আড়াইহাজার বিএনপির বিতর্কিতদের নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার বিএনপির রাজনীতিতে বেহাল দশা। এখানকার বিএনপির নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের লড়াই চললেও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির দুটি কার্যালয়ের তালাও খুলতে পারেননি নেতারা। উপজেলায় দুই নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ ও মাহমুদুর রহমান সুমন মাঝে সাজে নিজ নিজ বাড়িতে গুটিকয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে সাড়া দেন। উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে বিরাট বিতর্ক।

একই সঙ্গে উপজেলায় নতুন করে যারা নেতৃত্বে আসতে চান তাদের নিয়েও রয়েছে হাজারো বিতর্ক। কমিটিতে আসার প্রতিযোগীতায় রয়েছে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাবিবুর রহমান হাবুর মত বিতর্কিত লোকজন। একই প্রতিযোগীতায় রয়েছে স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর হাতে গলায় ফুলের মালা দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী আবুল কাশেম ফকিরের মত নেতাও। যদিও সেই ছবি প্রকাশের পর কাশেম ফকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাগেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মাথায় আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান হাবুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এ ছাড়াও মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কেউ কেউ জানিয়েছেন ওই সময় দুটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে কোন কমিটিতেই তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের একক স্বাক্ষর ছাড়া সেক্রেটারি কাজী মনিরের স্বাক্ষর ছিল না। ফলে ওই কমিটি নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক।

এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন খসরুর ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন। ওই বৈঠকে নিজেই উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। অথচ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার কথা মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লার। বৈঠকে নয়ন মোল্লাকে জিম্মি করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করেন সুমন। তার এহেন কর্মকান্ডকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি যেনো সুমনের পৌত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ মোল্লাকে আড়াইহাজার বিএনপির রাজনীতিতে কিঞ্চিত দেখা যায়নি গত দশ বছরেও। নয়ন মোল্লা একই পদ নিয়ে কদিন ছিলেন জেলা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব। তারপর থেকে তিনি রাজনীতিতেই নাই।

আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপিতে সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন দুজন। হাবিবুর রহমান হাবুও দাবি করেন তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আবুল কাশেম ফকিরও দাবি করেন তিনিই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তবে ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১২ সালের দিকে হাবুকে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য শোকজ করেছিলেন তৈমূর আলম। ওই শোকজের কোন জবাব না দেয়ায় হাবুকে অব্যাহতি দিয়ে কাশেম ফকিরকেও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের বলয়েই নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় আলোচনায় বেশকজন। যেখানে কেউ কেউ বলেছেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আবদু, হাবিবুর রহমান হাবু, জুয়েল আহাম্মেদ নেতৃত্বে আসার আলোচনায়। গত দশ বছরেও আড়াইহাজার বিএনপিতে দেখা যায়নি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী মেম্বারকে। এখন তিনিই জেলা বিএনপির কমিটিতে এসেছেন। আড়াইহাজারেও আলোচনায় তিনি।

ওইদিকে সরাসরি নির্বাচনেরই ঘোষণা দিয়েছেন পৌর নির্বাচনে যারা জামানত বাঁচাতে টানা হেছড়া হয়েছিল সেই পারভীন আক্তার। তার স্বামী বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন অনুর মাধ্যমে যার রাজনীতিতে। আজাদের মাধ্যমে হয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। নেতৃত্বে আসার আলোচনায় অনু ও পারভীন দুজনই।

এক সময় অনু ও পারভীন দুজনই ছিলেন আজাদ বলয়ে। সম্প্রতি পারভীন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার সামনে আজাদ অনুগামী জুয়েলকে মারধর করেছিল দূর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পর হাবিবুর রহমান হাবু আজাদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ এনে জিডি করেছিলেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্বে আড়াইহাজারে সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুরের পোস্টার ছাপানো হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দেখতে চাই। ১/১১ এর সংস্কারবাদী নেতা আঙ্গুর মাঠের রাজনীতিতে নাই।

এদিকে সভাপতি পদে আসতে চান মাহমুদুর রহমান সুমন। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজপথের রাজনীতিতে তার সামান্যতম ভুমিকা নাই। আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর হাতে ফুলের মালা দিয়ে আওয়ামীলীগে যাওয়া কাশেম ফকিরকে নিয়ে নেমেছেন সুমন।