সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে নীরব সাদেক, কার ভাগ্যে নৌকা?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনের এখনও তফসিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই সরকারি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি সম্ভাব্য প্রার্থীরা পুরোদমে নেমেছেন নির্বাচনী মাঠে। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি চার জন নিজেদের মাঠ গুছিয়ে নেয়ার কাজ করছেন। যার যা লবিং তদবির সেই ব্যবস্থাও করছেন। তবে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান নীরব ভুমিকায় রয়েছেন।

কয়েক মাস পূর্বে মিডিয়াতে দেয়া বক্তব্যে আবারো নির্বাচনের কথা জানালেও এখনও নির্বাচনের জন্য কোন ঘোষণা বা নির্বাচনী মাঠে নেই তিনি। জাতীয়পার্টি এখানে প্রার্থী দিবে কিনা সেটাও দেখার অপেক্ষা। বিএনপির শক্তিশালী সে রকম কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। ফলে নির্বাচনে অনেক কিছু দেখার বাকি রয়ে গেছে এখানে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পরোদস্তর নির্বাচনী মাঠে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। এবারও তিনি উঠান বৈঠক ও নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি মুলত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর আত্মীয়। গত নির্বাচনে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বেশ জোড়ালো ভুমিকা রেখেছিলেন এমপি বাবু। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সুদৃষ্টিতে ছিলেন না রাব্বী। কারন নির্বাচনের আগেই আমিনপুুর মাঠে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেন শামীম ওসমান। যে কারনে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র সাদেকুর রহমান নির্বাচিত হোন।

এ ছাড়াও গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত জোড়ালো ভুমিকায় ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে রাব্বীর দিকে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের সুদৃষ্টিও ফজলে রাব্বীর দিকে ছিল না। যে কারনে কালামের লোকজনকে নৌকার পক্ষে জোড়ালো দেখা যায়নি। বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলো আওয়ামীলীগের অধিকাংশ।

তবে ফজলে রাব্বী এবার ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই এমপি একেএম শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সমর্থনের দিকেই কাজ করছেন। এই দুই এমপির এবার গত নির্বাচনের সময়ের মত দূরত্ব নেই। ্এবার দুই এমপির সুসম্পর্ক রয়েছে। আর এমপি শামীম ওসমানের দিকনির্দেশনা বেশ নতমস্তিস্কে মেনে নেন স্থানীয় এমপি খোকা। ফলে কেউ কেউ মনে করেন এমপি শামীম ওসমানের সুদৃষ্টি থাকলেই পৌর মেয়র! কারন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক এনেও ফজলে রাব্বী জয়ী হতে পারেননি।

একইভাবে মাঠে রয়েছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন বঞ্চিত গাজী মজিবুর রহমান। তিনি এবার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে নিয়ে একটি কর্মী সভা করেছেন গাজী মজিবুর রহমান। ওই সভার পর খবর বেরিয়েছে কায়সার হাসনাত গাজী মজিবুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও পরদিন বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করে কায়সার হাসনাত বলেছেন, দলের প্রধান যাকে নৌকা তুলে দিবেন সেই হবে সকলের প্রার্থী। এর আগের নির্বাচনে গাজী মজিবুুর রহমান দলের সমর্থনে নির্বাচন করে সাদেকুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের কোন্দলের কারনে গাজী মজিবুর রহমান পরাজিত হোন। ওই নির্বাচনে বিএনপি জামাতের সমর্থনে জয়ী হোন সাদেকুর রহমান।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহম্মেদ। আওয়ামীলীগের এই নেতা কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনকে টার্গেট করে কাজ করে আসছিলেন। উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের কারো সাথেই তার খারাপ সম্পর্ক নেই। সকল বলয়ের নেতাদের সঙ্গেই তিনি সুসম্পর্ক রেখে কাজ করছেন এবং মাঠ গুছানোর কাজটিও করে যাচ্ছেন টানা কয়েক মাস ধরে। তবে মেয়র সাদেকুর রহমান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না থাকলেও ছগীর আহম্মেদের সম্ভাবনার পাল্লা ভারি হবে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সম্ভাবনাও থাকবে তার এবং জয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে।

এদিকে রাজধানীতে বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সোনারগাঁয়ের সন্তান নাসরিন সুলতানা ঝরাও নেমেছেন নির্বাচনী মাঠে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। কয়েক মাস ধরেই তিনি পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে তার তেমন কোন বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তার জেলা পর্যায়ে সে রকম লবিং নেই। তিনি কেন্দ্রীয় লবিংয়ের উপর নির্ভর করেই নৌকা প্রতীকের আশায় নেমেছেন। সেই সঙ্গে মাঠ গুছানোর কাজ করছেন। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কার হাতে ওঠতে যাচ্ছে নৌকা প্রতীক।