মসজিদের এসি বিস্ফোরণে দ্বগ্ধ রোগীদের দেখতে হাসপাতালে তৈমূর আলম

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদের ভেতরে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় এখণ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছেন আরও অনেকে। এই ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন ও জেলা পুুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

এদিকে ঢাকায় হাসপাতালে গুরুত্বর অবস্থায় ৩৭জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদেরকে দেখতে ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার হাসপাতালে গিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সেখানে গিয়ে তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে রোগীদের সার্বিক অবস্থা জানতে চান। রোগীদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্য তিনি অনুুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে তাদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

অন্যদিকে ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতেই বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল রাতেই পরিদর্শণ করেন ডিসি ও এসপি। পরিদর্শণ শেষে পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেছেন, মসজিদে ৬টি এসি ছিল। সবগুলো বিস্ফোরণ হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের কোন লুজ কানেকশন এবং মসজিদের পাশেই তিতাস গ্যাসের যে একটি লাইন আছে, সেই গ্যাস লিকেজ হয়ে বেড় হচ্ছিল। সেটা থেকেও হতে পারে। আমরা পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেই তদন্ত কমিটি মূল রিপোর্ট দিবেন। রিপোর্টে মূল কারণ জানা যাবে।

পুলিশ সুপার এ বক্তব্য দেয়ার সময় জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দীন তার সঙ্গেই ছিলেন।

এসপি আরো বলেন, কনজাস্টেড এড়িয়ার মধ্যে মসজিদটি অবস্থিত। এখানে অনেক ঘণবসতি। গাড়ি আসা দুরূহ। এই অবস্থাতেই রোগিদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আমাদের একটি টিম ঢাকায় কাজ করছে। ডিআইও-১ সেখানে উপস্থিত আছেন। সিআইডি ঘটনাস্থলে আসবেন। তারা ইউলো টেপ দিয়ে পুরোপুরি ব্লক করে দিবেন।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি গ্যাস লিকেজ থেকে হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তারা।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ৬টি এসি বিস্ফোরণে স্থানীয় এক সাংবাদিক সহ অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে (ঢামে ক) ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে এশার নামাজ চলাকালীন তিন তলা মসজিদের নিচতলায় এই বিস্ফোরণ ঘটে। সেই সময় মসজিদে ৭০/৮০ জন মুসল্লি জামাতের সাথে নামাজ পড়ছিলেন বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলমসহ আইনশৃংখলাবাহিনী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম থেকে ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসিজিদে বিষ্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানকে সভাপতি করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি সদস্য এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রমতে, মসজিদটিতে শতাধিক লোক এশার নামাজে শরীক হন। পৌনে ৯টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেও মধ্যেই মসজিদে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিষ্ফোরণে মসজিদের ভেতরের স্থাপনাসহ আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হাজীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ডিউটি অফিসার আবুল কালাম জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে হাজীগঞ্জের একটি ইউনিট ও মন্ডলপাড়ারও একটি ইউনিট গিয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গিয়েছে। আমরা আগুন নিবানোর জন্য পানি দিলে সেখানে পানির বুদবুদ দেখতে পাই। মূলত গ্যাস বের হচ্ছে। এসি চলাকালীন সময়ে মসজিদের আবদ্ধ থাকায় পুরো মসজিদ গ্যাসে ভর্তি হয়ে যায়। গ্যাসের সাথে বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে এ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করছি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি টিম কাজ করছে। এঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হোসেন এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে বলেন, রাত ৯টার পরে আমাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দগ্ধ রোগী আসা শুরু হয়। আমরা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। আহত রোগীদের গড়ে ৭০-৭৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। অনেক রোগীদের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘটনার বিষয়ে অবগত করেছি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও বার্ন ইউনিটের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে ম্যাসেজ দিয়েছি। যেন দগ্ধ রোগিরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পায়। এসময় দগ্ধ মানুষের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের এগিয়ে আসার আহবানও জানান জেলা প্রশাসক।