বিএনপিতে কর্মী সংখ্যায় বাড়ছে কোয়ান্টিটি, নাই কোয়ালিটি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। এখনও দুটি দলের নেতারা এমনটাই বিশ্বাস করেন। টানা তৃতীয় ধাপে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। যেখানে তৃতীয় দল রয়েছে জাতীয় পার্টি। এ সময়টুকু ক্ষমতার বাহিরে বিএনপি। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শতশত মামলায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সরকারের কঠোর চাপের কারনে ঘুরে দাড়ানোটাই কঠিন হয়েছে গেছে বিএনপির। তবে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় করোনার পর পুুলিশ প্রশাসনের বর্তমান শিথিল অবস্থানের কারনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনের মাধ্যমে দল গুছানোর চেষ্টা করছে বিএনপি।

কয়েক বছর ধরেই যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি হচ্ছে এক দুুই তিন শতাধিক সংখ্যা ছাড়িয়ে। যেখানে ১৫ সদস্যের কমিটি হওয়া উচিত সেখানে ১৫ জনকে করা হচ্ছে সহ-সভাপতি কিংবা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ। অথচ ১৫ সদস্যের কমিটি হলে এখান থেকে কমিটিতে থাকতেন মাত্র একজন। আবার ছাত্রদলের কয়েক’শ জনের কমিটি হলেও দু’একজনের ছাত্রত্ব দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। অনেকের যেখানে শ্রমিকদলেও ঠাঁই হবেনা তারাও ছাত্রদলের শীর্ষ পদে রয়েছেন। অনেকে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন তারাও নাকি ছাত্রদলের শীর্ষ পদে। অনেকের এসএসসি সনদপত্র দেখতে চাইলেও দু’একজন বাদে বাকিদের পাচ ক্লাস পাশের সার্টিফিকেটও নাই।

বিএনপির অনেক যোগ্য নেতাকর্মী এখন কমিটির নেতৃত্বে আসতে নারাজ। কেউ কেউ রাজনীতির আড়ালে। যার সুযোগে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোর শীর্ষ পদে আসিন হচ্ছেন সেইসব পদের কম যোগ্য কিংবা একেবারেই অযোগ্যরা। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শ্রেণি পেশা শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সামাজিক মর্যাদাগুলো গুরুত্ব পাচ্ছেনা। বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্বে ঢুকে যাচ্ছে সমাজের কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিরাও। যার কথায় সমাজের একজন মানুষও বিএনপিকে ভোট দিবেনা কিংবা যে ব্যক্তি ভোট চাইতে গেলে বিএনপির ভোট কমবে এমন ব্যক্তিকেও বিভিন্ন কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হচ্ছে। ঠিক যেমন সস্তার তিন অবস্থা। এভাবে কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে সংখ্যায় কোয়ান্টিটি বাড়লেও এখানকার বিএনপিতে কোয়ালিটি বাড়ছেনা।

এদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন-নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। তার আগে আদালতের আদেশে স্থিতিবস্থা রয়েছে মহানগর বিএনপির কার্যক্রমেও। জেলায় রয়েছে সাতটি থানা এলাকা। জেলা ও মহানগর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলছে। বেশকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি আগেই হয়েছে। এর আগেও যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলোতে যারা নেতৃত্বে আসছেন তাদের গ্রহণযোগ্যতা পূর্বের কমিটিগুলোর নেতাদের মত বর্তমান নেতাদের যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করা হয়না।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- কোন কোন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে ডেকে ডেকে এনেও পদ দেয়া যাচ্ছেনা এমন দশা। যে সদস্য হওয়ার যোগ্য সেও চায় সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হতে। অনেক ক্ষেত্রে যাকে তাকেই শীর্ষ পদে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে আসতেই সবাই লড়াই করছেন। আবার এমন সব লোকজন সভাপতি ও সেক্রেটারি পদের যোগ্য দাবি করেন তাদেরকে বিএনপিতে রাখাটাই সমুচিন হবেনা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সভাপতি ও সেক্রেটারি, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এমন সব লোকজনকে পদে বসানো হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ নেতার সদস্য পদে আসার যোগ্যতাও নাই। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হওয়ারও যোগ্যতাসম্পন্ন নয় তাকেও করা হচ্ছে জেলা কিংবা মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বা সহ-সভাপতি।

ভিন্নক্ষেত্রে, মুুলত বিএনপির শীর্ষ নেতারা দলের সভা সমাবেশে কর্মীদের জমায়েত বাড়াতে কর্মীদের মনখুশি রেখে তাদের বড় বড় পদে বসিয়ে দিচ্ছেন। যেখানে প্রতিটি কমিটিতে ১৫/১৬ জন করে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও পদ বাড়িয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক তিনজন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও যেনো তেনো লোকজনকেও বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবুও যেনো বিএনপির নামে অন্তত শ্লোগানটা দেয়। আবার কেউ কেউ কারসারি করে অনেক রাজপথের যোগ্যদের পদবঞ্চিত করে নিজের চাটুকার শ্রেণির লোকজনকে শীর্ষ পদে বসিয়ে দিয়েছেন যাদের বিন্দুমাত্র যোগ্যতা নাই নেতৃত্ব দেয়ার।

নেতাকর্মীদের সূত্রে- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির দিকে তাকালে এমন সব নেতাদের শীর্ষ পদে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল যাদের চেয়ে কয়েকগুন বেশি রাজপথে ভুমিকা ছিল তাদেরকে রাখা হয়নি। একইভাবে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা গেল। যারা মুলত মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের অনুগামী তাদেরকেই কমিটিতে রাখা হলো। আবার যারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন তারাও পেল শীষ পদ। আবার যারা দীর্ঘদিন রাজনীততেই ছিলেন না তাদেরকেও কমিটিতে রাখা হয়। অথচ এর আগের কমিটির সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা সদস্য পদও পায়নি।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেতেও একই কাজ করা হয়েছিল। ফতুল্লার একটি ইউনিয়ন থেকেই জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক করা হয় তিনজনকে। যারা ইউনিয়ন কমিটির শীর্ষ পদেও ছিলেন না। জেলা বিএনপির কমিটিতে আরো বেশকজন নেতা ছিলেন যাদের অনেকের যোগ্যতা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদের চেয়েও কম কিংবা যাদেরকে পদে রাখা হয়েছে তাদের চেয়ে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা থাকলেও তাদেরকে পদে রাখা হয়নি।