সেলিম ওসমানের মত বিনিময় সভায় সেই অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের উপ-নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাওয়ার অভিযোগে তৎকালীন শহর বিএনপির এক শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিল শহর বিএনপি। তবে সেলিম ওসমানের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় শহর বিএনপির রাঘব বোয়ালদের অনেকেই উপস্থিত হলেও খড়গ যায় ওই নেতার উপর। যদিও পরবর্তীতে তার অব্যাহতি প্রত্যাহার করেও নিয়েছিল বিএনপি। সেই অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা এবার সেলিম ওসমানের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়েছেন।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের নলুয়া পাড়া জামে মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরের মাঝে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের পর এলাকাবাসী মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে আসছিল। সংঘর্ষের দিন যেখানে ৪ প্লাটুন পুলিশের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে হয়েছিল। সেখানে সোমবার ২৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর সাথে আধঘন্টার আলোচনায় বিরাজমান আতঙ্কের অনলে পানি ঢেলে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে স্বপ্রনোদিত হয়ে আলোচনা সভাটির আয়োজন করায় বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এমপি সেলিম ওসমান।

এ সময় তিনি আগামী ৭ মার্চের মধ্যে ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর নেতৃত্বে মসজিদের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। এলাকার সাধারণ মুসুল্লীদের মাঝে সেই হিসাব প্রকাশ করা হবে। আর কমিটির নেতৃত্বে কারা থাকবেন সেটা এলাকাবাসীই নির্ধারণ করবেন। বিষয়টি নিয়ে পুণরায় এলাকার কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি বা উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমপি সেলিম ওসমানের এমন সিদ্ধান্তের প্রতি সকলে সম্মতি প্রকাশ করেন এবং সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না এবং বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসেন উভয়েই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, ১৮নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ভুলু, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শহর বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন দেওয়ান। ২০১৪ সালের উপ-নির্বাচনে তিনি লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা করায় বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। অথচ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সেলিম ওসমানের নির্বাচনী সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শহর বিএনপির সভাপতি প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম, সহ-সভাপতি সাইদুজ্জামান সাঈদ, হাজী মোহাম্মদ শাহীন, মহিলা দলের তৎকালীন শহর কমিটির সেক্রেটারি দিলারা মাসুদ ময়না। বন্দরে সেলিম ওসমানের সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুুকুল ও দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার। কিন্তু আনোয়ার হোসেন দেওয়ানকেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।

ওই নির্বাচনে শহর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালের এক বিবৃতির কারনে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সভা ডেকেছিলেন শহর কমিটির সহ-সভাপতি সুরুজ্জামান। ওই সভা আহ্বানের কথা জেনে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন এটিএম কামাল। পরে কোরাম পুুরণ না হওয়ায় এটিএম কামালের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যেতে পারেননি বিএনপি নেতারা। গত সোমবার সেলিম ওসমানের মতবিনিময় সভায় গিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন দেওয়ান। যদিও পরবর্তীতে তার অব্যাহতি তুলে নেয়া হয়। ওই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন জেলা ও মহানগর বিএনপির অনেক নেতারাই প্রকাশ্যে সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিন্তু খড়গটা গিয়েছিল আনোয়ার হোসেন দেওয়ানের উপর।