আমি এমপি খোকাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, সে এই কাজ করতেই পারেনা: আকরাম আলী শাহীন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা সম্পর্কে জেলা, মহানগর ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের বেশকজন নেতাদের নানা অশালীন বক্তব্যের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহিন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের গেটের সামনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতারা এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে দায়ী করে নানা অশালীন অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন।

এসব বক্তব্য রাজনৈতিক নেতাদের মুখে কতটা মানানসই এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা জানতে চাইলে মহানগর জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন বলেন, যারা পরস্পর রাজনীতিককে সম্মান করে কথা বলতে পারেনা কিংবা অভদ্র ভাষায় কথা বলে তখন তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে, সে নিজে কোথা থেকে ওঠে এসেছে। যদি তার অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল হয় তাহলে ধরে নিবেন তার নিজেরই ব্যক্তিগত সমস্যা। আর যদি তার ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ থাকে তাহলে ধরে নিবেন এটা তার বংশগত দোষ। সুতরাং রাজনৈতিক মাঠে তার বক্তব্যের ভাষাতেই তার বংশধরের পরিচয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কাউকে অসভ্য ভাষায় বক্তব্য দিয়ে নিজে বড় নেতা হওয়া যায়না। এ ধরণের কিছু লোকজনের কারনে আজকে অনেক মানুষ রাজনীতিকে ঘৃণা করে। আমরাও এসব বিষয়ে নিন্দা জানাই।

এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমপি খোকা ও আনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তার নামফলক এমপি খোকা ভাঙ্গার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। আমি এমপি খোকাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, সে এই কাজ করতেই পারেনা। এমপি খোকা ও আনোয়ার ভাইকে বিতর্কিত করতেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

এমপি খোকার অবদানের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই করোনাকালে এমপি খোকা জনগণের মাঝে যে ভুমিকা রেখেছেন, আজকে যারা বড় বড় কথা বলছেন তারা তখন কোথায় ছিল? জনগণের পাশে দাঁড়াতে জনপ্রতিনিধি হওয়া লাগেনা। ৯৮ সালের বন্যার সময় প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান জনগণের মাঝে যে ভুমিকা রেখেছিলেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। নাসিম ওসমান তখন তো এমপি ছিলেন না। করোনাকালে সোনারগাঁয়ের মানুষের পাশে এমপি খোকা প্রসংশনীয় ভুমিকা রেখেছেন। কিন্তু যারা এমপি খোকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারা তখন কোথায় ছিলেন? তারা তো জনগণের পাশে দাঁড়াননি।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার ঘটনায় ২০ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে জেলা পরিষদের আয়োজনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুুল ইসলাম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, জেলা পরিষদ সদস্য আলাউদ্দীন আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, রোমান ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট নূর জাহান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সামসুজ্জামান খান ভাসানী প্রমূখ।

মুলত সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের জাতীয়পার্টির টানা দুইবারের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে ওই নামফলক ভাঙ্গার জন্য দায়ী করা হয়। ওই ঘটনায় এমপি খোকাকে অভিযুক্ত করেই সমাবেশের সকল বক্তারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বেশকজন নেতা তাদের বক্তব্যে এমপি খোকার চরিত্রহননের চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ হুমকি ধমকি দিয়েছেন। এসব ছাড়াও বক্তব্যে এমন সব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা সংবাদপত্রের ভাষায় লিখনযোগ্য নয়। কারো কারো বক্তব্যের ভাষা নিম্মশ্রেণির লোকজনদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে। সমাবেশে আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে কে কত নোংরা ভাষায় এমপি খোকাকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য রাখতে পারবেন চলছে সেই প্রতিযোগীতা। সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা নানা অশ্লীল শ্লোগানও দিয়েছেন।

ওই সময় আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে উপস্থিতিদের মাঝে হাসির খোরাক সৃষ্টি হলেও সমাবেশ শেষে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে যখন ওইসব নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি সোনারগাঁয়ের সচেতন নাগরিকদের মাঝেও এমন সব বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। উপস্থিত সাংবাদিক সমাজও ওইসব নেতাদের ওইসব বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচার করেননি। তবে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যে কারনে আবার জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরাও ফেসবুকে কঠোর সমালোচনা করে মন্তব্য করছেন।

জানাগেছে, ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ের সামনে পৌর আওয়ামীলীগের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এর আগের দিন ১৮ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ২০ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে ওই বিদ্যালয়ের সামনে জেলা পরিষদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন যেখানে আওয়ামীলীগের বেশকজন নেতা অশালীন অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় বক্তব্য রাখেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা হয়েছে। ২১ নভেম্বর শনিবার মহানগর আওয়ামীলীগের ব্যানারে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এখানেও জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা নানান ধরণের চরিত্রহননের মত বক্তব্য রাখেন।