আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, রাজপথ জয় করেই এসেছি: ছগীর

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহাম্মেদ পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, পৌরবাসী সকলে আমার শিক্ষক আমি সবার ছাত্র। ঢাকায় রাজনীতি করলেও এখন আমি আপনাদের ছাত্র, আপনারা যদি আমাকে শিখিয়ে দেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না ইনশাহআল্লাহ। পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় আমি এক দেড় বছর ঘুরে ঘুরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। অনেক বড় বড় সমস্যা এখানে রয়েছে। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, এখানে বিচারের বাণী নিভৃত্বে কাঁদে। সেটা আমি উপলুব্ধি করেছি। এমনও হয়েছে ৯ বছর আগে বিচার দেয়া হয়েছে সেটা এখনও হয়নি।

তিনি পৌরবাসীকে আরও বলেন, একটা জিনিস লক্ষ্যনীয় যে সোনারগাঁও পৌরবাসী অন্তত শান্তিপ্রিয় মানুষ এবং শান্তিতে বিশ্বাসী কোন অশান্তিতে নয়, তারা শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী করে বিশৃঙ্খলায় নয়। এটা কিন্তু প্রমাণ দিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে আমাদের মার্কা হলো নৌকা। যেহেতু রাজপথ থেকে এসেছি, রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করে এসেছি, সুতরাং আমাদের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নাই। আমরা রাজপথ জয় করে এসেছি, আমরা পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েছি। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ইনশাহআল্লাহ ভয় পায়না। এর জলন্ত উদাহরণ হলো বিগত নির্বাচনে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এসেছি ভারত পাকিস্তান নেপাল থেকে তারা কিন্তু দৌড়ানি খেয়েছিল। আমি আগেই বলেছি পৌরবাসী শান্তিতে বিশ্বাসী, বিশৃঙ্খলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পারে সেটাই তার প্রমাণ।

৬ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার গোয়ালদি এলাকায় সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুনের বাড়িতে পৌরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছগীর আহাম্মেদ এসব কথা বলেন।

তবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে পৌর নাগরিক কমিটির সভায় স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুনকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘অনেক সিআইপি খোকাকে সালাম দিয়ে কথা বলে।’ এ বিষয়টি টেনে এবার সিআইপি ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুন বলেছেন, সিআইপি মিনিংটা সে জানেনা, যে সিআইপি মিনিংটাই জানেনা সে আর কি বলবে।’

নাারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভার প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুন। মতবিনিময় সভায় তিনি স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার দেয়া এক বক্তব্যের বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেন, কয়েকদিন আগে একটি রেস্টুরেন্টে মিটিং হচ্ছিল যার কিছু ভিডিও আমি দেখেছি, এক ভদ্রলোক জনপ্রতিনিধি তিনি বলতেছিল সিআইপিরা আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আসলে সিআইপির ইলাভোরেশন (পূর্ণাঙ্গ রূপ) কি মে বি সে হয়তো জানেনা। সিআইপি হতে হলে কারো পায়ে ধরে, হাত-পা ধরে কান্না করে সিআইপি হওয়া যায়না। সিআইপি হতে হলে সিআইপির মত যোগ্যতা লাগে। তো একজন সিআইপি সম্পর্কে কথা বলতে হলে ভেবে চিন্তে বলা উচিত, আবার ভয় দেখায় তিনি নারায়ণগঞ্জে এই করবে সেই করবে।

সিআইপি মামুন ভুঁইয়া আরও বলেন, আমাদের একটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন আছে বিকেএমইএ, সেই সংগঠনের নেতা হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় এমপি সেলিম ওসমান সাহেব, তো উনার কাছে বিষয়টি আমি শেয়ার করবো, এখনও করিনি, ইনশাহআল্লাহ করবো। তারপরে আমরা নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করি, যেখানে শামীম ওসমান সাহেব আমাদের বটগাছ, উনি সব সময় আমাদেরকে ভালবেসে কথা বলে, আমরা উনাদের নিচেই আছি, উনাদের সাথেই আছি, উনাদের দলেই আছি। সোজা কথা উনারা আমাদেরকে সব সময় ছায়া দিয়েই রাখেন। সেলিম ওসমান সাহেব আমাদেরকে ছায়া দিয়েই থাকেন, সেখানে এমন কোন ব্যক্তি জন্মায় নাই, সে নারায়ণগঞ্জে আমাদেরকে ছিড়ে ফেললো খাইয়া ফেললো, হুমকি ধমকি হুংকার এগুলো আমরা সহ্য করি না। আমরা এ সমস্ত হুংকারকে প্রশ্রয় দেইনা। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিবেন। গত দুই নির্বাচনে আপনারা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন সেভাবেই ভোট দিতে পারবেন, এর কোন ব্যতয় ঘটবে না।

এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩১ অক্টোবর শনিবার রাতে পৌরসভার রয়েল রিসোর্টে পৌর নাগরিক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। ওই সময় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা তার বক্তব্যে ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, অংহকার করবেন না, অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, বহু জমিদার দেখেছি, বহু সিআইপি দেখেছে খোকায়, নারায়ণগঞ্জে জন্ম আমার, যেখানে দেশের বেস্ট বেস্ট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন, সেখানে রাজনীতি করেছি, বহু সিআইপি আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখান, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখায়।’

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মামুন ভুঁইয়া তার বাড়িতে এক মিটিংয়ে বলেছিলেন, সোনারগাঁয়ে প্রবাসী ঢুকে গেছে, একজন থানাবাসী প্রবাসী, আরেকজন পৌরবাসী প্রবাসী। ওয়াড ভোট ওয়ান ক্যান্ডিডেট, এতে পৌরবাসীর পেইন হচ্ছে।’

এদিকে ৬ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার গোয়ালদি এলাকায় ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনের বাসায় কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে তিনি এই মতবিনিময় করেন।

ওই সময় মেয়র প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিআইপি মামুন ভুঁইয়া পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে তিনি পৌরবাসীর প্রার্থী হিসেবে ছগীর আহাম্মেদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি এও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মালিক জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদি তিনি ছগীর আহাম্মেদকে নৌকা প্রতীক দেন তাহলে আমরা সকলে তার পক্ষে মাঠে কাজ করবো।

পরে পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মেয়র প্রার্থী ছগীর আহাম্মেদ। মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন সিআইপি মামুন ভুঁইয়া। সভার পূর্বে বিকেল থেকে পৌরসভার প্রতিটি এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগদান করেন এই মতবিনিময় সভায়। সভায় সাংবাদিক মাহফুজুর রহমানের দৃষ্টিনন্দিত সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত ছিলেন শ্রমিকলীগ নেতা মোখলেছুর রহমান, সমাজ সেবক শাহাদাত হোসেন লিটু, উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান কহিনূর ইসলাম রুমা, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবেদ হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা আবুুল হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর লায়ন মোশারফ হোসেন, টাইগার ক্লাবের সভাপতি নূরে আলম, সাবেক মেম্বার মাইনুদ্দীন আহাম্মেদ, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল্লাহ বাবু, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রবিন, সেক্রেটারি শাহরিয়ার খান সাজু সহ অন্যান্যরা।