আড়াইহাজার ছাত্রদলে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে চান ৫ নেতা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আড়াইহাজারে নেই কোন ছাত্রদলের কমিটি। অনেকটা অভিভাবকহীনভাবেই চলছে আড়াইহাজার থানা ছাত্রদল। এদিকে কমিটি গঠনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার পর ইতিমধ্যে সারাদেশে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন শুরু করেছে ছাত্রদল। এমন খবরে আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশি নেতারাও নড়েচড়ে বসেছেন। তারাও আশা দেখছেন আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি হতে যাচ্ছে। যদিও জেলা ছাত্রদল এখনও নিশ্চিত করেনি কবে নাগাদ কমিটি গঠন করা হবে।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের বিষয়ে ক্লিন ইমেজধারী ছাত্রত্ব আছে ও অবিবাহিত নেতাদের সন্ধান করছেন। কারন কেন্দ্র থেকে ছাত্রত্ব আছে ও অবিবাহিতদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ফলে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা। যদিও জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছেন- কমিটি গঠনের বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে গেছেন। ইতিমধ্যে সবগুলো থানা থেকে সদস্য ফরম কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সদস্য ফরম যাচাই বাছাইও প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোন সময় ছাত্রদলের থানা/উপজেলা কমিটিগুলো ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা- আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে চাওয়া একাধিক নেতার মধ্যে থেকে মেহেদী হাসান, ফেরদুস রহমান, রুহুল আমিন, তুষার মোল্লা ও রাসেল মিয়ার নামই রাখছেন টপলিস্টে। কারন হিসেবে তারা বলছেন আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্র রাজনীতিতে তারা পাঁচ জনই ক্লিন ইমেজধারী ছাত্র নেতা। যাদের প্রত্যেকে অবিবাহিত ও ছাত্রত্ব আছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবিমতে জানাগেছে, আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের কমিটির নেতৃত্বে তৃণমূলের অনেকটা পছন্দের দৃষ্টিতে আছেন মেহেদী হাসান। তিনি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করে আসলেও সামান্য একটি ওয়ার্ডের সদস্য পদও ঝুটেনি তার কপালে। কিন্তু বিনিময়ে শিকার হতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কর্মীদের দ্বারা নির্যাতন।

জানা গেছে জন্মগতভাবে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি শয্যাশয়ী। মেহেদী হাসান ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে। ২০১১ সালে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই রসায়নে সফলতার সহিত অনার্স পাড়ি জমান। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছাত্রদলের একটি পদ পাওয়ার আশায় আজ অবধি রয়ে গেছেন অবিবাহিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে লাগতে দেননি তিনি কলংকের দাগ। জড়িত নেই কোন প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপে।

অন্যদিকে আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের আরেক নেতা ফেরদৌস রহমান। যার বংশই জিয়ার পরিবারের রাজনীতির সঙ্গে মিশে আছে। ফেরদৌস ভূঁইয়ার মরহুম দাদা মঙ্গল রহমান ভূঁইয়া ছিলেন আড়াইহাজার থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও তিনি ছিলেন আড়াইহাজার থানা বিএনপি সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার।

নেতাকর্মীরা আরও জানিয়েছেন, ফেরদৌসের চাচা মো: হিরন ভূঁইয়া বর্তমানে মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। ফেরদৌস রহমান ২০১২ সালে এসএসসি পাস ও ২০১৪ সালে সরকারি সফর আলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বর্তমানে তিনি সরকারি সফর আলী কলেজ ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র। বিয়ের কাজটিও আটকে আছে ছাত্র রাজনীতির একটি পদের আশায়।

এছাড়াও আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের আরেক রাজপথের সক্রিয় কর্মী যার নাম রাসেল মিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নেই কোন প্রকার বদনাম। ঝুটেনি তার কপালেও একটি ওয়ার্ডের সদস্য পদ। বুকে লালন করে আসছেন আসন্ন কমিটিতে স্থান করে নিবেন শীর্ষ কোন পদে। তৃণমূলের দৃষ্টিও তার দিকে তাকে যেন ছাত্রদলের সুপার ফাইভে রাখা হয়। তৃণমূলের দাবি এ ধরণের ত্যাগী ও রাজপথের সাহসী নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন না করা হলে অতীতের ন্যায় অচিরেই আড়াইহাজার ছাত্রদল তলিয়ে যাবে সাগরের তলায়। তিনি ২০১০ সালে কলাগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১২ সালে সরকারি সফর আলি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি সরকারি সফর আলি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র। আজ অবধি রয়ে গেছে অবিবাহিত ছাত্রদলের একটি পদ পাওয়ার আশায়।

আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের আরেক ভিন্ন মন মানসিকতার ছাত্র নেতা রুহুল আমিন। তিনি ২০০৮ সালে এসএসসি ও ২০১০ সালে এইচএসসি ২০১০ পাস করেন। ২০১৬ সালে তিনি অনার্স শেষ করে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন। রুহুল আমিন দাবি করেন বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলী সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হন তিনি। তার আব্বাও দীর্ঘদিন দলকে ভালোবেসে দলের জন্য কাজ করেছেন। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, আমি যদি থানা ছাত্রদলের দায়িত্ব পাই তবে অতীতের সব গ্লানি মুছে দিয়ে সবাইকে একসাথে নিয়ে আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলকে রোল মডেল হিসাবে রূপায়িত করব। সেই সাথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজপথে লড়াই করে যাব। আর আমাকে যদি থানা ছাত্রদলের দায়িত্ব নাও দেয়া হয় তাতে কোন আক্ষেপ নাই। অতীতে যেমন রাজপথে থেকে কাজ করেছিলাম ভবিষ্যতেও করব ইনশাল্লাহ। তবে তিনি কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের কাছে দাবি রাখেন, কোন বসন্তের কোকিলদের হাতে যেন আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের দায়িত্ব না দেয়া হয়।

এদিকে আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের আরেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ তুষার মোল্লা। তিনি বলেন, আড়াইহাজারের ছাত্রদল হোক ছাত্রদের দিয়েই আমি চাই। যারা অতীতে রাজপথে ছিল এবং আছে তারা মূল্যায়ন পাক আমি চাই। আমার রাজনৈতিক গুরু আড়াইহাজার থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরু যেমনটা চেয়েছিলেন আড়াইহাজার থানা ছাত্রদল তেমন যেন রাখা হয়। আমি যদি কাজ করে থাকি তাহলে দল আমাকে অবশ্যই মূল্যায়িত করবে। আমার বিশ্বাস কেন্দ্রীয় নেতারা অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি তারা অবশ্যই সঠিক নেতা নির্বাচন ভুল করবেন না।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, তাদের মত তুষার মোল্লাও অবিবাহিত ও ছাত্রত্ব আছে। তুষার বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার মরহুম দাদা মাজু মেম্বারও ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবা তোফায়েল আহমেদ হবি ছিলেন বিশনন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে তিনি সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নিষ্ঠার সঙ্গে কোন প্রকার বিতর্কিত কর্মকান্ড ছাড়া। তিনি দাবি করেন- ২০১১ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তার বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে। এই পর্যন্ত তিনি তিনটি রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়েছেন। তিনি এসএসসি পাস করেন ২০১৫ সালে ও এইচএসসি পাস করেন ২০১৭ সালে। বর্তমানে তিনি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। রয়ে গেছেন অবিবাহিত।