মেয়র ও কাউন্সিলরের দিকে শিশুর অভিযোগ: লজ্জা পেলেন সেলিম ওসমান!

আবদুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়া আদর্শ শিশু সরকারি বিদ্যালয়ের পাশে খোলা আবর্জনার দূর্গন্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানকে সমস্যার কথাটি তুলে ধরলে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমি লজ্জা পেয়েছি। এতটুকু বাচ্চা সেও একটা ডাস্টবিনের সমস্যার কথা বললো।

২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে শহরের আমলাপাড়া আদর্শ শিশু সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে এক শিক্ষার্থী ওই সমস্যার কথা তুলে ধরলে এমপি সেলিম ওসমান এমন মন্তব্য করেন।

এর আগে এমপি সেলিম ওসমানে অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তাদের কাছে লেখাপড়ায় কি কি সমস্যা রয়েছে তা জানতে চান। শিক্ষার্থীরা তাদের চলাচলের সরু রাস্তার সমস্যা, খেলার মাঠ চাই, একটি মানসম্মত লাইব্রেরী চাই ইত্যাদি সমস্যা তুলে ধরেছে। রাস্তার সমস্যা নিয়ে সেলিম ওসমান এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান এমপি।

আর ওই ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিনের সমস্যা নিয়ে ওই এলাকার কমিশনাকে উদ্দেশ্য করে এমপি সেলিম ওসমান ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে যেন শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হিসেবে রয়েছেন বিএনপি নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

দীর্ঘদিন যাবত ওই ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধের কারনে শিশুদের পথ চলতে কষ্ট হয় বলেও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের দিকে অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখলে এমপি সেলিম ওসমান ওই শিশুটির অভিযোগে লজ্জা পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।

সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তিনটা জায়গা মনোযোগ দেই। সেটা হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পায়ন। আমি শিক্ষার উপর বেশি মনোযোগ দেই। আমার কাজটা হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে। আমরা আর কিছু করতে পারবোনা। যদি ওদেরকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে বাংলাদেশে আর অভাব থাকবেনা। আমাদের সরকার আমাদেরকে দিক-নিদের্শনা দিয়েছেন ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য কিছু করার জন্য।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি জ্ঞানার্জনের জন্য অন্যান্য বই পড়ার ব্যাপারেও উৎসাহিত করার জন্য অভিভাবকদের সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পড়তে চায়, শিখতে চায়, খোলা পরিবেশ চায়। প্রত্যেকটি বাচ্চা তাদের মনের খোঁড়াকের কথা বলেছে। ওদেরকে আউট নলেজ দেয়ার ব্যপারে সময় দিবেন।

স্কুল ভবনটির সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে তিনি স্কুল কমিটির সভাপতি আরিফ আলম দিপুকে বুয়েটের অনুমোদন পাওয়া যায় কিনা সেটির খোঁজ নিতে বলেন। যদি সেটি পাওয়া যায় তবে পঞ্চম তলা করার ব্যাপারে সার্বিকভাবে সহযোগিতা সাংসদ করবেন বলে জানান। পাশাপাশি স্কুলের পাশের খোলা জায়গাটি কেনার ব্যাপারেও তাঁর সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

বিদ্যালয়টির বর্তমান পর্ষদের সভাপতি আরিফ আলম দিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল উপস্থিত ছিলেন।

এখানে উল্লেখ্যযে, বরাবরের মত এমপি সেলিম ওসমান শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তব্য না রেখে মঞ্চে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে এসে নিজেদের চোখে দেখা এবং উপলুদ্ধি থেকে বিদ্যমান সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে বক্তব্য রাখার আহবান রাখেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সামিহা ইসলাম, ওয়াসিদ খান, শাওন সাহা, নাজিফ হুমাইরা, আমিনুল হক সোহান সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা স্কুলের ভবনটি আধুনিকায়ন, স্থান সংকুলানের জন্য উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, মেধা বিকাশের জন্য খেলার মাঠ, স্কুল অভ্যন্তরে পাঠাগার, সহ বিভিন্ন দাবী তুলে ধরে। সেই সাথে স্কুলটির অদূরে আসা যাওয়ার পথে ময়লার ডাস্টবিনটি অপসারণ এবং স্কুল ছুটির পর নিরাপদ রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবী রাখে। পাশাপাশি স্কুলের কাব স্কাউটস সদস্যদের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সুইমিং পুলে সাঁতার শেখার সুযোগ করে দেওয়ার দাবী রাখেন। তারা নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সুইমিং পুলে সাতার কাটতে চান বলে দাবি করে তার ব্যবস্থা করার দাবি জানায়।

পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, হয়তো আমাদের নিজেদের ভুলের কারনে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ব্যর্থতার মুখ দেখছেন। তাঁরা খোলামেলা পরিবেশে ঘুরতে চায়। বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা করি না। অথচ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি বাস নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের কাছে দেওয়া আছে কিন্তু সেগুলো কেউ ব্যবহার করছে না। আর স্কুলের খেলার মাঠ সহ ভবনটি আধুনিকায়নের জন্য আমি পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক মন্ডলী, অভিভাবকবৃন্দ, সহ এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আশা করছি আপনাদের চাওয়ার থেকেও বেশি কিছু আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে দিয়ে যেতে পারবো। আর এ জন্য আমার সব থেকে বেশি প্রয়োজন এই এলাকার সাধারণ মানুষদের সহযোগীতা। আমি কমিটির নেতৃবৃন্দদের কাছে অনুরোধ করবো খুব দ্রুত সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করতে। যাতে করে অতীতের ভুল ভ্রান্তিগুলো ঠিক করে আমরা সুন্দর ও উজ্জল আগামীর পথে এগিয়ে যেতে পারি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি মেয়রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এই এলাকার কাউন্সিলরকে অনুরোধ করবো স্কুলের অদূরে যাওয়া আসার পথের ডাস্টবিনটি যেন দ্রুত অপসারণ করা হয়। একটা স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী এটা বুঝে আমাদের বলতে পারে। আর আমরা বড়রা সব বুঝেও মুখ বুঝে সহ্য করে যাই এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর একটি বিষয়। আর রাস্তা পারাপারের সময়ে নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনে আমি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো।