করোনাযুদ্ধে জেলা প্রশাসকরা, আছেন নারায়ণগঞ্জের জসিম উদ্দীন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

করোনা মোকাবিলায় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে মাঠপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ‘জেলা প্রশাসন’। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তৎপর দেশের সকল জেলা প্রশাসক। ত্রাণ সহায়তা থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বসাধারণের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুরহাট, হাটকে কেন্দ্র করে জনসমাগম, জালটাকা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালনার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সেসব কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করছেন, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে সমপ্রতি দেশের সকল জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছে আমার সংবাদ। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে বশির হোসেন খানকে নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক নুর মোহাম্মদ মিঠু

মো. নজরুল ইসলাম সরকার, জেলা প্রশাসক (চুয়াডাঙ্গা) : করোনা সংকটের শুরু থেকেই সরকারের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) নির্দেশনাবলীর প্রচার-প্রচারণা, নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধিসহ সার্বিক বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমেই মূলত চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন করোনা মোকাবিলার কাজ শুরু করে। যা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মোটকথা জনগণকে সচেতন করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশবাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সবার সমন্বয়ে সে সময় টহল অব্যাহত ছিলো। গত সাড়ে তিন মাসে জনসাধারণকে সচেতন করতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন চারশর বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। সে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি (৪৬ লাখ) টাকা। পাশাপাশি জনসমাগম যাতে মানুষ এড়িয়ে চলে, লকডাউন উঠিয়ে নেয়ার পর গণপরিবহন যখন চালু হয়, তখন মানুষ যেনো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলে ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন এ কাজগুলো শুরু করেছে বলে জানান নজরুল ইসলাম সরকার। এছাড়াও বাজারগুলোকে সরিয়ে খোলাস্থান অর্থাৎ মাঠে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও করেছেন বলে জানান তিনি।

এসব কার্যক্রমের মধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মানুষের চলাফেরা আবারো শুরু হতে পারে। সে কারণে আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি তার মধ্যে দূরপাল্লার গাড়িগুলো এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় চলে যাবে। কিন্তু এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় লোকাল যে চলাচল সেগুলো বন্ধ করার জন্য পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছি। এসব করে মূলত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। কারণ এখন আবারো সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। বাড়ি বা মহলা চিহ্নিত করে লকডাউন কার্যকরের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরেকটি বিষয় ঈদুল আজাহাকে কেন্দ্র করে— পশুরহাট। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে একটা সময় আমরা পশুরহাট বন্ধই রেখেছিলাম। পরবর্তীতে জীবনযাত্রা যখন স্বাভাবিক হয়, মানুষ চলাচল করতে শুরু করে, কৃষক-খামারিরা সারা বছর গরু লালন-পালন করেন। তাদের দাবি এবং আশা কুরবানির সময় পালিত পশুগুলো তারা বিক্রি করবেন। সেজন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন সীমিত পরিসরে বাজারগুলোকে খুলে দিয়েছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু বাজার খুললেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ যে বিধিনিষেধগুলো আরোপ করেছে যেমন— বাজারের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করবে, অন্যপাশ দিয়ে বের হবে এবং বাজারের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১০-১৫ হাজার মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণও করেছেন তারা। এরপরও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের মাধ্যমেও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মােবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলে সেখানেও তাদের গাড়িতে মাস্ক রাখছেন। কোনাে ব্যক্তিকে জরিমানা করার পাশাপাশি মাস্ক না থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকেই তাদের মাস্ক দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা অনলাইন। পশুরহাট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি গরুর ছবি অনলাইনে আপলােড করেছে মালিকরা। বেচাকেনাও হচ্ছে সেখানে। ঈদ আসতে আসতে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি। অনলাইন পশুরহাট করার উদ্দেশ্যই হলাে মানুষ যাতে সরাসরি হাটে কিছুটা কম যায়। তিনি বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অনলাইনে তাদের গরুর ছবিসহ তথ্যউপাত্ত দিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলাে এ কাজটি খুব সুন্দরভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন, অনলাইন পশুরহাটের কারণে অস্থায়ী হাটগুলােতে মানুষের ভিড় কিছুটা কমে আসবে। জানতে চাইলে এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৪৬ জন করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে ২৫০ জনই ইতােমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

মাে. জসিম উদ্দিন, জেলা প্রশাসক (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, এবার প্রায় ১৬টি অনলাইনকে আমরা বলেছি, তারা কাজ করছে। আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এসবের দেখাশুনা করছেন। নারায়ণগঞ্জে যারা খামারি আছে, তারাও ইতােমধ্যে বিক্রি শুরু করেছেন। এছাড়া গতবারের তুলনায় এবার হাট সংখ্যা অনকেটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। সড়কমহাসড়কে হাট বসানাে এবং গাড়ি দাঁড়িয়ে গরু নামানাে এসব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাটগুলােতে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা, প্রবেশমুখে হাত ধােয়ার ব্যবস্থা এসব বিষয়ে আমরা ইতােমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমরা এসব বিষয়ে কথা বলেছি। করােনা পরিস্থিতি আজকে যে অবস্থায় রয়েছে এখানে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পশুরহাটের মাধ্যমে যেনাে আবার ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আমাদের এতসব আয়ােজন। হাট চলাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবও টহলে থাকবে বলে জানান তিনি। প্রতিটি হাটে প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সার্বিকভাবে পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন যদিও শঙ্কার বিষয়টি অন্য। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলছেন, পশু জবাই করা, বর্জ্য ফেলে রাখা, মােট কথা পরিষ্কার পরিচ্ছনতার বিষয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। এসব বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা যদি না মানে তাহলে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। মাংস বিতরণ করতে গিয়ে মানুষের দীর্ঘ লাইনও ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে আসছে। যে কারণে মানুষের মধ্যে এখন আবার উদাসীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না, অথচ এটা বর্তমান সময়ে একেবারেই অপরিহার্য। এটা আবার শাস্তিযােগ্য অপরাধও। সুস্থ হােক আর অসুস্থ হােক, দুজন এক সাথে হলেই তাকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরায় জরিমানাও করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। আবার যাদের জরিমানা দেয়ার সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে মাস্ক দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু মানুষ পরতে চায় না বলেও জানান তিনি।

এস এম তরিকল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (গাজীপুর) : করােনাকালীন সময়ে আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসন প্রথমেই অনলাইন পশুরহাটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেলায় অনলাইন হাটের মাধ্যমে প্রায় ৬০০-রও বেশি পশু বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে যেসব হাটের অনুমােদন দিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন সেসব হাটে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পশুর রাখার সারিগুলাে ১০ ফুট দূরে দূরে হতে হবে। হাটে প্রত্যেককে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, হাত ধােয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা থাকবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। বাচ্চা-বয়স্ক এবং শিশুদের কেউ বাজারে যাবে না। যাদের মাস্ক থাকবে না তাদের মােবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। হাটগুলােতে সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল চলবে। জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজীপুরে করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ১১৪ জন জানিয়ে তিনি বলেন, তার মধ্যে মারা গেছেন ৫০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৭০১ জন।

কাজী আবু তাহের, জেলা প্রশাসক (শরীয়তপুর) : শরীয়তপুর জেলায় সকল স্থায়ী পশুরহাট এবং আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনুমােদনপ্রাপ্ত অস্থায়ী পশুরহাটসমূহ থেকে করােনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা আছে মর্মে আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে করােনা সংক্রমণ ও বিস্তার রােধে স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। তিনি বলেন, প্রথমত প্রতিটি পশুরহাটে এক বা একাধিক প্রবেশপথ এবং এক বা একাধিক বাহিরপথ নির্দিষ্ট করা থাকবে। ক্রেতাবিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং বাহিরপথ দিয়ে বের হবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পশুরহাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে হাটে আগত সব ব্যক্তিকে ছাতা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, পশুরহাটের প্রবেশমুখে সাবান দিয়ে হাত ধােয়ার ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। চতুর্থত, হাটে আগত সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করতে হবে। হাটের প্রতিটি প্রবেশমুখে এবং বাহিরপথে অস্থায়ী মাস্ক ও গ্লাভসের দোকান স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পঞ্চমত, হাটে আগত যানবাহনসমূহকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। ষষ্টত, সরকার কর্তৃক কোভিড-১৯ এর বিস্তার রােধকল্পে জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনাসমূহও যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। সপ্তমত, সরকার নির্দেশিত এসব বিধিগুলাে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী মাইকিংসহ ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।

