আমি কাউকেই সমর্থনের ঘোষণা দেইনি: ফারুক ভূঁইয়া

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনকে দিন আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়েছে। এবার নতুন করে প্রশ্ন ওঠেছে একজন প্রার্থীর পক্ষে জেলা পরিষদ সদস্য ফারুক হোসেন ভূঁইয়ার ছবি প্রকাশ নিয়ে।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, সোনারগাঁও পৌর নাগরিক কমিটির প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী ও নাগরিক কমিটির লোকজন। নাগরিক কমিটির পক্ষে তারা রয়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। এমন প্রচারনায় একটি লিফলেট প্রকাশ করেছেন নাগরিক কমিটি। যে লিফলেটে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক, পৌরসভার বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ও সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা ও জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক হোসেন ভূঁইয়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। দাবি করা হয়েছে এসব ব্যক্তিরা নাগরিক কমিটির প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতকে সমর্থন করেছেন।

কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে যখন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ছগীর আহাম্মেদের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করছেন ফারুক ভূঁইয়া ডালিয়া লিয়াকতকে সমর্থন করেননি। ফারুক ভুঁইয়ার অনুমতি ছাড়াই ডালিয়া লিয়াকতের প্রচারপত্রে তার ছবি ছাপানো হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে তুমুল পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারন ফারুক হোসেন ভুঁইয়া হলেন শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনের আপন ভাই। আর মামুন ভূঁইয়া মেয়র প্রার্থী ছগীর আহাম্মেদকে নিয়েই নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।

এ বিষয়ে ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদ সদস্য ফারুক ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমার ভাই মামুন ভুঁইয়া ছগীর আহাম্মেদকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। ওদিকে এমপি সাহেবের সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতও নির্বাচনে নেমেছেন। শুনেছি উনার নির্বাচনী প্রচারপত্রে আমার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা।

পৌরসভা নির্বাচনে আপনি কোন প্রার্থীকে সমর্থন বা সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনও পর্যন্ত কাউকেই সমর্থনের ঘোষণা দেইনি। ছগীরকেও ঘোষণা করিনি, ডালিয়া লিয়াকতকেও সমর্থনের ঘোষণা করিনি।

তবে ফারুক ভুঁইয়ার এই বক্তব্য প্রকাশের পর স্থানীদের অনেকেই জানিয়েছেন, সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশনে একটি অনুষ্ঠানে ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন ফারুক হোসেন ভুঁইয়া। জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরাও দাবি করেছেন ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে ভোট প্রার্থনার সেই ভিডিও তাদের কাছে রয়েছে। মুুলত মামুন ভুঁইয়া তার আপন ভাই, আর মামুন ভুইয়া একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নেমে যাওয়ায় হয়তো ফারুক ভুঁইয়া বিষয়টি আপাতত এড়িয়ে গেছেন। তার সমর্থন ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষেই রয়েছে। কারন কারো অনুমতি বা সমর্থন ছাড়া কোন প্রার্থীর প্রচারপত্রে তার ছবি ব্যবহৃত হয়না।

অন্যদিকে ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার গোয়ালদি এলাকায় ছগীর আহাম্মেদকে নিয়ে একটি ঘরোয়া বৈঠক করেন শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন। ওই বৈঠকে মামুন ভুঁইয়া বলেছিলেন, সোনারগাঁয়ে প্রবাসী ঢুকে গেছে, একজন থানাবাসী প্রবাসী, আরেকজন পৌরবাসী প্রবাসী। ওয়ান ভোট ওয়ান ক্যান্ডিডেট, এতে পৌরবাসীর পেইন হচ্ছে।’

এরপর গত ৩১ অক্টোবর শনিবার রাতে পৌরসভার রয়েল রিসোর্টে পৌর নাগরিক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। ওই সময় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা তার বক্তব্যে ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, অংহকার করবেন না, অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, বহু জমিদার দেখেছি, বহু সিআইপি দেখেছে খোকায়, নারায়ণগঞ্জে জন্ম আমার, যেখানে দেশের বেস্ট বেস্ট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন, সেখানে রাজনীতি করেছি, বহু সিআইপি আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখান, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখায়।’

তারও পর গত ৬ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার গোয়ালদি এলাকায় ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনের বাসায় পৌরসভার প্রতিটি এলাকার মানুষকে নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মামুন ভুঁইয়া ছগীর আহাম্মেদকে তার সমর্থন ঘোষণা করেন এবং বলেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মালিক জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদি তিনি ছগীর আহাম্মেদকে নৌকা প্রতীক দেন তাহলে আমরা সকলে তার পক্ষে মাঠে কাজ করবো।

ওই সময় মেয়র প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিআইপি মামুন ভুঁইয়া পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে তিনি পৌরবাসীর প্রার্থী হিসেবে ছগীর আহাম্মেদের নাম ঘোষণা করেন।

ওই মতবিনিময় সভায় তিনি স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার দেয়া এক বক্তব্যের বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেন, কয়েকদিন আগে একটি রেস্টুরেন্টে মিটিং হচ্ছিল যার কিছু ভিডিও আমি দেখেছি, এক ভদ্রলোক জনপ্রতিনিধি তিনি বলতেছিল সিআইপিরা আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আসলে সিআইপির ইলাভোরেশন (পূর্ণাঙ্গ রূপ) কি মে বি সে হয়তো জানেনা। সিআইপি হতে হলে কারো পায়ে ধরে, হাত-পা ধরে কান্না করে সিআইপি হওয়া যায়না। সিআইপি হতে হলে সিআইপির মত যোগ্যতা লাগে। তো একজন সিআইপি সম্পর্কে কথা বলতে হলে ভেবে চিন্তে বলা উচিত, আবার ভয় দেখায় তিনি নারায়ণগঞ্জে এই করবে সেই করবে।

সিআইপি মামুন ভুঁইয়া আরও বলেন, আমাদের একটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন আছে বিকেএমইএ, সেই সংগঠনের নেতা হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় এমপি সেলিম ওসমান সাহেব, তো উনার কাছে বিষয়টি আমি শেয়ার করবো, এখনও করিনি, ইনশাহআল্লাহ করবো। তারপরে আমরা নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করি, যেখানে শামীম ওসমান সাহেব আমাদের বটগাছ, উনি সব সময় আমাদেরকে ভালবেসে কথা বলে, আমরা উনাদের নিচেই আছি, উনাদের সাথেই আছি, উনাদের দলেই আছি। সোজা কথা উনারা আমাদেরকে সব সময় ছায়া দিয়েই রাখেন। সেলিম ওসমান সাহেব আমাদেরকে ছায়া দিয়েই থাকেন, সেখানে এমন কোন ব্যক্তি জন্মায় নাই, সে নারায়ণগঞ্জে আমাদেরকে ছিড়ে ফেললো খাইয়া ফেললো, হুমকি ধমকি হুংকার এগুলো আমরা সহ্য করি না। আমরা এ সমস্ত হুংকারকে প্রশ্রয় দেইনা। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিবেন। গত দুই নির্বাচনে আপনারা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন সেভাবেই ভোট দিতে পারবেন, এর কোন ব্যতয় ঘটবে না।