সাখাওয়াতকে দমানোর চেষ্টা তবুও উত্থান, তৈমূর এবার মুখোমুখী!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে এক সময় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। কিন্তু বিএনপির রাজনীতিতে সাখাওয়াতের উত্থানে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার নিজেই। কিন্তু বাধার মুখে লড়াই করে আজকে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে আলোচিত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এবার সেই সাখাওয়াতের কাছেই ধরাশয়ী হওয়ার পথে তৈমূর আলম খন্দকার। ফলে আবারো সাখাওয়াতের সামনে আরেক ধাপ উপরে ওঠার হাতছানি।

বিএনপির নেতাদের সূত্রে জানাগেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জেলার আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির কমিটি গঠনে সাখাওয়াতকে বঞ্চিত করেন তৈমূর আলম খন্দকার। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম ও বর্তমান মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালকে। নামকাওয়াস্তে সম্মেলনের মাধ্যমে অনেকটা মেকিং করে তাদের নির্বাচিত করা হয় বলে ওই সময় অভিযোগ তুলে পাল্টা কমিটি গঠন করেন নেতাকর্মীরা। পাল্টা কমিটিতে নুরুল ইসলাম সর্দারকে সভাপতি, সাখাওয়াতকে সেক্রেটারি ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। কমিটি গঠনের পর নারায়ণগঞ্জে দুটি বলয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেই পরিস্থিতিতে কয়েক বছর পর শিথিল হয়ে আসলে তৈমূর আলমের সঙ্গে আবারো রাজনীতিতে মিলিত হোন সাখাওয়াত হোসেন খান।

এদিকে ওই সময় নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতি একক নিয়ন্ত্রক তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূর আলম খন্দকারের অঙ্গুলী ইশারাতেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি কিংবা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল হতো। ২০১৩-১৪ সালের নির্বাচনে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। এমনকি আগের বছরের নির্বাচনে বার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া লিখিতভাবে কাগজে সাখাওয়াতের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যে, পরবর্তীতে নির্বাচনে বারী ভুঁইয়া সাখাওয়াতকে সমর্থন করবেন এবং বারী ভুঁইয়া নির্বাচন করবেন না। কিন্তু নির্বাচনের সময় বারী ভুঁইয়া আবারো নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তৈমূর আলম খন্দকার সাখাওয়াতকে বঞ্চিত করে বারী ভুঁইয়াকেই সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেন।

এর আগে তৈমূর আলম খন্দকারের মাসদাইরের বাসায় বিএনপির আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক করেন তৈমূর। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ওই বৈঠকে অধিকাংশ আইনজীবীরা বারী ভুঁইয়ার পক্ষে সমর্থন জানান। ওইদিন সন্ধ্যায় ওই বৈঠক থেকে অনেকটা অশ্রুসিক্ত চোখে বের হয়ে যান সাখাওয়াত হোসেন খান।

কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী হোন সাখাওয়াত হোসেন খান। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বারী ভুঁইয়া ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী আনিসুর রহমান দিপুকে পরাজিত করে সভাপতি নির্বাচিত হোন সাখাওযাত হোসেন খান। আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এককভাবে সভাপতি পদে এর আগে নির্বাচিত হতে পারেননি। ওই বছরের মেয়াদকালেই ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার সহ সাত খুনের ঘটনা ঘটে। সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করেন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যান। এই ঘটনায় সাখাওয়াতের কঠোর ভুমিকা সারা দেশবাসীর কাছে প্রসংশিত হয়ে ওঠে। একইভাবে বিএনপির কাছেও তিনি এসেট হিসেবে রূপান্তরিত হয়ে যান। তার কঠোর ভুমিকায় শেষ পর্যন্ত খুনিদের ফাঁসির রায় হয়।

আলোচিত এই বিএনপি নেতা ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচনেও তৈমূর আলম খন্দকার ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে কাজ করেন এবং ধানের শীষ প্রতীকের বিরুদ্ধে থাকতেও নির্দেশ দেন। একইভাবে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ধানের শীষের বিরোধীতা করার পরেও সাখাওয়াত হোসেন খান ৯৬ হাজার ভোট পান। নির্বাচনের পর জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে তৈমূর আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সাখাওয়াতকে অধিষ্ট করা হয়।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায়ও বিএনপির অধিকাংশ আইনজীবীদের নিয়ে রাজনীতি করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তৈমূর আলমের ধাম্ভিকতা, হটকারী সিদ্ধান্ত ও চাটুকারভিত্তিক রাজনীতির কারনে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির আইনজীবীরা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যার ফলে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় একটি অনশন কর্মসূচিতে তৈমূর আলম খন্দকার ও আবুল কালাম সহ মাত্র ২১ জন আইনজীবীর অংশগ্রহণ দেখা যায়।

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় সরগরম এখন বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি। এখানে তৈমূর আলমের অনুগামীদের মধ্যে থেকে তিনজন ও সাখাওয়াত বলয় থেকে তিনজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এর আগে একটি পক্ষ সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন এবং করছেন। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমেই কমিটি গঠন চান সাখাওয়াত ও তার বলয়ের আইনজীবীরা। ফলে তৈমূর আলম অনুগামীদের নির্বাচনে যেতেই হচ্ছে। আর ধারণা মাফিক ফলাফলও তাদের বরণ করতে হবে।

বিএনপির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আইনজীবী ফোরামের সদস্য ফরম বিতরণ ও তা পূরণ করে জমা দেয়া হয়েছে। যেখানে সাখাওয়াত বলয় থেকে ১৫২ জন ও তৈমূর বলয় থেকে ৮৬ জনের ফরম কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। এর ফলেই আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনে নির্বাচনের ফলাফল অনুমান করা যায়। বড় ধরণের কোন ঘটনা না ঘটলে তৈমূর বলয়কে স্বাদরে পরাজয় বহন করতে হবে। এর আগে সাখাওয়াতকে দমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন তৈমূর। কিন্তু এবার সাখাওয়াতের মুখোমূখী হয়ে গেছেন তৈমূর আলম। তাকে এবার সাখাওয়াতের কাছেই পরাজয় বরণ করতে হবে। ফলে এ বিষয়টি জেলা ছাপিয়ে কেন্দ্রেও পৌছে যাবে নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকারের রাজনীতি শেষের দিকে, উত্থান ঘটেছে সাখাওয়াতের। ফলে এবার আরেক ধাপ উপরে উঠার হাতছানি সাখাওয়াতের সামনে।