মাে. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক (কিশােরগঞ্জ) : কিশােরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাে. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেছেন, একমুখী চলাচলের ব্যবস্থাকরণের মধ্য দিয়ে হাটে জনবিশৃঙ্খলা কিংবা এলােমেলাে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হাটে গরু রাখবে বিক্রেতারা, হাটে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। এসব বিষয়ে ইজারাদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা অবশ্যই মাস্ক পরে হাটে আসবে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বুধবার পর্যন্ত কিশােরগঞ্জ জেলায় ২২০ জন করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, কিশােরগঞ্জে সুস্থতার হার অনেকটাই বেশি, যা সারা দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায়ও বেশি। এক্ষেত্রে কিশােরগঞ্জ জেলা প্রশাসনেরও অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। করােনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকির কাজটি খুবই ভালােভাবে চলছে সেখানে। যে কারণে আক্রান্ত হলেও সুস্থতার হার অনেকাংশেই বেশি বলে জানিয়েছেন আমাদের জেলা প্রতিনিধিও। আর করােনার ক্রান্তিকালীন এ সময়ে কিশােরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে রয়েছেন মাে. সাওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

এস এম ফেরদৌস, জেলা প্রশাসক (মানিকগঞ্জ) : আসন্ন ঈদুল আহজায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার সংবাদের। তিনি জানিয়েছেন, পশুরহাট ও জনসমাগমের মধ্য দিয়ে যাতে করােনা সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় এবং এসব বিষয়গুলাে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ ইতােমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে হাটে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার জন্য সবগুলাে হাটেই একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদিক দিয়ে প্রবেশ করবে আরেক দিক দিয়ে বের হবে। হাটের প্রবেশপথে অবশ্যই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রবেশপথে মানুষের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য থার্মাল ডিটেক্টর থাকবে, হাত ধােয়ার ব্যবস্থা থাকবে, গরু বাঁধার সারিগুলােতে মিনিমাম পাঁচ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হবে এবং সামনা-সামনি সারিতে বাঁধতে হবে যাতে মানুষজন মুখােমুখী না হতে পারে। এ বছর ছােটো কিংবা সংকীর্ণ জায়গায় হাটের অনুমােদন দিচ্ছে না বরং সমাগম এড়ানাের জন্য এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য খােলা জায়গায় হাট আয়ােজন করার ব্যবস্থা করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন। হাটের সংখ্যা বাড়িয়েছেন কীনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, হাটের সংখ্যা বাড়েনি বরং চারটি হাট বসছে এবার। গতবারের তুলনায় এ বছর হাটের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। মানিকগঞ্জে এখন পর্যন্ত করােনা আক্রান্তের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩০ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৫৬ জন।

সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, জেলা প্রশাসক (নরসিংদী) : ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আর মানুষ হিসেবে মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নরসিংদী জেলা প্রশাসন। জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই এই দুই মূলমন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে অনুপ্রেরণার উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করােনাকালে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন। করােনা সংকটের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ােপযােগী দিকনির্দেশনায় নরসিংদী জেলা প্রশাসন সরকারি-বেসরকারি সব কর্মকর্তাদের নিয়ে যথাসময়ে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এখনাে করােনা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। মেধাবী, বিচক্ষণ ও দায়িত্ব পালনে দৃঢ়চেতা এই জেলা প্রশাসক বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে পশুরহাটকে কেন্দ্র করে প্রথমেই আমরা অনলাইন বিকিকিনি নরসিংদী কুরবানির হাট’ নামে একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। গত বছর এই জেলায় অস্থায়ী গরুরহাট ছিলাে ৬২টি, এ বছর মাত্র ২১টি হাটের অনুমােদন দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, হাটে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য বিষয়গুলাে যাতে ভালােভাবে প্রতিপালন। করা হয় সেজন্য ২৬ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও আরেকটি অনন্য পদক্ষেপ রয়েছে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের জেলার সব ইমাম ও কসাই যারা রয়েছেন (যারা পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতে কাজ করেন। তাদের কোভিড১৯ টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে সংক্রমণ কম হয়।

পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার বর্ডারগুলােকে সিলগালা করা হয়েছে, যাতে অতিরিক্ত পশু নরসিংদীতে ঢুকতে না পারে। কারণ নরসিংদী জেলা প্রশাসন পশুর চাহিদা ও মজুদ আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে সার্বিক বিষয়ে তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসিল্যান্ড, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ টিম থাকছে এবং কমিটি নির্ভর সহযােগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন। ইতােমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এ জেলায় এবং একটি কন্ট্রোল রুমও খােলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া অনলাইন কার্যক্রম জোরদারের জন্য লিফলেটের মাধ্যমে মানুষের দোরগােড়ায় পৌঁছে প্রচারণা চালানাে হচ্ছে। অনলাইন হাট থেকে জেলার কোন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বিকিকিনি হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিযােগিতার ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। করেছেন চামড়া পাচার রােধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ চামড়া নষ্ট যাতে না হয় সেজন্য যুব উন্নয়নের মাধ্যমে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও। নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয়টি উপজেলাকে ভাগ করে তিন এডিসিকে জেলা প্রশাসকের অনুকূলে মনিটর করার দায়িত্বও দিয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, নরসিংদী জেলায় করােনা আক্রান্তের চেয়ে বর্তমানে সুস্থতার হারই বেশি। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৮৫-৮৬ শতাংশ। পিকে থাকাবস্থায় সংক্রমণের হার ছিলাে ২১ শতাংশ, বর্তমানে তা ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। নরসিংদী জেলা প্রশাসনের সফল পদক্ষেপের একটি জোনিং কার্যক্রম।

মাধবদী পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘােষণা করে অনন্য সফলতা অর্জন করেছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন, এমনটাই বলেছেন সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এছাড়াও করােনা সংকটের শুরু থেকেই তার নেতৃত্বে নরসিংদী জেলা প্রশাসন একটি এসওপি প্রণয়ন করে, সেই এসওপির আলােকেই মূলত তারা করােনা মােকাবিলায় এখনাে দৃঢ় মনােবল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতে আয়ােজিত করােনা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন ওয়ার্কশপে অংশ নেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ১৮টি দেশের সিভিল সার্জন যুক্ত ছিলেন সেই ওয়ার্কশপে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মুখ্যমন্ত্রী ও সাবেক কেবিনেট সচিব। করােনাকালে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের গৃহীত বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সফলতার বিষয় তুলে ধরে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি।

মাে. আসলাম হােসেন, জেলা প্রশাসক (কুষ্টিয়া) : করােনাকালের পশুরহাটের জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেন বলেন, একটি হাটকে দুই-তিনটি জায়গায় সম্প্রসারিত করতে সব ইজারাদারদের জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে করে একটি মাত্র হাটে জনসমাগম এড়ানাে যায়। এ কাজটি ইতােমধ্যেই করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে। জানিয়ে তিনি বলেন, যারা পশু ক্রয়বিক্রয়ের জন্য হাটে যাবে তাদের সবাইকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। এজন্য প্রত্যেকটি হাটে জেলা প্রশাসনের মােবাইল কোর্ট যাচ্ছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা যাচ্ছেন। এছাড়াও প্রত্যেকটি হাটের জন্য মনিটরিং টিমও গঠন করেছে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে, উপজেলা থেকেও কমিটি গঠন করা আছে সার্বিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু বাস্তবতায় যে সমস্যাগুলাের সম্মুখীন হতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে তার একটি হচ্ছে মানুষ অনেক সময় এ সমস্ত বিষয়গুলাে মানতে চায় না। এটাই বড় সমস্যা। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করানাে হচ্ছে, হাটে মাইকিং রাখা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়াও তিনি বলেন, অনলাইন পশুরহাটের মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় বেশকিছু গরু ইতােমধ্যেই বেচাকেনা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগের হিসাব দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের করা অনলাইন পশুরহাটের মাধ্যমে ২৯টি গরু ও দুটি ছাগল বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা অনলাইনে যােগাযােগ করে দরদাম ঠিক করে পশু ক্রয়-বিক্রয় করছেন। তাদের যােগাযােগের সংযােগটি আমরা করে দিয়েছি। এটাকে জনপ্রিয় করতে পারলে ভালাে হয় বলে মনে করছেন তিনি। কারণ অনলাইনে পশু বিক্রি বাড়াতে পারলে হাটে জনসমাগম অনেকটাই এড়ানাে সম্ভব বলেই মনে করেন তিনি।

মােহাম্মদ হেলাল হােসেন, জেলা প্রশাসক (খুলনা) : করােনা সংকটের শুরু থেকেই সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। যা এখনাে অব্যাহত রয়েছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন এ জেলার জেলা প্রশাসক মােহাম্মদ হেলাল হােসেন। সম্প্রতি করােনাকালীন সময়ে সার্বিক কার্যক্রম এবং ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমার সংবাদের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, সংকটের শুরুতেই বাগেরহাট জেলা প্রশাসন চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপদ রেখে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিনামূল্যে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপদ জায়গায় রাখতে দু-তিনটি থ্রি স্টার হােটেলেরও ব্যবস্থা করেন। করােনা রােগীদের চিকিৎসায় পৃথক একটি করােনা হাসপাতাল তৈরি করেন। এছাড়াও করােনাকালীন সময়ে মানুষ যেন ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা পায় সেজন্য অনলাইন মেডিকেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করেন। করােনার কারণে দোকানপাট বন্ধ ঘােষণায় ওষুধ সরবরাহের জন্যও অনলাইনে একটি অ্যাপস করেছিলেন জেলা প্রশাসক হেলাল হােসেন। জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকরা। বাসায় গিয়েও সেবা দিয়েছেন। নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্য যাতে সহজেই হাতের মুঠোয় পায় সেজন্যও করা হয়েছিল আলাদা অ্যাপস। চাহিদা পেলেই জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবকরা বাসায় বাসায় পণ্য পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে | ‘অনলাইন ডিজিটাল পােল্টি হাউজ নামে আরেকটি অ্যাপস করা হয় খুলনার জনসাধারণের জন্য, যার মাধ্যমে মাছ-মাংস-ডিম এগুলাে সপ্তাহে দুই দিন সরবরাহ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হেলাল হােসেন বলেন, এসবই করা হয়েছে মূলত খুলনার মানুষকে ঘরে রাখার উদ্দেশ্যে। খুলনা জেলায় ছােটো বড় সবমিলিয়ে ৫৮টি বাজার শিফটিং করে পরিচালনা করা হয়েছিল যাতে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। করােনাকালীন সরকারের চাল সংগ্রহের জন্যও ‘ডিজিটাল রাইস প্রকিউরমেন্ট | অ্যাপস করেছিল বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। যা বাংলাদেশে প্রথম। সরকারও এখন পর্যন্ত এ অ্যাপস করতে পারেনি। কৃষকদের ধান সংগ্রহের জন্য অনলাইন ভিত্তিক কৃষকের মুখে হাসি নামে আরেকটি অ্যাপস চালু করে জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ খুলনায় অনলাইন কুরবানির হাট করা হয়, তাও দেশে | সবার আগে করে খুলনা জেলা প্রশাসন। সরকারের দেয়া ত্রাণসামগ্রী থেকে বঞ্চিতদের জন্যও একটি অ্যাপস করে ডাের টু ডাের ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক ও | ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে করােনাকালীন সময়ে অসহায় কিংবা আবেদনকারীদের | বাসায় পৌছে দেয়া হয়েছে খাদ্য সহায়তা। মােট আটটি অ্যাপসের মাধ্যমে তথা তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সেবামূলক কর্মকাণ্ডগুলাে চালিয়ে আসছে খুলনা জেলা প্রশাসন। যার নেতৃত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসক মােহাম্মদ হেলাল হােসেন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার দুইশাের মতাে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলার মতােই সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা হবে আসন্ন ঈদুল আজহার পশুরহাট এবং জনসমাগম এমনটিও জানিয়েছেন তিনি।

সরােজ কুমার নাথ, জেলা প্রশাসক (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহ জেলায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরােধে গৃহীত কার্যাবলির প্রথমটিই হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা, ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে মাইকে প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ , ফেস্টুন ও পিভিসি ব্যানার স্থাপন করছে জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মানানাের জন্য পরিচালনা করা হচ্ছে মােবাইল কোর্ট। প্রতিটি পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করা, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাসা লকডাউন করা, কিছু কিছু বাসায় বাজার পৌছানাে, মানবিক সহায়তা, খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে করােনা সংকটের শুরু থেকেই। দ্বিতীয়ত, মানবিক সহায়তা বিতরণ। অসহায় দরিদ্র ৭৪ হাজার ৩০৪টি পরিবারের মাঝে ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৬০ টাকার নগদ অর্থ বিতরণসহ এক লাখ ৭১ হাজার ১৯১টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। তৃতীয়ত, কোভিড হাসপাতাল। কোভিড হাসপাতালে হাই-ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের জন্য স্থানীয় উদ্যোগে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম স্থাপন করা হয়। অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে একটি সি-পিইপি মেশিন, দুটো অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর মেশিন। একটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানােলা অনুদান হিসেবে আসার কথা রয়েছে। চতুর্থত, ঈদুল আজহায় পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের লক্ষে বেশকটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। তার মধ্যে অনলাইন পশুরহাট একটি। পশু লালন-পালনকারীদের নাম-ঠিকানা, মােবাইল ফোন নম্বর, পশুর গায়ের রং, ওজন ইত্যাদিসহ অনলাইন সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা নিজেরাই যােগযােগ করে গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন।

এছাড়া বিভিন্ন হাটে ব্যবসায়ীদের অনবরত যাতায়াত প্রতিরােধে পশুরহাট স্থায়ীভাবে স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। ২৫ জুলাই থেকে একটানা হাট চলছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক সরােজ কুমার নাথ। এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ হাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সকল হাটে পুলিশ বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের থাকা বাধ্যতামূলক করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটি হাটেই স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে অনবরত এমনটাও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। |

মাে. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক (নীলফামারী) : নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ও নদীভাঙন, করােনা আক্ৰন্তের সুচিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক। তিনি সফলভাবে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মাে. হাফিজুর রহমান চৌধুরী। করােনা প্রাদুর্ভাব মােকাবিলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে টিম নীলফামারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসময় জেলা প্রশাসক বিরাজমান করােনা পরিস্থিতিতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে করােনামুক্ত নীলফামারী গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সুযােগ্য ও সৃজনশীল নেতত্নে কাজ করছে জেলা প্রশাসক। নীলফামারী জেলা প্রশাসক মাে. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, করােনা আক্রান্ত রােগীর খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসক টিম পৌঁছে যাচ্ছে। দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। প্রতিটি মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নীলফামারীর হরিজন পল্লীতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তা করা হয়। দেয়া হয়েছে নগদ অর্থ। করােনা ভাইরাস সংক্রমণ রােধে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে করে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করেন।

মাে. মাজেদুর রহমান খান, জেলা প্রশাসক (চাঁদপুর) : করােনা সংকটের মধ্যেই আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কথা বলতে চেয়ে আমার সংবাদ থেকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মাে. মাজেদুর রহমান খানের সঙ্গে যােগাযােগ করা হলেও ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারেননি তিনি। তবে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মােহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যােগাযােগ করা হলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান আমার সংবাদকে বলেন, একই হাটে যাতে বেশি সংখ্যক জনসমাগম না হয় সে কারণে এ বছর ১৯৯টি অস্থায়ী গরুরহাট অনুমােদন দিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি হাটেই প্রবেশপথ এবং বাহির হওয়ার পথ আলাদা করা হয়েছে। হাটের প্রবেশপথে হাত ধােয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ থাকবে, স্বেচ্ছাসেবক থাকবে যাতে মাস্ক ছাড়া কেউ গরুর হাটে প্রবেশ করতে না পারে। জেলার বাইরে থেকে গরু আসার বিষয়ে আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি। এরপরও যারা আসবে তাদের কেউ অসুস্থ কীনা, জ্বর আছে কীনা, হাঁচি-কাশি আছে কীনা সার্বিক বিষয়ে দেখেশুনে তারপর হাটে প্রবেশের অনুমতি দেবাে। এছাড়া গরু বিক্রির জন্য অনলাইন ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ইতােমধ্যে ৫০টির বেশি গরুর ছবিসহ মালিকের তথ্য আপলােড করা হয়েছে সেখানে। অনলাইনে গরু ক্রয়ে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করছি বলেও জানান চাদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মােহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদপুরে করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা পনেরশ অতিক্রম করেছে। তবে একদিকে যেমন সুস্থতার হার বাড়ছে অন্যদিকে কমছে মৃত্যুর হারও।

অঞ্জন চন্দ্র পাল, জেলা প্রশাসক (লক্ষ্মীপুর) : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণসহ করােনাকালীন সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গত শনিবার আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, পশুরহাটের বিষয়ে গত ১৯ জুলাই লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভা হয়েছে। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাতে হাটগুলাে পরিচালনা করা হয় সেজন্য ইজারাদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে যে হাটগুলাে বসবে সেগুলাে সপ্তাহের প্রতিদিনই চলবে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সুবিধাজনক খােলামেলা স্থানে সীমিত পরিসরে হাট অনুমােদন দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, রামগঞ্জে ১০টি, রায়পুরের তিনটি বিদ্যমান আরও তিন-চারটি, সদরে দুটি আছে আরও ১০টি হাটের অনুমােদন দেবেন জেলা প্রশাসন। কমলনগরে আছে দুটি আরও বাড়বে, রামগতিতে দুটি থাকলেও জনসমাগম এড়ানাের লক্ষ্যে সেখানে হাটের সংখ্যা আরও বাড়বে। এই হাটগুলাে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া প্রত্যেকটা হাটেরই প্রবেশপথ থাকবে একটা, বের হওয়ার পথ থাকবে আরেকটা। গরুগুলােকে বাঁধার জন্য যে খুঁটি থাকবে তাও ন্যূনতম ছয় ফুট দূরত্বে থাকবে। প্রত্যেকটা হাটে একই পরিবার থেকে দুইজনের বেশি কোনাে ক্রেতা আসতে পারবে না। যারা আসবেন তাদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করেই আসতে হবে। ইজারাদাররা এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবেন, যিনি গরু নিয়ে আসবেন তার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম, তার সঙ্গে দুইয়ের বেশি ব্যক্তি হাটে আসতে পারবেন না। পাইকাররাও গরুগুলােকে বেঁধে নিরাপদ দূরত্বে থাকবে। তারও মাস্ক বাধ্যতামূলক। প্রতিটি পশুরহাটে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থাকবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি টিম। ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকবেন জালটাকা শনাক্তকরণের জন্য, পাশপাশি মাস্ক পরিধান নিশ্চিতসহ যেকোনাে ধরনের দৃবৃত্তায়ন ঠেকানাের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবে। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করবেন।

প্রতিটি হাটে জেলা প্রশাসনের মােবাইল টিম থাকবে, পাশপাশি ম্যাজিস্ট্রেটরাও দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়ােজনবােধে জেলা প্রশাসক নিজেই সরেজমিন হাট পরিদর্শনে যাবেন বলেও আমার সংবাদকে জানিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের এডিসিসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপজেলার হাটগুলােতে সরাসরি তদারকি করবেন, যেন সরকার নির্ধারিত বিধিগুলাে হাটে সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয়। মাস্ক পরিধান, হাটের প্রবেশমুখে সাবান পানির ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতের জন্যও তারা কাজ করবেন। যদি কেউ তা না করেন তাহলে সেখানে মােবাইল কোর্টের ব্যবস্থাও থাকবে। এর আগে করােনার শুরু থেকেই লক্ষ্মীপুরের প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন যেন করােনা আক্রান্ত প্রত্যেক ব্যক্তির বাড়ি তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করা যায় এবং লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রীও পৌছানাে যায়। এছাড়া পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন তিনি। যারা সার্বক্ষণিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে যােগাযােগ রেখে করােনা আক্রান্তদের শনাক্তকরণসহ তাদের বাড়ি লকডাউন করেছেন এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানােরও ব্যবস্থা করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরে এখন পর্যন্ত ১২৮৬ জন করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

মােহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (বান্দরবান) : পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পশু বিকিকিনি। মানুষের ভিড় বাড়বে পশুরহাটে। বৃদ্ধি পেতে পারে করােনা সংক্রমণ। এসব বিষয়গুলাে বিবেচনায় নিয়ে সরকার মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সেসব নির্দেশনার আলােকে পশুরহাটের অনুমােদন ও হাটের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণসহ জনসাধারণকে সচেতন করতে কাজ করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। এ জেলার জেলা প্রশাসক মােহাম্মদ দাউদুল ইসলাম খান আমার সংবাদকে বলেছেন, সরকারের যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলােই আমরা বাস্তবায়ন করছি। যেমন পশুরহাটে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থাকরণ, প্রবেশপথে হাত ধােয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সবারই মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণ, একই পরিবার থেকে দুই জনের বেশি হাটে আসতে পারবে না। এছাড়া হাটে সার্বক্ষণিক নজরদাি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।

মাে. শহীদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (ঢাকা) : করােনা সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা জেলা। পক্ষান্তরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ রােধে সদা তৎপর জেলা প্রশাসনের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঝুঁকি থাকলেও শুরু থেকেই দৃঢ়চিত্তে সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই করােনা মােকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এ জেলায় করােনাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক মাে. শহীদুল ইসলাম। এদিকে চলমান এ পরিস্থিতির মধ্যেই ঈদুল আজহা আসন্ন। বিভিন্ন স্থানে বসছে পশুরহাট এবং হাটে হতে পারে জনসমাগম (যা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে)। পশুর হাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রেখে করােনা সংক্রমণ হ্রাসে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা আমাদের দেয়া হয়েছে সেগুলােই আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ। আমরা অন্যান্য জেলার মতাে করেই সরকারের নির্দেশনাগুলাে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। গৃহীত পদক্ষেপগুলাের মধ্যে রয়েছে- হাটের সংখ্যা সীমিতকরণ, হাটে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, প্রতিটি পয়েন্টে হাত ধােয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা, একই পরিবার থেকে দুই জনের বেশি কেউ যাতে হাটে আসতে না পারে, অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের হাটে আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করাসহ বহুমুখী পদক্ষেপ। সবচেয়ে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে যেটি বিচবেচনায় নেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে- মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে প্রবেশ করতে পারবে না। এসব তদারকির জন্যও জেলা প্রশাসন থেকে আনসার, পুলিশসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মােবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

মাে. মনিরুজ্জামান তালুকদার, জেলা প্রশাসক (মুন্সিগঞ্জ) : আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাটকে কেন্দ্র করে জনসমাগমের মাধ্যমে যাতে করােনা সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি ইতােমধ্যেই সম্পন্ন করেছে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন করেছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়। এর আগে জেলা প্রশাসক মাে. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে আমার সংবাদকে বিস্তারিত জানান। দীপক কুমার রায়। তিনি বলেন, প্রস্তুতি সভা থেকে কীভাবে হাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে করােনা সংক্রমণ রােধে কাজ করবে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সে বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (স্থানীয় সরকার বিভাগের) যে নির্দেশনাগুলাে রয়েছে , সে নির্দেশনাগুলাে অনুযায়ীই মুন্সিগঞ্জ জেলায় কর্মসূচিগুলাে গ্রহণ করেছি এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগেরও কিছু নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে— পশুরহাট সড়ক কিংবা মহাসড়কের পাশে বসতে পারবে না। পশুরহাটে প্রবেশের ক্ষেত্রে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বছর আগের মতাে গাদাগাদি করে পশু রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক পশু থেকে আরেক পশুর দূরত্ব মিনিমাম তিন থেকে চার ফুট দূরত্বে হতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধরা যাতে হাটে না আসে, তাদের নিরুৎসাহিত করা এবং হাটে মাইক থাকবে, সে মাইকে মাস্ক পরিধানের বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে সার্বক্ষণিক প্রচার-প্রচারণা চলবে। পাশাপাশি মাস্ক ছাড়া কেউ যেন হাটে প্রবেশ করতে না পারে এবং ইজারাদাররা হাটের প্রবেশমুখে এবং বের হওয়ার পথে হাত ধােয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটের বিষয়ে এসব কার্যক্রমগুলাে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা (মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। উপজেলা পর্যায়েও আমাদের এ সিদ্ধান্তগুলাে বাস্তবায়ন করবে। জানতে চাইলে গত বুধবার পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জে করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৯৯ জন জানিয়ে দীপক কুমার রায় বলেন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪০৫ জন।

