২৫বছর ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে: সেলিম ওসমান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী মুজিববর্ষ ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২০ উদযাপন অনুষ্ঠানকে স্মরনী করে রাখতে বন্দর থানাধীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসা সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা মন্ডলী ও পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।

২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেল ৫টায় বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাউয়ারের রাত্রি কমিউনিটি সেন্টারে উক্ত মত বিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বন্দর উপজেলার সভাপতি এমএ রশিদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা বেগম শান্তা, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার, বন্দর থানা পুুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ.ক.ম নুরুল আমিন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।

আলোচনা সভায় উল্লেখ করা হয়, বন্দর থানা এলাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মোট ৭৩টি যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২ হাজার এবং মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা সহ মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৮টি যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ৩২ হাজার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, প্রতি বছরই আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস সমরক্ষেত্রে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদযাপন করে থাকি। কিন্তু এ বছরেরটা একটু স্পেশাল। এ বছর বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। সরকার এ বছরকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছেন। যেকোন ভাল কাজ করতে গেলে সমস্যা আসবেই। আর যেখানে সমস্যা থাকবে সেখানে সমাধানও হবে। সেই সমাধানের জন্যই আজকে আলোচনায় বসা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী অবশ্যই স্মরনীয় করে রাখার মত পালন করতে হবে। বাধা, সমস্যা আসবেই। সমস্যা সমাধানে আপনাদের সকলের সহযোগীতা চাই।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে। দেখা যাবে ভবিষ্যতে আমরাই তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে হিমশিম খাবো। এখন যারা ৪০ বছরের উর্ধে আছেন তারা অনেকেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানেন না। ৭৫এর পর ২৫টি বছর বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর লোকজন তাদের লোকজনদের বিভিন্ন কলেজ মাদ্রাসায় পড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের লোকজন বসিয়ে রেখেছে। তারাই হয়তো আমাদের আশেপাশেই আছে তারাই সমস্যা করার চেষ্টা করবে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি ডাকলে ওরা অবশ্যই আসবে। কিন্তু সমস্যার কথা বলে যদি আপনারা নিজেদের ঘুটিয়ে রাখেন তাহলে জামায়াতের সাথে আপনাদের তফাৎ কোথায় থাকবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয়। তিনি আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি কারো না। বঙ্গবন্ধু হচ্ছে আমাদের বাঙ্গালী জাতির পিতা। বাঙ্গালী জাতি এবং জাতির ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি স্কুল কমিটির পরিচালনা পর্ষদের ১১জন করে মানুষ আছেন। সেই সাথে প্রতিটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা রয়েছেন। আপনারা প্রতিটি মানুষ যদি ১০জন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেন তাহলে দেখা যাবে সমরক্ষেত্র মাঠে শিক্ষার্থীদের জায়গা হবে না। তাই আগামী ৫ মার্চের মধ্যে আপনারা আপনারা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত আকারে প্রস্তাবনা জমা দিবেন। আপনারা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন শিক্ষার্থী আনবেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোন ইভেন্টে পারফর্ম করবে না। বঙ্গবন্ধুর উপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে আমরা ঢাকা থেকে বিচারক মন্ডলীদের এনে প্রতিযোগীদের ফলাফল নির্ধারণ করবো। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা নিবো। বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীর উৎসব পালনের জন্য আপনারা কারো কাছ থেকে সহযোগীতা চেয়ে চাদাঁ নিবেন না। এরজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটা বরাদ্দ রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় সেটি সামান্য হলেও আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে যা যা প্রয়োজন সব খরচ বহন করবো। আমরা বন্দরে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করে সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই এই নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিকের নারায়ণগঞ্জ, এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের জন্মস্থান, এই নারায়ণগঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা নারায়ণগঞ্জ।

বক্তব্যের শেষে এমপি সেলিম ওসমান আগামী ৭মার্চ তার মা ভাষা সৈনিক মরহুম নাগিনা জোহার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মদনপুরে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় দোয়া এবং বিকেলে চাষাঢ়ায় হীরা মহলে দোয়ায় অংশ নিতে সকলের প্রতি অনুরোধ রাখেন।

সভায় বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবাষির্কীতে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক আলোচনা সভা, কেক কাটা, আলোকসজ্জা, লেজার শো, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, বির্তক প্রতিযোগী, মুক্তিযোদ্ধা এবং নারীদের অংশ গ্রহণে পৃথক কর্মসূচীর সবই পালনের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উদ্যোগে এই আয়োজনটি আরো বর্ণাঢ্য করার মধ্য দিয়ে সারাবাংলাদেশে স্মরনীয় করে রাখতে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অতীতে ২০১৬ সালে বন্দর সমরক্ষেত্র মাঠে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী ও আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সহ সকল দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ৩০০ পাউন্ডের কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করেন। একই ভাবে ২০১৭ সালে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ও ৪৫০ পাউন্ড কেক এবং ২০১৮ সালে ১৫হাজার শিক্ষার্থী ও ৫০০ পাউন্ডের কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের উৎসব উদযাপন করেছেন।