জাতীয় পুরস্কার বেগম রোকেয়া পদক পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার শীতলক্ষ্যার স্বচ্ছ নদীর পাড়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তারের জম্ম। নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জের কদম রসূলদরগাহ শরীফে খাদেম পরিবারে ১৯৫২সালে ২৩শে মে মাসে জম্ম গ্রহণ করেন। ৬০ দশকের সেই ছোট্ট মেয়েটি ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় মোর্চা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফন্ট্র গঠনকালে জনমত সৃষ্টির জন্য সারা বাংলাদেশে সফরকালে যখন তারা নারায়ণগঞ্জে সফর করেন এবং নারায়ণগঞ্জ বালুর মাঠে (এখন ডিআইটি মার্কেট) সেই সময় মাত্র ক্লাস সিক্স থাকায় অবস্থা বক্তব্য রেখেছিলেন।

১৯৬৬ সনে ছাত্রলীগে যোগদান করেন এবং তার সাথে সাথে ১৯৬৬ সালে প্রস্তাবিত ছয় দফা আন্দোলনে (যা বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে খ্যাত) সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, ছয় দফা আন্দোলনে রাজপথে অবস্থান নেতৃত্ব প্রদান করেন।

তিনি ১৯৬৭ সালে আইয়ুব খান বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নেতৃত্ব দান করেন। নারায়ণগঞ্জ গালর্স হাই স্কুল ও নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজে ছাত্রী অবস্থায় তিনি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তাছাড়া তিনি কলেজ এ ছাত্রী সংসদ এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদিকা নিযুক্ত হন। তাছাড়া তিনি ১৯৭৪ সালে বাকশাল এর প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।এর সাথে সাথে তিনি ১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার নিযুক্ত হন।

দাতা সংস্থার সহযোগীতায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তারের সংগঠন মহিলা সংঘের মাধ্যমে শত শত নারীর চাকুরী প্রদানসহ কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার চোখ খুলে দিয়েছেন। প্রসারিত করেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী। বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার, ব্যক্তিজীবনে দক্ষ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে বিভিন্ন বিদেশী সাহায্য সংস্থার আনুকুল্যে ১৩৮টি দেশে ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, সেমিনার এ অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা আন্তজার্তিক ট্রেড ইউনিয়ন(BFTUC) এর প্রেসিডেন্ট হিসাবে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে তিনি এখনও সোচ্চার। বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর,সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ এবং বিভিন্ন সংগঠনের সার্বিক সহযোগীতায় তার চলার পথে সম্মান ও সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। নারায়ণগঞ্জ জেলার বহুনারী কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে, সমাজ সেবায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে এ তার আনন্দ, উচ্ছাস। বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার ওদের পথ প্রদর্শক, পূর্বসুরী। সর্বক্ষেত্রে এ স্বীকৃতি তাকে আনন্দিত করে।

একজন নারী নেত্রী হিসেবে প্রজম্ম,যোগ্য উত্তরসূরী তৈরী করতে পেরেছেন। এটাই বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এর বড় পুরস্কার ও পরম প্রাপ্তি ।এটাই তার কন্টকাকীর্ণ লম্বা পথ পাড়ি দেয়ার স্বার্থকতা। ওরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সম্মানীত করে, নারী অধিকার সংক্রান্ত সকল বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে। আজ জীবন সায়াহ্নে এটাই বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এর অর্জন। ওদের মাধ্যমেই ইতিহাসের পাতায় চিরকাল বেচে থাকবে এটাই তার একান্ত কাম্য।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার, কমান্ডার পৃথিবীর ১৩৮ দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, আলোচনা সভা, রেলী ওয়ার্ক শপ ইত্যাদি অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে তিনি কনসালটেন্সি করছি ITUC/UNDP এর পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া শ্রমজীবি এবং হকার নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাছাড়া তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠিত স্কুল কিন্ডার কেয়ার হাই স্কুল পরিচালনা করছেন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সংঘের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে কর্মরত।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার জাতীয় পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া তিনি জয়িতা পুরস্কার-২০১৪, জাতীয় পুরস্কার-২০০৭, বেস্ট সমবায় পুরস্কার-১৯৯৯ গ্রহণ করেছেন।