দিলসাদ বেগম, জেলা প্রশাসক (রাজবাড়ি) : করােনা ভাইরাস মােকাবিলায় শুরু থেকেই দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে রাজবাড়ি জেলা প্রশাসন। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। চলমান করােনা পরিস্থিতির মধ্যেই আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাট, হাটে জনসমাগম ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও অধিক যাত্রী বহনের বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। ইতােমধ্যেই জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বয় সভা করেছেন। রাজবাড়ি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও সভা করেছেন তিনি। সভায়হাট ও গণপরিবহন কীভাবে চলবে, জেলার বাসিন্দারা কীভাবে হাটে যাবে, গণপরিবহনে কীভাবে চড়বে এবং হাটে কী কী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে- সেসব বিষয়ে ইজারাদারদেরও দিয়েছেন নির্দেশনা। জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগম আমার সংবাদকে বলেন, রাজবাড়িতে পশুরহাটগুলাে যাতে আগের তুলনায় বেশি জায়গা নিয়ে করা হয় (যেমন- মূলহাটটি ছাড়াও পাশের খােলা জায়গা বা মাঠে যেন করা হয়) সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- অবশ্যই ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ছাড়া কেউই পশুরহাটে প্রবেশ করতে পারবে না। বাজারের যারা ইজারাদার আছেন তাদেরও আমরা বলে দিচ্ছি হাটে যেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধােয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। একদিক দিয়ে প্রবেশ আরেক দিক দিয়ে বের হওয়ার রাস্তাও যেন নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া গণপরিবহনগুলােতেও মাস্ক ছাড়া কেউ টিকিট কিনতে পারবে না (নাে মাস্ক-নাে টিকেট)। গণপরিবহনে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রীরা চলাচল করে সে বিষয়েও সবাইকে নিয়ে সভা করে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া গােটা রাজবাড়ি জেলায় করােনা আক্রান্তের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ হিসেবে গত বুধবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯৬ জন।

অতুল সরকার, জেলা প্রশাসক (ফরিদপুর) : চলমান করােনা সংকটের মধ্যেই আসন্ন ঈদুল আজহার পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে করােনা সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে পশুরহাট খুলে বেশ ভালাে সাড়া পাচ্ছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। আমার সংবাদকে এমনটাই জানিয়েছেন | জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। তিনি বলছেন, ফরিদপুরে মানুষ অনলাইনেই পশু বেচাকেনা করছেন। এ বছর ফরিদপুরে বেশি একটা গরুরহাট অনুমােদন দেয়া হয়নি। তবে দুইতিনটি যেগুলাে দেয়া হয়েছে সেখানে যাতে সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদাররা মেনে চলেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হাট পরিচালনা করেন সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়গুলাে যাতে বজায় রাখা হয় এবং মাস্ক পরে সবাই হাটে প্রবেশ করছে কী না, সেজন্য ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার মনিটরিং টিম গঠন করে দিয়েছেন। মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক | সেসব বিষয়ে মনিটর করছেন। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সে তথ্য অনুযায়ী | মানুষজন কমবেশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই চলছে। মনিটরিং টিমের তথ্যানুয়ায়ী, যার হাটে যাচ্ছে তারা মাস্ক পরেই যাচ্ছে, হাটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছেগরুগুলােকে দূরে দূরে রাখা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সব বিষয়গুলােই ভালােভাবে মেনে চলা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ফরিদপুরে করােনা আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের বেশি বলে জানিয়েছেন অতুল সরকার।

শাহিদা সুলতানা, জেলা প্রশাসক (গােপালগঞ্জ) : আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাটে ক্রেতা-বিক্রেতা ইজারাদারসহ সর্বসাধারণের চলাচলে | নিয়ন্ত্রণ আনার লক্ষ্যে ইতােমধ্যেই বেশকিছু কার্যকর সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু করেছে গােপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। পশুরহাটের মাধ্যমে যেন করােনা সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি গােটা জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মানুষদের সমন্বয়ে পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খােদ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। আমার সংবাদকে তিনি বলেন, জেলার প্রত্যেকটি পশুরহাটে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাটের প্রবেশমুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে প্রবেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে ইজারাদারদের তিনি নিজেই নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান।

এছাড়া হাটে মানুষের ভিড় কমাতে অনলাইন পশুরহাটেরও ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানেও বেশ ভালাে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পশুরহাটে হাসিল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর এক জাগয়ায় হলেও এবার আমরা সেটা কয়েকটি জায়গায় বসার ব্যবস্থা করেছি। হাটে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়াও পশুরহাটকেন্দ্রিক সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অন্যান্য জেলার মতােই আরও একাধিক পদক্ষেপ রয়েছে, যা ইতােমধ্যেই বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে গােপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

মাে. আতাউল গণি, জেলা প্রশাসক (টাঙ্গাইল) : বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া করােনা সংকটের মধ্যেই আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাটে জনসমাগমের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ আরও অধিক বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় সারা দেশেই প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর পশুরহাটের হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে অনেকটাই। তবুও ধর্মীয় অনুভূতি ও অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় সীমিত আকারে হাটের ইজারা দেয়া হচ্ছে সারা দেশেই, পাশপাশি অনলাইন পশুরহাটে পশু ক্রয়-বিক্রয়েও উৎসাহিত করা হচ্ছে মানুষকে। একইভাবে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনও আগের তুলনায় এ বছর কমসংখ্যক পশুরহাট ইজারা দিচ্ছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাে. আতাউল গণি। তিনি বলছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাট-বাজারের বিষয়ে যে নির্দেশনা আছে সেগুলাের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেই আমরা হাটগুলাের অনুমতি দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ হাটে সামাজিক দুরত্ব, সাস্থ্যবিধিসহ যে কয়টি বিষয় রয়েছে সবকটি বিষয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতও চাল করেছি। মাস্কসহ সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাতে হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। একইসাথে সারা দেশের বিভিন্ন জেলার মতাে আমরাও অনলাইনে পশু কেনাবেচায় মানুষজনকে উৎসাহিত করছি। জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলায় সর্বশেষ হিসেবে ১২৭৮ জন করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, সুস্থ হয়েছেন ৭০৬ জন।

এস এম মােস্তফা কামাল, জেলা প্রশাসক (সাতক্ষীরা) : করােনা সংক্রমণ রােধে সরকার কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে অন্যতম একটি মাস্ক পরিধান। মাস্ক পরিধানের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কঠোর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার আমার সংবাদের সঙ্গে কথা হয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের প্রধান (জেলা প্রশাসক) এস এম মােস্তফা কামালের। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় শুধু মাস্ক এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখার বিরুদ্ধে অভিযানে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পরিপত্র পাওয়ার পর থেকেই তিনি তার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জরিমানা বৃদ্ধির নির্দেশনা এবং আওতাও বৃদ্ধি করতে বলেছেন। তিনি জানান, এ বছর সাতক্ষীরায় মাত্র ১১টি হাটের অনুমােদন দিয়েছেন এবং হাটগুলােতে টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যেসব বিধি অনুসরণের জন্য বলা হয়েছে, বিশেষ করে উপজেলাপর্যায়ে প্রত্যেকটা হাটে টাস্কফোর্স সেসব বিষয়গুলাে নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করবে। ঢাকা থেকে আসবে বা সাতক্ষীরা থেকে বাইরে যাবে মানুষজন সেক্ষেত্রে পরিবহনগুলােকে খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে কেউ মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে না পারে এবং পরিবহনগুলাে যদি নির্ধারিত প্রটোকল ভঙ্গ করে তাহলে জরিমানা কিংবা বন্ধও করে দেয়া হবে। বাজারগুলােতেও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ একইসাথে আইন প্রয়ােগ করার কাজটিও করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, চেকপােস্টের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। যতােটুকু সম্ভব নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে চেকপােস্ট পরিচালনা করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন তিনি। যদিও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাতক্ষীরায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০২৫ পুলিশ সদস্য করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও চেকপােস্টসহ সাতক্ষীরা জেলা করােনা কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে সার্বিব ক বিষয়ে কাজ করার। ইতােমধ্যে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রশাসন সচিবের আনুকূল্যে চারটি ক্যানােলা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সামগ্রিকভাবে প্রচার-প্রচারণা এবং আইন প্রয়ােগ- দুই ভাগে বিভক্ত করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা একইসাথে তাদের প্রতিরােধ করা এবং মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার সব কার্যক্রমই চালিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে ইজহারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। যদি কোনাে হাটে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটে সে হাট বন্ধসহ জরিমানাও করা হবে বলে বলছেন তিনি। সবশেষ হিসাবে সাতক্ষীরায় করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯০ জন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আনজুমান আরা, জেলা প্রশাসক (নড়াইল) : করােনা সংক্রমণ রােধে পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের প্রথমটিই হলাে- অনলাইন পশুরহাট। সেটির আয়ােজনও করেছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। তিনি জানান, মানুষ যাতে ঘরেই থাকে সেজন্য আমরা অনলাইন পশুরহাট চালুসহ প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়া যেখানে পশুরহাট নির্ধারিত আছে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে ইজারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছি, সভা করেছি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে। তাদের বলা হচ্ছে- সামাজিক দুরত্ব যাতে জনসাধারণ বজায় রাখে এবং স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। গরুর হাটে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে এলে তাদের বাধ্য করা হবে মাস্ক পরতে। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলাে মানা হচ্ছে কী না, সে বিষয়েও মনিটর করছে জেলা প্রশাসনের গঠিত টিম। এছাড়া কুরবানির পশু যাতে নির্ধারিত স্থানে জবাই হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষভাবে নজর রাখছি। পাশাপাশি পশুর বর্জ্য যাতে সাথে সাথে অপসারণ করা হয় সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। নড়াইলে এখন পর্যন্ত পাঁচশর বেশি করােনায় আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে ইতােমধ্যে সাড়ে তিনশর মতাে সুস্থ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাে. মামুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক (বাগেরহাট) : ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মাে. মামুনুর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, এসব বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কেবিনেট ডিভিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশকিছু নির্দেশনা পেয়েছি। যেসব নির্দেশনা আমরা পেয়েছি তার সবই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং আমাদের সকল কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একযােগে করােনা মােকাবিলা এবং ঈদুল আজহার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের নামাজ কীভাবে আদায় করতে হবে, মাস্ক পরিধানের বিষয়টি নিশ্চিত করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নামাজে আদায়, মসজিদে প্রবেশের সময় হাত ধােয়ার ব্যবস্থা রাখা- মােটকথা ঈদের জামাত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতসহ যাবতীয় কাজগুলাে জেলা প্রশাসন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ষাট গম্বুজ মসজিদে প্রতি বছর ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবার সেখানে বিশেষভাবে নজর রাখছে জেলা প্রশাসন, ঈদুল ফিতরেও জেলা প্রশাসনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় করা হয়েছে। আমরা বিশেষভাবে নজর রাখছি যাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধিগুলাে প্রতিপালন করা হয়। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লােকজনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সচেষ্ট আছেন বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা হাটে জনসমাগম এড়ানাের লক্ষ্যে অনলাইনে পশুরহাটের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছি। এটা নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণাও চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। বাগেরহাটে এখন পর্যন্ত ৪৮৯ জন করােনায় আক্রান্ত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সাবিনা ইয়াসমিন, জেলা প্রশাসক (পঞ্চগড়) : করােনা ভাইরাস প্রতিরােধের পঞ্চগড় জেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম, এলাকাভিত্তিক লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নেন জেলা প্রশাসক। সম্মুখ যােদ্ধা হিসেবে দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য দুর্যোগের সময়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন তথা পরিবারকে করেছেন বিপন্ন। ঈদ-চাঁদ, পূজা-পার্বণ, ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক কোনাে অনুষ্ঠানেই যেতে পারেননি বাড়ি। দুর্যোগকালীন সময়ে অনেক পেশাজীবী পরিবারবর্গ নিয়ে নিরাপদে ঘরে বসে থাকলেও পরিবারের কাছে ছুটে গিয়ে বাবার জন্য পথপানে আকুল নয়নে চেয়ে থাকা ছােট শিশুটিকে পারেননি কোলে তুলে নিতে। জনগণকে নিরাপদ রাখতে দুর্যোগকালীন সময়ে লকডাউন বাস্তবায়ন বিদেশফেরত প্রবাসীসহ অন্যদের হােম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, করােনা রােগীদের আইসােলেশন নিশ্চিতকরণ, নিজের জীবন বিপন্ন করে শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করছে এই জেলা প্রশাসক। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জনগণের মাঝে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অসহায় কর্মহীন মানুষের দেয়া হয়েছে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা। জরুরি সেবা নিয়ােজিত সবকিছু চলাচল ছিলাে স্বাভাবিক।

মাে. মাহমুদুল আলম, জেলা প্রশাসক (দিনাজপুর) : করােনা প্রতিরােধে জেলার প্রতিটি মানুষকে সচেতন, কর্মহীন ও যৌনকর্মীদের খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। প্রশাসক ভবনের প্রবেশ মুখে বসানাে হয়েছে জীবাণুনাশক ডিভাইস। করােনা মােকাবিলায় মানবিক দায়িত্ব পালন করছে এই জেলা প্রশাসক। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকল্পে হাটবাজার থেকে শুরু করে গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা কার্যক্রম চালানাে হচ্ছে। পাশাপাশি বাজার সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নিত্য প্রয়ােজনীয় পণ্য, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী যথাযথ প্রক্রিয়ায় সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটানাে, অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে পৌছে দেয়া এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা দেয়াসহ মানবিক কাজও পরিচালনা করা হচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের সহযােগিতা ও জনবহুল জায়গায় ৩ ফিট দূরত্বে বৃত্ত এঁকে দেয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হােম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাে. মাহমুদুল আলম বলেন, দিনাজপুরে করােনা আক্রান্তের প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের কখন কী দরকার এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। বর্তমানে যারা করােনায় আক্রান্ত হয়েছে সবাই সুস্থ আছেন। অনেকটাই করােনা মুক্ত। কাউকে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সবাইকে সচেতন ও ঘরে থাকার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মাে. মাহমুদুল আলম। তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে এরকম অনেকেই আছেন যারা কারাে কাছে চাইতেও পারছেন না আবার কাউকে বলতেও পারছেন না। আমার কাছে এরকম কয়েকজনের তালিকা করে চাল, ডাল, তেল, লবণ ও সমাজসেবা কার্যালয়ের সহযােগিতায় নগদ অর্থ প্রদান করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি সমাজের প্রতিটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এজন্য সবার সচেতনতা ও সহযােগিতা প্রয়ােজন। বিদেশফেরতদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে নিয়মিত তাদের খােজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

মো. আবু জাফর, জেলা প্রশাসক (লালমনিরহাট) : করোনা পরিস্থিতে এবং লকডাউন বাস্তবায়ন, কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। এ ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় নির্মিত বাঁধসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন, ফসলি জমি নস্ট, রাস্তাঘাট ভাঙন ও বন্যায় প্লাবিত ঘরবাড়ি পরিদর্শন করে সহায়তা করেন এই জেলা প্রশাসক। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, নদী ভাঙনকবলিত পরিবারের জন্য জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক শুকনা খাবার ও ৫ হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। অতিদ্রুত এসব ত্রাণ বন্যাকবলিতদের পরিবারের মাঝে পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি বলেন, অসহায় দুস্থ প্রসুতি এক মাকে অপারেশন করার মতো স্বামীর সামর্থ্য নেই। তাই নিজ তহবিল থেকে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসহায় মানুষদের সকল সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি।

মো. আব্দুল মতিন, জেলা প্রশাসক (গাইবান্ধা) : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন। চিকিৎসাসেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭টি সরকারি হাসপাতাল। ১২৬ জন সরকারি চিকিৎসক ও ১৯ জন বেসরকারি চিকিৎসক, সরকারি নার্স রয়েছে ১৯০ জন এবং বেসরকারি নার্স ১৯ জন। সাধারণ মানুষে নিরাপদে রাখার কথা চিন্তা করে সুরক্ষাসামগ্রী বিতারণ করা হয়। করোনা আক্রান্তদের পরিবহনের জন্য প্রস্তুত ১টি অ্যাম্বুলেন্স। রয়েছে আইসোলেসনের ব্যবস্থাও। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলার সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে। গণ জমায়েত পরিহার ও সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৎপর রয়েছে। অসহায় ও কর্মহীন মানুষের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে এই জেলা প্রশাসক। পশুরহাট অনলাইনে করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে করোনা আক্রন্তের সংখ্যা না বাড়ে। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, আমি নিজে অনেক বাড়িতে চাল ডাল পৌঁছে দিচ্ছি এবং এক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজিয়েছি। এসব কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে না। আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আশাকরি জেলাবাসী নিজেদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সরকারের আদেশ মেনে অযথা ঘরের বাইরে বের হবেন না। এ সংকটময় সময়ে সকলকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, জেলা প্রশাসক (ঠাকুরগাঁও) : করোনা পরিস্থিতিতে নানা সচেতনতা কার্যক্রম নিয়ে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসক। অসহায় ও কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তা, শ্রমিকদের মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ নানা করোনাসামগ্রী বিতারণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের সচেতনতা কার্যক্রমের কারণে দিন দিন কমছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সফলভাবে নেতৃত্বে দিচ্ছে জেলা প্রশাসক। কুরবানির পশুরহাট অনলাইনে বসানো হবে বলে জানা গেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম করোনায় আক্রান্তদের মাঝে ফলের ঝুড়ি ও করোনা জয়ীদের স্বাগত জানান ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদের খাদ্যসমাগ্রী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তিনি। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সকলকে ফলের ঝুড়ি অথাৎ পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করা হচ্ছে। যারা করোনায় সুস্থ হয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে ঈদ খাদ্যসামগ্রী ও ৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনসহ বেশকটি সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন বেশকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা।

মো. আসিব আহসান, জেলা প্রশাসক (রংপুর) : করোনা প্রতিরোধের কারণে নানা সচেতনতা ও কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি নিজেই কর্মহীনদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এলাকাভিত্তিক বসানো হয় চেকপোস্ট। ৫শ কর্মহীন ইমারত শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া করোনা ঝুঁকি এড়াতে কুরবানির ঈদে অনলাইনে পশুরহাট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে রংপুরে করোনা রোগীর সংখ্যা না বাড়ে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে ঘোরাঘুরি না করার জন্য জনগণকে পরামর্শ দেয়া হয়। মাস্কবিহীনদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়। পরিবহন শ্রমিকদের দশ কেজি করে চাল দেন এ জেলা প্রশাসক। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। কাঁচা বাজার এবং মুদি দোকানগুলোতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেনাবেচার নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং যাদের কাছে মাস্ক ছিলো না, তাদের মাস্ক পরার পরামর্শ প্রদান করা হয়। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রির কার্যক্রম তদারকি করা হয় এবং জনগণকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য ক্রয়ের জন্য বলা হয়। মোটরসাইকেলে একসঙ্গে ২/৩ জন চলাচলকারীর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। রংপুর জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা খুব কষ্টে আছে। মালিক পক্ষে সঙ্গে আলোচনা করে ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফ করা হয়েছিল। এ ছাড়া অসহায় দুস্থদের খাদ্য সহায়তা করা হয়েছিলো। এখনো আব্যাহত আছে। সব সময় অসহায় মানুষের পাশে প্রশাসন।

প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক (খাগড়াছড়ি) : পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মাইকিং করে প্রচারের মধ্য দিয়ে জনসাধারণকে সচেতন এবং হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক পরে আসছে কী না- সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, সমতলের জেলাগুলোতে হাট-বাজারের দায়িত্ব যদিও জেলা প্রশাসকের, পাহাড়ে ১৯৩৭ সালের একটি আইন অনুযায়ী তা পার্বত্য জেলা পরিষদের। এসব হাট-বাজারগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা তারাই করেন। বাজার ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি আমরা তাদের জানিয়েছি। এরপরও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী হাটে একমুখী চলাচল, হাটের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ যাবতীয় বিষয়েগুলো নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমস্যা অন্যত্র। জেলা প্রশাসন কার্যালয়সহ খাগড়াছড়ির প্রত্যেকটি বাজার কিংবা দোকানের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা থাকলেও জনসাধারণ এতে আগ্রহী না। যদিও জেলা প্রশাসন তাদের উৎসাহিত করার সকল প্রক্রিয়ায়ই অব্যাহত রেখেছে।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বলেন, প্রতিদিনই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনছি, তবুও মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয় তাহলে মুশকিল। এছাড়া যাকে আর্থিক শাস্তি দিব দেখা যাচ্ছে তার জরিমানা দেয়ার সামর্থ্য নেই। পাহাড়ের মানুষদের আর্থিক সামর্থ্য সেরকম নেই। আবার যদি কারাদণ্ড দেয়া হয় সেটিও এ মুহূর্তে খুবই বিপজ্জনক। এখন একজনকে জেলে ঢোকানো মানে জেলের ভেতরে যারা রয়েছে তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া। তিনি বলেন, সমাধান একটাই নিজেরা সচেতন হওয়া। এর বাইরে আর কোনো সমাধান নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে ৪৬৮ জনের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আক্রান্তের হার যে পরিমাণ ছিলো বর্তমানে তার চেয়ে সুস্থতার হার বেশি খাগড়ছড়িতে।

এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (সিলেট) : সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল রোববার ক্ষুদে বার্তায় করোনাকালে পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত থাকায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা কোভিড-১৯ সেল, মিডিয়া সেল) শামমা লাবীবা অর্ণবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কমিশনার অর্ণবের সঙ্গে আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সিলেট জেলা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোলা মাঠ যেখানে আছে বিশেষ স্কুলের পাশে সেখানে হাট বসানোর ব্যবস্থা করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। যদিও সিলেট জেলা শহরে এখনো জায়গা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে উপজেলাগুলোতে ৫২টি হাট বসবে। মন্ত্রণালয় থেকে যেসব বিধিগুলো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে হাটগুলোতে সেসসব নির্ধারণ করা হচ্ছে। হাটে গরু রাখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকবে, প্রবেশের রাস্তা ও বাহির হওয়ার রাস্তা আলাদা থাকবে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সুরক্ষাসামগ্রীর সবই নিশ্চিত করবে হাটের ইজারাদাররা। কুরবানির ক্ষেত্রে পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইতোমধ্যে সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সিলেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশুর চামড়া ছাড়ানো হবে, ইতোমধ্যে মসজিদের ইমাম, চামড়া ব্যবসায়ী ও কসাইদের যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, পশু জবাইয়ের পরপর প্রচুর পানি এবং ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ সিদ্ধান্তগুলো আমরা জানিয়ে দিয়েছি। মাংস প্রিজারভেশনের ক্ষেত্রেও মিটিংয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে ধারণা দিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

বর্তমান সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে অনেকটাই দুর্বল। কারণ তারা গত বছরও ব্যবসা করতে পারেনি, এ বছর করোনার কারণে সমস্যাগ্রস্ত। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠিও দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট শাখার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গেও জুম মিটিং হয়েছে জেলা প্রশাসনের। তারা বলছেন, চামড়া ব্যবসায়ী একক হোক আর সমিতি হোক বিশেষ হারে তাদের ঋণ দেয়া হবে। কেউ প্রথমবার আবার কেউ আগে ঋণ নিলেও এমনকি ঋণ খেলাপি হলেও বিশেষ বিবেচনায় ঋণ প্রদান করা হবে।

করোনা মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসনের এডিসি থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের গাড়িতেও মাস্ক রাখা হচ্ছে, যা বিনামূল্যে বিতরণ করছে জেলা প্রশাসন।

