রূপগঞ্জে ছাত্রদল কমিটি: উপটোকনে ম্যানেজ নাকি ত্যাগের মুল্যায়ন?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার গুঞ্জনে প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন ইউনিয়নের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে দাবি ওঠছে কারো কাছ থেকে বিশেষ উপটোকনে ম্যানেজ নয় রাজপথের সক্রিয় কর্মীদের হাতেই তুলে দেয়া হোক উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি। কেউ কেউ জানিয়েছেন- ছাত্রদলের কমিটির নিয়ন্ত্রণে নিতে স্থানীয় এক ধনকুবের নেতা মোটা অংকের উপটোকনে জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে কমিটি ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় ছাত্রদল নেতারা জানিয়েছেন- নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। কমিটিতে ব্যক্তি বিশেষের অনুগামী নিস্ক্রিয় কর্মীকে দায়িত্ব দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় বিএনপির এক ধনকুবের নেতার অনুগামী নাহিদ হাসান ভূঁইয়া নামের এক ছাত্রদলের কর্মীর হাতে উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। যদি তাই হয় তাহলে বঞ্চিত হবে রাজপথের সক্রিয় নেতারা। এমনটাই দাবি করেছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

তাদের আরও দাবি- যদিও রাজপথের সক্রিয় ছাত্রদল নেতারা তাকিয়ে আছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবের দিকে। তারা আশা দেখছেন- কোন ধনকুবের নেতার বিশেষ উপটোকনে জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা ম্যানেজ হয়ে অযোগ্য বিতর্কিত ব্যক্তি বিশেষের অনুগামী কাউকে ছাত্রদলের শীর্ষ পদে বসাবেন না। ইতিমধ্যে উপজেলায় আওয়াজ ওঠেছে মোটা অংকের বিশেষ উপটোকন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির ওই নেতা, যিনি রাজপথে নিজেও আন্দোলন করেন না এবং যারা তার চারপাশে চাটুকার শ্রেণির কর্মী তাদেরকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদে বসাতে কাজ করে আসছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাগেছে, রূপগঞ্জের সন্তান দুলাল হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি। গত কয়েক দশকে তিনিই ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শীর্ষ এই পদে। বর্তমানে তিনিও রূপগঞ্জে মুলদলের রাজনীতিতে সচল। এ ছাড়াও এক সময় রূপগঞ্জে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সেক্রেটারি মাহাবুব রহমান। এর আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা যুবদলের সাবেক সেক্রেটারি আশরাফুল হক রিপন। তারও আগের কমিটিতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন মোশারফ হোসেন যার নিবাস রূপগঞ্জে। বর্তমান রূপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও ছাত্রদলের এসব সাবেক নেতাদের পাশ কাটিয়ে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। তারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেছেন তাদের সঙ্গে থেকে রাজপথে যেসব ছাত্র নেতা আন্দোলন করেছেন তাদের ত্যাগের মূল্যায়নের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে রূপগঞ্জের রাজনীতিতে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া। যদিও গত ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করার পর কাজী মনিরের ছায়াও রূপগঞ্জের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছেনা। বর্তমানে তৈমূর আলম খন্দকার ও দিপু ভুঁইয়াই রূপগঞ্জের বিএনপির মধ্যে আলোচনায়। যেখানে রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে দিপু ভুঁইয়া সক্রিয় না থাকলেও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে তার চারপাশে ঘুরঘুর করা কর্মীদের বড় বড় পদে অধিষ্ট করার কাজটি ঠিকই করছেন। যাহোক এই তিন নেতার সঙ্গেও রাজনীতি করেছেন এমন ছাত্র নেতাও রয়েছেন বেশকজন।

এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল মামুনের নিবাস রূপগঞ্জেই। এ ছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সজীব হোসেন। মশিউর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান, শ্যামল মালুম ছাড়া বাকিরা সবাই রূপগঞ্জের ছাত্র দলের রাজনীতিতে রয়েছেন।

স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন- ছাত্রদলের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়ভাবে রাজপথে আন্দোলন করে আসছেন ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম, আজিম সরকার, সুলতান মাহামুদ, সজীব হোসেন, মাসুদুর রহমান মাসুম, সোহরাব হোসেন সহ বেশকজন ছাত্রদল নেতা। এসব নেতাদের পাশ কাটিয়ে নাহিদ হাসান ভূঁইয়া নামে একজনকে উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে আনার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। যার বড় ভাই উপজেলা যুবদলের পাশাপাশি জেলা যুবদলের শীর্ষ পদে থেকেও রাজনীতিতে তার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

নেতাকর্মীদের দাবি- নাহিদ হাসান ভূঁইয়ার চেয়ে উল্লেখিত নেতাদের রাজপথে ঘাম রয়েছে বেশি। যারা হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নাহিদ হাসান ভূঁইয়ার সেই তুলনায় রাজপথে তেমন কোন ভুমিকা নাই। তার ভুমিকা স্থানীয় বিএনপির এক নেতার চারপাশে ঘুরঘুর করা। নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে ছাত্রদলের নেতৃত্বে বসানো হলে বঞ্চিত হবেন রাজপথের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে প্রমাণিত হবে বিশেষ সুবিধায় কমিটি গঠন করা হয়েছে যেখানে নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কারন নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে নেতৃত্বে বসাতে মোটা অংকের উপটোকন নিয়ে নেমেছেন বিএনপির একজন ধনকুবের নেতা।

তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবরই দাবি করে আসছেন- কেউ কোন বিশেষ সুবিধা দিয়ে কিংবা উপটোকন দিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে কমিটি নিতে পারবেনা। যারা রাজপথে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন এবং যোগ্য তাদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে।