বিএনপির রাজনীতি: নেতৃত্বের বাহিরে রাজপথের এক সময়কার দাপটশালীরা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে এক সময় যেসব নেতারা রাজপথ কাঁপিয়েছিলেন বর্তমানে সেইসব নেতাদের রাখা হয়েছে নেতৃত্বের বাহিরে। যাদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মত আজকে তারা দমে গেছেন দলের অবহেলা ও অযত্নে। অযোগ্যদের ঠেলাঠেলিতে তারাও আজকে সক্রিয় রাজনীতিতের অন্তরালে। অনেক নেতাদের আলো জ্বলার আগেই নিভে গেছে রাজনীতির প্রদীপ। রাজনীতিতে যাদের শুরু, তাদের অনেকের শেষের দিকে। বর্তমানেও কেউ কেউ ঝুলে আছেন বিএনপির রাজনীতির কমিটির সদস্য কিংবা নিচের পদে নামকাওয়াস্তে। ওইসব নেতাদের বিএনপির মুল দলের রাজনীতিতে জরুরী হয়ে পড়েছে। এসব নেতাদের সামনে রেখে বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি আরো শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।

নেতাকর্মীদের সূত্রে- নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন কাজী ইফতেখার কায়েস রোমেল। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। যদিও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক বছর কিছুটা দলের পক্ষে সক্রিয় দেখা যায়। তারপর থেকে তিনি পুরোপুরিভাবে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়। একসময় বিএনপির রাজনীতিতে বেশ দাপটশালী ছিলেন এই ছাত্র নেতা।

সাবেক ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। বর্তমানে তিনিও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে তিনিও পুরোপুরি সক্রিয় ছিলেন। তারপর থেকে তিনি রাজনীতিতে আছেন থেমে থেমে। ওই সময় তিনি জিয়া পরিষদ নামক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে ছিলেন। তার চাচা প্রয়াত কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম এমপি থাকাকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনীতিতে বেশ দাপটশালী ছিলেন তিনিও। তার দৃষ্টনন্দন বক্তব্য নেতাকর্মীদের বেশ আকৃষ্ট করতো। এখনও তিনি ঝাঝালো বক্তব্য দিতে পারেন।

নারায়ণগঞ্জ শহর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন কামরুল হাসান রোমেন। তার বড় এক ভাই জাহিদ হাসান রোজেল ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি, পরবর্তীতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হন। বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোজেল। আরেক ভাই ক্রীড়া সংগঠক নাদিম হাসান মিঠু ছিলেন ফতুল্লা থানা যুবদলের সেক্রেটারি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান রোমেন। ছাত্রদলের রাজনীতিতে ছিলেন একজন স্বচ্ছ নেতা। ক্লিন ইমেজের এই ছাত্র নেতাকে এখন সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে দেখা যায়না। কয়েক বছর আগেও তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন।

আনোয়ার হোসেন আনু বর্তমানে মহানগর বিএনপির নেতা। কিন্তু তাকেও বিএনপির রাজনীতিতে সামনে রাখা হয়নি। বিএনপির রাজনীতিতে পুুরোপুরি সক্রিয় না থাকলেও তাকে এখনও মাঝে সাঝে দলীয় কর্মকান্ডে দেখা যায়। তবে সাবেক এই ছাত্রদল নেতাকে অযত্নে অবহেলায় পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে। এক সময় বিএনপির ছাত্রদলের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ছিলেন তিনি।

মশিউজ্জামান পাভেল ছিলেন নারায়ণগঞ্জ কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি। একজন তুখোর বক্তা ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা। মাঝে সাঝে তাকে মিডিয়াতে আলোচনায় দেখা গেলেও সরকারি রাজনীতিতে দেখা যায়না। কয়েক বছর পূর্বে তৈমূর আলম খন্দকারের কয়েকটি মিটিংয়ে তাকে দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে বিএনপির কোন সংগঠনের সঙ্গেই তার নাম নেই।

এক সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতে বেশ দাপটশালী ছিলেন রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের নেতা হলেও ফতুল্লায় বেশ প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় থাকলেও এই নেতা বর্তমানে কোন সংগঠনেরই নেতৃত্বে নেই।

ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন আক্তার খন্দকার। বর্তমানে তিনি আইন পেশা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আক্তার খন্দকার। কয়েক বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতেই নেই তিনি।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন দেলোয়ার হোসেন খোকন। এর আগেও তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। বিএনপির আমলেও তিনি বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। আগের মত রাজনীতিতে তিনিও নিয়মিত নেই। সিটি কর্পোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেও পাশ করতে পারেননি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন দিদার খন্দকার। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদলের কোন কার্যক্রমই ছিল না নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল বলতে একমাত্র দিদার খন্দকারকেই বুঝাতো। ছিলেন শহর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকও। কিন্তু জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে দিদার খন্দকারের রাজনীতিতে ধাক্কা লেগে যায়। কোন কমিটিতেই তাকে রাখা হয়নি। যাদেরকে তিনি রাজনীতিতে মাইক ধরা শিখিয়েছেন তারাই মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়ে আসেন। মহানগর যুবদলের কমিটিতে তাকে নিচের পদে রাখা হলে তিনি অব্যাহতি নেন।

এই দিদার খন্দকারের সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের হাল ধরেছিলেন জাকির হোসেন। যিনি ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। মুলত নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের কর্মকান্ডগুলো এই নেতাই পরিচালনা করতেন। কিন্তু নতুুন কমিটি হলে তাদেরকেই রাখা হয়নি। যার ফলে দুজনই রাজনীতির বাহিরে চলে গেছেন। জাকির হোসেনের ঠাই হয়নি বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কোন কমিটিরই নেতৃত্বে। ফলে জাকির হোসেনও এখন আগের মত রাজনীতিতে নেই।