ড. রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক (মাদারীপুর) : দেশের সবকটি জেলার ন্যায় সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে করোনা মোকাবিলায় শুরু থেকেই কাজ করছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে ঈদুল আজহা আসন্ন। সারা দেশেই বসছে পশুরহাট, যা জনসমাগমের অন্যতম মাধ্যম। আর করোনাকালীন এ সময়ে জনসমাগম সংক্রমণ বৃদ্ধিরও অন্যতম কারণ হতে পারে। গেলো ঈদুল ফিতরে এলোপাতাড়ি চলাফেরার কারণে সংক্রমণ বেড়েছিল অনেকটাই। ঈদুল আজহায়ও যেন পুরনায় সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় সে কারণে মাদারীপুরে এ বছর পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। এর মধ্যে সর্বপ্রথম সিদ্ধান্তই হলো— প্রতিটি ইউনিয়নে একটির বেশি হাট বসেব না (অনুমোদন দেবে না জেলা প্রশাসন)। হাট যেগুলো বসবে সেগুলোতেও থাকতে হবে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা। সড়ক-মহাসড়কের পাশে বসবে না কোনো হাট। হাটগুলোর প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা থাকবে। হাটে যারা আসবে তাদের প্রত্যেককেই অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে, অন্যথায় হাটে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ড. রহিমা খাতুন বলেন, এসব বিষয়ে তদারকির জন্য হাটগুলোতে আনসার থাকবে, পুলিশ থাকবে, ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট থাকবে, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের টিম থাকবে, প্রাণিসম্পদ বিভাগেরও একটি টিম থাকবে (তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কাজ করবে)।

মো. তমিজুল ইসলাম খান, জেলা প্রশাসক,(যশোর) : যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, পশুরহাট নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। সেই নির্দেশনা যাতে কঠোরভাবে পালন করা যায়- সেজন্য আমাদের আওতাধীন উপজেলার নির্বাহী অফিসার, থানার অফিসার্স ইনচার্জ এবং পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের আমরা জানিয়েছি। তারা প্রতিটি হাটে হাটকেন্দ্রিক একটি আলাদা কমিটি করবে, কমিটিতে আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারাও থাকবেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থাকবে এবং ইজারাদারদেরও সংশ্লিষ্টতা থাকবে। সেখানে যেসব নির্দেশনাগুলো মানতে হবে তার মধ্যে অন্যতম একটি মাস্ক পরিধান। মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে প্রবেশ করতে পারবে না। বয়স্ক, শিশু কিংবা অসুস্থদের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। হাটের প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান পানির ব্যবস্থা থাকবে। মানুষজনের সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি পশুর দূরত্ব মিনিমাম ৫-৬ ফুট বজায় থাকবে। এসব বিষয়গুলো আমরা মনিটরও করবো। হাটে কারো মাস্ক না থাকলে প্রচারণার অংশ হিসেবে এনজিওর মাধ্যমে তাদের মাস্ক বিতরণ করা হবে। এর বাইরেও আমরা অনলাইনে পশুরহাটের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সংযোগের একটি ফ্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছি। ঈদুল আজহায় পশুরহাট ব্যবস্থাপনা এবং ঈদের জামাত ব্যবস্থাপনায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মাস্ক পরিধানসহ সার্বিক বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্থানীয় ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও সার্বিক বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। ঈদের আগের বাকি সময়ে যশোর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ জেলার প্রতিটি এলাকায় যাবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম বলেন, প্রচারণার পাশপাশি মাস্কও বিতরণ করবো। এক্ষেত্রে যদি কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে হয় তাও আনবো। যশোরে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত প্রায় ১৪০০ লোকের মধ্যে অর্ধেকের মতো সুস্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি।

ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, জেলা প্রশাসক (মেহেরপুর) : শুরু থেকেই সারা দেশের প্রতিটি জেলার ন্যায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসনও করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই করোনা মোকাবিলা করছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম খান। এরই মধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। পশুরহাট ও জনসমাগমের বিষয়েও সরকারের কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনার নির্দেশনাগুলোও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। তার মধ্যে হাটে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ একটি। এছাড়াও হাটে একমুখী চলাচল, বয়স্ক, শিশু এবং অসুস্থ কেউ হাটে আসতে পারবে না, হাটের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা ও পশুর সারির নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখাসহ বহুমুখী নির্দেশনার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম খান। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জনগণকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। জানতে চাইলে গত বধুবার পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় ১৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত বলে জানান তিনি।

আশরাফুল আলম, জেলা প্রশাসক (মাগুরা) : ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ দিনের একটি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে মাগুরা জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি মাগুরায় করোনা প্রতিরোধ কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে বেশকিছু সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কিংবা বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষদের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রেও মাগুরা করোনা প্রতিরোধ কমিটির মিটিংয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার কর্মকর্তারাও ছিলেন। জেলা প্রশাসক বলেন, যেহেতু মাগুরা পৌরসভার মধ্যে সংক্রমণ বেশি, সেজন্য পৌরসভার রোডগুলোতে কোনো গাড়ি চলবে না। এখনো মাগুরার রোড়গুলোতে কোনো ধরনের যানবাহনের চাপ নেই। মানুষ হেঁটেই চলাচল করছে। তিনি বলেন, আমরা দোকানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি নির্দিষ্ট সময়ে খোলা রাখার জন্য।

পশুরহাটের বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পৌরসভার অভ্যন্তরে কোনো হাট বসবে না। যেগুলো বসবে সেগুলোও পৌরসভার বাইরে বসবে। আবার পশুরহাটের বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি। প্রথমত. অনেকগুলো হাট ভেঙে ছোটো হাটে পরিণত করেছি। একটি বড় হাটকে ভেঙে দুটি হাটে পরিণত করেছি। যাতে মানুষের সামাজিক দূরত্বটা বজায় থাকে। আবার পশুরহাটে মানতে হবে দুটি শর্ত— এর মধ্যে অন্যতম একটি সবাইকেই মাস্ক পরিধান করে হাটে আসতে হবে, অন্যটি হাটের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। শতভাগ মাস্ক পরিধানের বিষয়ে মাগুরাতে একটি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। মানুষ মাস্ক পরায় অভ্যস্ত নয়। দেখা গেছে, কারো কারো পকেটে মাস্ক পড়ে থাকছে, কিন্তু পরছে না। জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- ইউনিয়ন-পাড়া মহল্লাগুলোতে মানুষের ভিড় করে কুরবানি করা যাবে না। একজন মসজিদের ইমামের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গায় পশু জবাই করতে হবে এবং গরু কাটাছেঁড়ার কাজটিও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় করতে হবে। মাস্ক পরিধানের বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসন গত জুন-মে মাসের দিকে যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল সে কর্মসূচিই বর্তমান সময়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা বিনামূল্যে মাস্ক দিচ্ছি। মোটরসাইকেলে যাতে একজনের বেশি কেউ না চড়ে, যানবাহন চলাচলও যাতে সীমিত থাকে সেজন্য মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। জানতে চাইলে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাগুরায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৫ জন বলে জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ১৭৫ ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাকি ১৭৯ রোগী এখনো চিকিৎসাধীন।

মোহাম্মদ রেজাউল করিম, জেলা প্রশাসক (কুড়িগ্রাম) : ঈদুল আজহায় নদী পথে যাতে ভারতীয় গরু ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। দেশি খামারিদের কথা চিন্তা করেই ভারতীয় গরু হাটে বিক্রি বন্ধে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। অসহায় দুস্থ কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় দুই শতাধিক কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রতিজনকে ১০ কেজি করে চাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি ডাল, লবণ ও সাবানসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। এলাকাভিত্তিক করা হয়েছে লকডাউন। জেলায় সড়ক পথে, নৌ-পথে ও আকাশ পথে জনসাধারণের আগমন ও বহির্গমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও একইরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো। তবে জরুরি পরিবহন ও সেবাসমূহ এর আওতা বহির্ভূত থাকবে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দেশের খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু পাচার রোধে প্রশাসন কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেছে। প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও কোনো অনিয়ম হলে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মহীন ও শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বরাদ্দের টাকা জেলার ৯ উপজেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তালিকা করে নগদ টাকা অসহায় দুস্থদের মধ্যে দেয়া হয়।

সূত্র: দৈনিক আমার সংবাদ