সোনারগাঁও পৌর নির্বাচন: নৌকা ডুবাতে প্রস্তুত লাঙ্গল

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ে ডুবেছিল নৌকার প্রার্থীর বিজয়। এর আগের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না হলেও দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর বিজয় ঠেকিয়েছিল বিএনপি জামাত সমর্থিত প্রার্থী। এবার নৌকা ডুবাতে প্রস্তুতি লাঙ্গল। জাতীয়পার্টি থেকে এখানে প্রার্থী থাকছে সেটা নিশ্চিত। তবে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী দেয়া না হলে নির্বাচনের আগেই লাঙ্গলে ডুবতে পারে নৌকা। আর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী দেয়া হলে লড়াই হবে নৌকা ও লাঙ্গল। তবে বিএনপির গত নির্বাচনের প্রার্থী মোশারফ হোসেনও এবারও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। এদিকে নৌকার প্রার্থী যাতে না দেয়া হয় সেই চেষ্টায় এখানকার জাতীয়পার্টি। ফলে দিনকে দিন নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যাচ্ছে নৌকার প্রার্থী নিয়ে।

এখানকার জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে এখন বিএনপি ও আওয়ামীলীগ থেকে দলছুট নেতারা। যারা বিগত সময় পৌরসভার সুুবিধাভোগী তারাই এখন জাতীয়পার্টির সঙ্গে। ফলে নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী না দেয়া হলে জাতীয়পার্টি থেকেই এখানে মেয়র হতে যাচ্ছেন। যেখানে আলোচনায় ডালিয়া লিয়াকত। আর নৌকার প্রার্থী দিলেও খন্ডখন্ড বিভক্তির কারনে নৌকা ডুবাতে প্রস্তুত আওয়ামীলীগের বিভিন্ন বলয়ের নেতাকর্মীরাও। ফলে নৌকা এখানে আবারো ডুবতে যাচ্ছে সেটা প্রায় অনেকাংশে নিশ্চিত।

স্থানীয়দের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনের এখনও তফসিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই সরকারি দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন ৪ নেতা। একই সঙ্গে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া কয়েক মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন। একইভাবে বিএনপি ও জাতীয়পার্টি থেকে কোন নেতাকে নির্বাচনী মাঠে দেখা না গেলেও নেতাকর্মীদের মাঝে বেশকজনের নাম রয়েছে আলোচনায়।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে, পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝড়া ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান। এই মনোনয়ন প্রত্যাশি নিয়মিত কর্মীসভা, প্রচারণা, উঠান বৈঠক করছেন। নিজেদের মাঠ গুছানোর সঙ্গে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা।

স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে পরোদস্তর নির্বাচনী মাঠে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। এবারও তিনি উঠান বৈঠক ও নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি মুলত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ভগ্নিপতি। গত নির্বাচনে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বেশ জোড়ালো ভুমিকা রেখেছিলেন এমপি বাবু। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সুদৃষ্টিতে ছিলেন না রাব্বী। কারন নির্বাচনের আগেই আমিনপুুর মাঠে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেন শামীম ওসমান। যে কারনে আওয়ামীলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মী ও জাতীয়পার্টি সাদেকুর রহমানের পক্ষ নিলে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র সাদেকুর রহমান নির্বাচিত হোন।

এ ছাড়াও গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত জোড়ালো ভুমিকায় ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে রাব্বীর দিকে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের সুদৃষ্টিও ফজলে রাব্বীর দিকে ছিল না। যে কারনে কালামের লোকজনকে নৌকার পক্ষে জোড়ালো দেখা যায়নি। বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলো আওয়ামীলীগের অধিকাংশ।

তবে ফজলে রাব্বী এবার ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই এমপি একেএম শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সম্পর্কে আগের মত দূরত্ব নেই। তাদের সমর্থনের দিকেই কাজ করছেন রাব্বী। বিভিন্ন উঠান বৈঠকের ব্যানারে শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুর ছবি ব্যবহার করছেন তিনি।

একইভাবে মাঠে রয়েছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন বঞ্চিত গাজী মজিবুর রহমান। তিনি এবার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। গত নির্বাচনের আগের নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলেও তিনি আওয়ামীলীগের কোন্দলের কারনে পরাজিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হোন ওই নির্বাচনের বিএনপি জামাতের সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান।

ইতিমধ্যে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে নিয়ে একটি কর্মী সভা করেছেন গাজী মজিবুর রহমান। ওই সভার পর স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে কায়সার হাসনাত গাজী মজিবুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও পরদিন বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করে কায়সার হাসনাত বলেছেন, দলের প্রধান যাকে নৌকা তুলে দিবেন সেই হবে সকলের প্রার্থী। গাজী মজিবুর রহমানকে তিনি সমর্থন দেননি বলেও দাবি করেন ফেসবুক লাইভে এসে যে খবরটি সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিল।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহম্মেদ। আওয়ামীলীগের এই নেতা কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনকে টার্গেট করে কাজ করে আসছিলেন। উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের কারো সাথেই তার খারাপ সম্পর্ক নেই। সকল বলয়ের নেতাদের সঙ্গেই তিনি সুসম্পর্ক রেখে কাজ করছেন এবং মাঠ গুছানোর কাজটিও করে যাচ্ছেন টানা কয়েক মাস ধরে।

এদিকে রাজধানীতে বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সোনারগাঁয়ের সন্তান নাসরিন সুলতানা ঝরাও নেমেছেন নির্বাচনী মাঠে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কয়েক মাস ধরেই তিনি পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে তার তেমন কোন বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তার জেলা পর্যায়ে সে রকম লবিং নেই। তিনি কেন্দ্রীয় লবিংয়ের উপর নির্ভর করেই নৌকা প্রতীকের আশায় নেমেছেন। সেই সঙ্গে মাঠ গুছানোর কাজ করছেন। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কার হাতে ওঠতে যাচ্ছে নৌকা প্রতীক।

অন্যদিকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- প্রায় প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মীসভা করছেন উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত। একই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলা পার্টির কমিটিও গঠন করছেন তিনি। ডালিয়া লিয়াকত নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের জাতীয়পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী। এ ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে জাতীয়পার্টির কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে জাতীয়পার্টির কমিটিও গঠন করা হয়। এসব কর্মীসভায় দাবি ওঠেছে ডালিয়া লিয়াকতকেই জাতীয়পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী করা হোক। এখানে জাতীয়পার্টি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে আর প্রার্থী হতে যাচ্ছেন এমপির সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকত।