রাজীবের রাজনীতির পেছনে কালো হাত, হতাশ কর্মী বাহিনী!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটিতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এই কমিটির বাকিপদগুলোতে আনাড়ি ধাচের ওয়ানম্যান শো নেতাদের শীর্ষ পদে রাখা হলেও জেলা বিএনপির বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের মত সাংগঠনিক নেতাদের রাখা হয়নি সদস্য পদেও।

এই কমিটি গঠনের পর মাসুকুল ইসলাম রাজীবের বিশাল কর্মী বাহিনী হয়েছেন চরম হতাশ। কমিটি গঠনের পর নারায়ণগঞ্জে চাওড় করা হয়েছে কমিটি তারেক রহমানের নির্দেশনায় গঠিত। এমন তথ্যের কারনে মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও তার বিশাল কর্মী বাহিনী নিশ্চুপ।

কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, নাসির উদ্দীন, আব্দুল হাই রাজু, লুৎফর রহমান আব্দু, মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা, জাহিদ হাসান রোজেল।

যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে জেলা বিএনপির গত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন জাহিদ হাসান রোজেল, নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা। বিগত কমিটির অপর সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। কিন্তু কমিটিতে রোজেল ও পান্না মোল্লার ঠাই মিললেও রাজীবকে রাখা হয়নি।

মাসুকুল ইসলাম রাজীবের নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটিতে এমন সব নেতাদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য পদে রাখা হয়েছে যাদের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় অনেক কর্মী রয়েছে যারা রাজীবের কর্মী। অনেকের পেছনে একজন কর্মীও নেই তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে। অস্ত্র ডাকাতি মামলার দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাবিবুর রহমান হাবু সদস্য পদে থাকলেও রাজীবকে রাখা হয়নি। যে পান্না মোল্লা অস্ত্র উচিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর গুলিবর্ষণ করেছিলেন সেই পান্না মোল্লাই যুগ্ম আহ্বায়ক!

যারা বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন না এমন সব নেতাও কমিটিতে। কমিটির অনেকেই সরকারি দলের হয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করেন যেমন আজাদ বিশ্বাস তাকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। এই কমিটির শীর্ষ দুই নেতার ক’জন চ্যালা চামুণ্ডাও পদ পেয়েছেন।

কমিটি বিশ্লেষণ করে নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের অনুগামী তার চাচা লুৎফর রহমান আব্দু, হাবিবুর রহমান হাবু, জুয়েল হোসেন কমিটিতে ঠাই পেয়েছেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন ও তার অনুগামী আবুল কাশেম ফকিরও পদ পেয়েছেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনির অনুগামী মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, নাসির উদ্দীন, বশির উদ্দীন বাচ্চু সহ বেশক’জন কমিটিতে পদ পেয়েছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের অনুগামী কামরুজ্জামান মাসুম, সেলিম হক রুমী, আল মুজাহিদ মল্লিক কমিটিতে পদ পেয়েছেন।

মামুন মাহামুদ নিজে ও তার অনুগামী মনিরুল ইসলাম রবি, আব্দুল হাই রাজু, আব্দুল হালিম জুয়েল, শাহআলম হীরা, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তারই অনুগামী খন্দকার আবু জাফর, শাহআলম মুকুল, মোশারফ হোসেনও পদে এসেছেন।

এত্তসব নেতারা কমিটিতে পদে থাকলেও রাজীব কেন নাই? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নানা রহস্য। মুলত মাসুকুল ইসলাম রাজীবের সঙ্গে এক সময় বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গেও তিনি রাজনীতি করেছেন। সাম্প্রতিককালে নজরুল ইসলাম আজাদের হয়েই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন রাজীব।

গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে আলোচনায় ছিলেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। সেই আলোচনা জেলা ছেড়ে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত চলে যায়। সেই ম্যাসেজ সুদূর লন্ডনেও পৌছে যায় বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু রাজীব আজাদের অনুগামী পরিচিত থাকায় রাজীবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন মাহমুুদুর রহমান সুমন। ব্যবসায়ী কাম বিএনপি নেতা সুমনের বিদেশে যাতায়াত রয়েছে বেশ। লন্ডন পর্যন্ত সেই যোগাযোগও রয়েছে তার। রাজীবের বিরুদ্ধে সেখানে নানা তথ্য দেয়া হয়। কারন রাজীব জেলা বিএনপিতে আসলে আড়াইহাজারের রাজনীতিতে সমস্যায় পড়তে পারেন সুমন এবং সুবিধা পাবেন আজাদ, এমন শঙ্কা থেকেই রাজীব ঠেকাও মিশনে নামেন সুমন।

কিন্তু নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সুমনের বিরোধীতার বাহিরেও আজাদের ভুমিকা নিয়েও রহস্যে ঘেরা। কারন আজাদের চাচা সহ তার অনুগামী বেশক’জন এই কমিটিতে পদে এসেছে। এমনকি আজাদ অনুগামী অস্ত্র ও ডাকাতি মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাবুও যখন পদ পেয়ে গেল তখন রাজীব কেন কমিটির বাহিরে? সেই প্রশ্নে আজাদের ভুমিকা নিয়ে রহস্য দেখছেন রাজীবের নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের নেতা ছিলেন রাজীব। সেই সুবাধে জেলা জুড়ে তার বিশাল কর্মী বাহিনী তৈরি হয়েছে। রাজপথে তার বিশাল বিশাল শোডাউন চোখে পড়ার মতই ছিল। রাজীব রাজপথে নামলেই ব্যাপক কর্মী সমাগম ঘটে। ছিলেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদেও। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য ও পরবর্তীতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

তাদের দাবি- জেলার আনাচে কানাচে তার বিশাল কর্মী সমর্থক রয়েছে। কিন্তু এমন একজন সাংগঠনিক নেতাকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে না রাখার হেতু কি? সেই উত্তর খুঁজছে নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি রাজীবের রাজনীতির পেছনে কালো হাত পড়েছে। কাজী মনির ও মামুন মাহামুদের অনেক কর্মকান্ডের তিনি বিরোধীতা করেছিলেন। যে কারনে তারাও ছিলেন রাজীবের বিপক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে কি ঘটতে যাচ্ছে রাজীবের রাজনীতিতে? জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকবেন তো নাকি সেখান থেকেই মাইনাস ফর্মূলায় রাজীব?