বন্দরে একজন হুজুর আছেন, রেলওয়ের জমি দখল করে বিল্ডিং বানিয়েছেন: সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

কারো নাম উল্লেখ না করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান বলেন, বন্দরে একজন হুজুর আছেন। যিনি মদনগঞ্জ-মদনপুর রুটে রেলওয়ের জমি দখল করে বিশাল বিল্ডিং বানিয়েছেন। রাস্তার ধারে টিন দিয়ে বাউন্ডারি দিয়েছেন। ওখানে নাকি মসজিদ করবেন আবার জুম্মার নামাজও পড়ানো হবে। আমার কথা হলো জমিটি রেলওয়ের, সেই হিসেবে সরকারী সম্পত্তি আর বন্দরে সরকারী সম্পত্তির মালিক বন্দরে জনগণ। সেখানে যে মসজিদ বানিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ানো হবে ওয়াকফা ছাড়া কোন মসজিদে জুম্মা হয়না এটা কি হুজুর জানেন না? উনি যদি সত্যিকারের হুজুরই হতেন আর উনার এতো টাকা পয়সা তাহলে উনি এই করোনার সময় জনগণের পাশে কেন দাড়াচ্ছেন না? কেন ওই বিশাল বিল্ডিংয়ে একটা করোনা সেন্টার খুলে দিলেন না। বন্দরের মানুষের জন্য একটা পিসিআর ল্যাব কেন করে দিলেন না। সরকারী সম্পত্তি দখল করে দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। বন্দরের মানুষ আপনারা একত্রিত হোন এদেরকে প্রতিহত করুন। যদি কোন ব্যক্তির কর্মকান্ডে অনেক মানুষের ক্ষতি হয় তবে তাকে প্রতিহত করা সকলের দায়িত্ব।

তিন হাজার অসহায় পরিবারের শিশুদের জন্য গুড়ো দুধ বিতরণের মধ্য দিয়ে ভিন্নভাবে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে তিন হাজার শিশুর জন্য গুড়ো দুধ বিতরণ করা হয়।

এ সময় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, বন্দরে অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শিশু রয়েছে যারা এই করোনার সময়ে দুধ খেতে পারছেন না। আজকে আমি ৩ হাজার শিশুর জন্য ৩ হাজার প্যাকেট গুড়ো দুধ নিয়ে এসেছি। যা আপনারা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সঠিক পরিবারের কাছে পৌছে দিবেন। বিগত দিনে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন সাহায্য অসহায় মানুষদের ঘরে পৌছে দিয়েছি। আপনারা জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা নিয়ে সে গুলো ঘরে ঘরে পৌছে দিবেন। এতোদিন আমি শুধুই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলায় কাজ করেছি। আজ থেকে আমার নিজ দল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা করোনা মোকাবেলায় মাঠে নামবে। মানুষের জন্য কাজ করতে মানুষকে শুধু টাকা পয়সা দিয়েই উপকার করা যায়না। উপকার করার ইচ্ছা থাকলে নিজের পরিশ্রম দিয়েও করা যায়।

তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় পার্টির নেতা রিপন ভাওয়াল যা করে দেখিয়েছেন। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় ৩০টি মৃত দেহ সৎকার করেছেন। যাদের মধ্যে হিন্দু মুসলিম সবাই ছিল। সে কখনো আমার কাছে বা কারো কাছ থেকে কোন সহযোগীতা চায়নি। রিপন ভাওয়ালের এমন প্রশংসনীয় কর্মকান্ডে আমি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

১৪ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বন্দর চৌধুরী বাড়ি এলাকায় নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পল্লীবন্ধুকে স্মরণ করে সেলিম ওসমান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অবদানের কথা একদিনে বলে শেষ করা যাবেনা। উনি যেদিন বন্দরে নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুলটি উদ্বোধন করতে এসে ছিলেন সেদিন বন্দরের মানুষের ভালবাসা দেখে উনার চোখে পানি এসেছিল। উনি আমাকে বলেছিলেন সেলিম নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল। যতদিন বাচবা বন্দরের মানুষের জন্য কাজ করবা। দলমত বুঝিনা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর মত লোক এসেছিল বলেই আজ আমরা শুক্রবার জুম্মা নামাজের দিন ছুটি ভোগ করছি। সারাদেশের মসজিদ গুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সড়ক যোগাযোগ, উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন এমনকি কৃষির উন্নয়নেও উনার অন্যন্য অবদান রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করেই উনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন করে গেছেন। যা বর্তমানে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চালিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রায় ১ ঘন্টার অধিক সময় বক্তব্য রাখেন এমপি সেলিম ওসমান। যার মধ্যে প্রায় ৪৫মিনিট সময় ধরে তিনি করোনা মহামারি ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে সচেতনা অবলম্বন করতে এবং এই করোনা ভাইরাসের আক্রামন থেকে বাঁচতে করনীয় সম্পর্কে সর্তক করেন।

সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রথম এই বন্দর থেকেই করোনা রোগী শর্নাক্ত হয়। সর্বপ্রথম এই বন্দরেই লকডাউন দেওয়া হয়। এখান থেকেই নারায়ণগঞ্জ হটস্পট রেডজোনে পরিণত হয়। আল্লাহ আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন। সেই লকডাউন যদি এখনো চলতো তাহলে হয়তো অনেকের পেটেই এখন ভাত জুটতো না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছি। সামনের দিনে দূর্ভিক্ষ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাকা না থাকে। আপনারা আপনাদের বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ করুন। কারো পুকুর থাকলে সেখানে মাছ চাষ করুন, বাড়ির ছাদ পরিস্কার করে সেখানে সবজি চাষ করুন। বাড়িতে হাস মুরগি, ছাগল, কবুতর যার যার সাধ্যমত পালন করুন। তাহলে দেখতে দুর্ভিক্ষ আসবেনা। তবে আপনাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। আমি অনেক মানুষকেই দেখেছি মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছেন। আপনার হয়তো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে আপনার কিছু হবেনা। কিন্তু আপনি এই ভাইরাসটি রাস্তা থেকে বহন করে বাসায় নিয়ে গেলে আপনার সন্তানের কি হবে আপনার বৃদ্ধ বাবা মায়ের কি হবে একবার ভেবে দেখবেন। আপনার কোন অধিকার নাই আপনার আশে পাশের মানুষের ক্ষতি করার, সমাজের ক্ষতি করার। আমি মনে করি দেশে এই করোনা প্রার্দুভাবের মহামারির সময়ে যারা মাস্ক ছাড়া বাইরে ঘুরাফেরা করছে তারা আমার দৃষ্টিতে সমাজের শত্রু, তারা দেশের শত্রু, তারা রাজাকারের থেকেও খারাপ।

তিনি আরো বলেন, আমি ৭টি ইউনিয়নে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৭টি স্কুল বানিয়েছি। আমি এবং আমার সহধর্মিনী নবীগঞ্জ গালর্স স্কুলেও নতুন একটি ভবন বানাচ্ছি। এগুলো করতে গিয়ে আমি সকলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সকলের সহযোগীতা পেয়েছি। আজকে সেই সকল স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া বন্ধ। সেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কথা একবার ভাবুন তারা কিভাবে দিন কাটাচ্ছে। আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি বিএনপি কারো জন্য এখন রাজনীতি করার সময়না। এখন মানুষের পাশে দাড়ানোর সময়। আর সকলকের কাছে আমি অনুরোধ করে বলবো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা ছাড়া কোন এমপি এলাকায় উন্নয়ন করতে পারেনা। তাই আপনারা আমার প্রশংসা করে সময় নষ্ট করবেন না। এখন সত্যিই যদি কারো প্রশংসা করতে হয় তাহলে আপনার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, শওকত হাশেম শকুর, জাতীয় পার্টির নেতা রিপন ভাওয়াল, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না এদের প্রশংসা করুন। এই করুনা কালে তারা যা করেছেন সেটা যদি সবাই অনুসরন করেন তাহলে দেখবেন আমরা অনেক সহজেই এই করোনা মহামারি মোকাবেলা করতে পারবো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যারা আছেন আপনারা আবারো প্রতি এলাকায় আবারো সেচ্ছাসেবী গঠন করেন। যারা সেচ্ছায় শ্রম দিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করবে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবে সে সম্পর্কে সচেতন করবে।

প্রতিটি মসজিদের ইমাম এবং বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, প্রতিটি মসজিদের ইমামরা প্রতি ওয়াক্তে নামাজের পূর্বে বয়ানে মানুষকে সচেতন করুন। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। বার বার হাত ধোয়ার কথা বলুন। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলুন। প্রয়োজনে মসজিদের ভেতরে মাস্ক পড়ে নামাজ পড়তে বলুন। আপনাদের বয়ান আরো বেশি কার্যক্রর হবে বলে আমি মনে করি। আমি বন্দরের খান মাসুদকে অনুরোধ করবো আপনি দায়িত্ব দেন। বন্দর ঘাটে সেচ্ছাসেবী নিয়োগ করুন। যাতে করে কেউ মাস্ক ছাড়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত না করে। যারা মাস্ক ব্যবহার করবেনা তাদেরকে বুঝান। প্রথমে তাদেরকে সচেতন করুন। যদি তারা সচেতন না হয় প্রয়োজনে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর ভাবে সরকারী বিধি নিষেধ মানতে বাধ্য করা হবে।

মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু এরশাদের স্মরনে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশে উপজেলা ব্যবস্থা চালু করেন। যার ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে পৌছায়। বাংলার মানুষ উনাকে পল্লীবন্ধু উপাধি দিয়েছেন।

মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন বলেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আমুল পরিবর্তন এনেছিলেন। যা থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়ে ছিল।

কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলক চালিকা শক্তি তৈরি পোশাক শিল্প যা কি এরশাদ সরকারের আমলে উনার হাত ধরেই বাংলাদেশে বিকাশ ঘটে ছিল। তখন থেকে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল হতে শুরু করে।

বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন বলেন, আজকে মদনগঞ্জ-মদনপুর যে সড়কটি এটি এরশাদ সরকারের আমলেই হয়েছিল। আমাদের বন্দরে আজকে যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়ন এরশাদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করেছিল।

জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের এর সভাপতিত্বে ও শহর যুবসংহতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন ভাওয়াল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, বন্দর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাবা, সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, যুবলীগ নেতা খান মাসুদ, ১৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি পলি বেগম সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দরা।