে সেই নাটক দেখার। বকিটা আপনাদের উপর।’