যুদ্ধ চলছে এখনো, নেতা একমাত্র শেখ হাসিনা: জাপা এমপি সেলিম ওসমান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়ে ছিলাম। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। কিন্তু আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের বর্তমান যুদ্ধের নেতা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে আমাদের একটাই কাজ ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১টি বছর আমরা জয়বাংলা বলতে পারিনি। সেই সময় জামায়াত নামের একটি সংগঠন তাদের ছেলে সন্তানদের শিক্ষিত বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে তাদের প্রতিহত করতে হবে। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। তাদেরকে তুলে আনতে হবে। নয়তো আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এই দায়িত্ব নিতে হবে।

১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগীতায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ ইউনিট কমান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত নৌ-বিহার অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সকল মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক সহ প্রায় সাড়ে ১২’শ মানুষ উক্ত নৌ-বিহারে অংশগ্রহণ করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান বলেন, আপনারা যদি কোন দল না করে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে থাকেন তাহলে এখনো আপনাদের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আছি এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে আমরা থাকবো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আগে মুক্তিযোদ্ধারা টাকার অভাবে চিকিৎসার জন্য ওষুধ পর্যন্ত কিনতে পারতো না। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে মাসে ১০ হাজার করে সম্মানি ভাতা প্রদান করছেন। যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তত ওষুধের খরচ হয়ে যায়। আপনারা কেউ কেউ অন্য দল করলেও মুক্তিযোদ্ধা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। যতদিন এই সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্য কাজ করবে আমরা ততদিন এই সরকারকে সহযোগীতা করে যাবো।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার বাবা মরহুম একেএম শামসুজ্জোহা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন। সেই সময় মফিজুল চাচা সেই পদকটি গ্রহন করেছিলেন। তখন নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর একটি মডেল দিয়েছিলেন। মেডেলটি আমার মা রেখে দিয়ে আড়াই লাখ টাকা আমার কাছে দিয়ে বলছিলেন এই টাকা দিয়ে তুমি সম্পূর্ন হালাল ভাবে ব্যবসা করে ১০ লাখ টাকা হলে আমাকে জানাব। ১০ লাখ টাকা হওয়ার পর আমি মাকে জানিয়ে ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন আমাদের পরিবারের সব থেকে আপনজন তোমার বাবার সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যেককে সম্মাননা প্রদান করতে হবে। পরে ২০১৭ সালে আমি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের সহযোগীতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অনুষ্ঠান করে জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করতে পেরেছিলাম।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের সবার বয়স হয়েছে। ভবিষ্যতে তোমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে বন্দর উপজেলার কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ খুব দ্রুতই শেষ হবে। তোমাদেরকেই এসবের দায়িত্ব নিতে হবে। তোমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন করে রাখবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে হবে।

সেলিম ওসমান তাঁর বক্তব্যে নৌ-বিহার আয়োজনে সহযোগীতা প্রদানকারী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমই্এর দ্বিতীয় সহ সভাপতি অমল কুমার পোদ্দার, বাংলাদেশ ইয়ার্ণ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে এর সাবেক সহ-সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশেদ সারোয়ার সোহেল, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দিপক কুমার সাহাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমার বাবার বয়সী। বাবার সামনে কোন কথা বলা চলেনা। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যাতে করে আপনারা যেই স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ছিলেন আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি। আপনাদের অনুমতি পেলে আমি বাণিজ্যের রাজধানী খ্যাত সোনারগাঁয়ে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি মিলন মেলার আয়োজন করতে চাই।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, নামাজে দাড়ালে যেমন বাদশা ফকির থাকেনা। ঠিক আজকে তেমনটাই মনে হচ্ছে। সবাই আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জন্য। বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মবার্ষিকী মুজিববর্ষে এমন আয়োজন সত্যি ইতিহাস হয়ে থাকবে। যেমন ইতিহাস হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ। পৃথিবীর কোথাও মাত্র ৯ মাসের মধ্যে এতো বক্তপাতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস নাই।

সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমা এলাকা জুড়ে তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, আজকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান এর সহযোগীতায় আজকে এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও আমাদের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান মুক্তিযোদ্ধাদের সময় বিভিন্ন সময় প্রায় ৫ কোটি টাকার মত দিয়ে সহযোগীতা করেছেন। এমন নজির বাংলাদেশে আর কোথাও নাই।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে আবাল বৃদ্ধ, ছাত্রলীগ কর্মী, সহ নানা শ্রেনীর পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৪৮ বছরেও আমরা নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হতে পারিনি। আমাদের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রচেষ্টায় আমরা আজকে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রায় ৯৫০জন মুক্তিযোদ্ধা এখানে একত্রিত হয়েছি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। উনি ক্ষমতায় না আসলে আমরা সম্মানিত হতে পারতাম না। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা বঙ্গবন্ধুর কন্যার পাশে আছি থাকবো।

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করতে। সেই মোতাবেক আজকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়েছে। আমরা আপনাদের দোয়া চাই। যতদিন বাচবো আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে চাই।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কমান্ডার জুলহাস ভূইয়া, বন্দর উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার কাজী নাসির, রূপগঞ্জ উপজেলার কমান্ডার আমান উল্লাহ, আড়াই হাজার উপজেলার কমান্ডার কাজী ওয়াজ উদ্দিন, সোনারগাঁও উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমুখ।

প্রসঙ্গত মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এমপি সেলিম ওসমান নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সব সময় চেয়েছেন ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের প্রান্তরে যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন তাঁরা সকলেই ভাল থাকুক। নিজেরা স্বাবলম্বী হোক। সহযোগীতা চেয়ে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়। সেজন্য তিনি সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে তাদেরকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে গেছেন।

অব্যাহত এই চেষ্টার ধারাবাহিকতায় তিনি, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সদর ও বন্দর থানা এলাকার ২০০জন করে মোট ৩ বছরে ৬০০জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি টাকা আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করে তাদেঁরকে সমবায় ভিত্তিতে আত্ম নির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন। ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ১০০৩জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ সম্মননা ও সংবর্ধনা প্রদান করেন। বন্দর স্বল্পেরচর এলাকায় সমরক্ষেত্র-৭১’র জায়গা দখলমুক্ত করে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাঠ নির্মাণ করে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও আহম্মেদ হোসেন রোকনের চিকিৎসার ১ লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগীতা প্রদান।

শহরের দেওভোগ এলাকায় অসুস্থ্য অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন এর বাড়িতে গিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগীতা এবং মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন এর ইচ্ছা অনুযারী ব্যাংকের কাছে মর্গেজ থাকা তাঁর বাড়িটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অবমুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। একই দিন মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন এর অসুস্থ্যতার কথা জানতে পেরে সরেজিমনে তাঁর বাসায় গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। পরে তিনি মরহুম মোতালেব হোসেনের মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাবদ তার হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। বন্দর সোনাকান্দা এলাকার অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বাবুর চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেছেন।