আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ইস্যূতে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আগামী ২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদ-২০২০-২০২১ সালের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের বিরোধীতা করে আন্দোলনে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জের বিএনপির আইনজীবীরা। এর আগে বিএনপির আইনজীবীদের বিভক্তি দেখা গেলেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে তলবী সভার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিলে নেমেছেন বিএনপির আইনজীবীরা।

১২ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। দুপুরে আদালতপাড়ায় মিছিল শেষে সমাবেশ করে সিনিয়র আইনজীবীরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন এবং নতুন করে তলবী সভা ডেকে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বিএনপির আইনজীবীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সমিতির সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা ও অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন মাসুম, সাবেক আপ্যায়ণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট আলী হোসাইন, অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম মাসুম সহ অন্যান্য আইনজীবীরা।

কদিন আগেও এসব আইনজীবীদের মাঝে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ফরম বিতরণ নিয়ে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। প্রকাশ্যে বিএনপির আইনজীবীদের দুটি গ্রুপ মুখোমুখী অবস্থান করলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীদের মাঝে একতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা আদালতপাড়ায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।

এর আগে ৯ জানুয়ারি বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। ওই সময় অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া বিএনপির আইনজীবীদের নিয়ে একসঙ্গে মিছিল করেন। তবে আদালতপাড়ায় সারা বছরই বিএনপির আইনজীবীগণ রাজনীতিতে আলোচনা থাকেন। সারা বছর বেশ জোড়ালো আলোচনায় তারা অবস্থান করলেও কয়েক বছর ধরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। নির্বাচন আসলেই তারা ঐক্যবদ্ধ হোন এবং নির্বাচনে প্যানেল দিলেও তারা জয়ী হতে পারেন না। বিএনপির আইনজীবীরা দাবি করেন- এই আদালতে বিএনপির আইনজীবী বেশি। কিন্তু নির্বাচনে ভোটের ক্ষেত্রে তাদের ফলাফল ভাল হচ্ছেনা। যদিও ইতিপূর্বে অভিযোগ ওঠেছে- বিএনপির কিছু আইনজীবী সরকারি দলের সঙ্গে আতাত করে তাদের ভোট এদিকে সেদিক করছেন। কিন্তু তাদেরকে এখনও চিহ্নিত করতে পারছেন না বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা। এসব নিয়ে আবারো তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, ১২ জানুয়ারি রবিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২০২১ সালের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। ১২ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে এই তফসিল ঘোষণা করা হয়।

তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে পারবেন। ছুটির দিনেও খোলা থাকবে।

নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের যাচাই বাছাই ও প্রাথমিক বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারির সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০ জানুয়ারি সোমবার। ২৯ জানুয়ারি বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। ভোট গ্রহণ করা হবে আইনজীবী সমিতির নির্মাণাধীন বার ভবনের নিচ তলায়।

নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করতে প্রার্থীদের যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে সভাপতি পদে ১৫ বছর এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আইন পেশায় কোন আইনজীবীর ১২ বছর হতে হবে।

এছাড়াও কোষাধ্যক্ষ পদে আইন পেশায় ১০ বছর এবং আপ্যায়ণ সম্পাদক, লাইব্রেরী বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে ৫বছর আইন পেশায় নিয়োজিত থাকতে হবে। কার্যকরী সদস্য পদে কমপক্ষে ৩ বছর আইন পেশায় নিয়োজিত থাকতে হবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে কমিশন বরাবর সভাপতি পদে প্রার্থীকে দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদে ১০ হাজার টাকা, বিভাগীয় সম্পাদক পদে ৮ হাজার টাকা ও সদস্য পদে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুজ্জামানের কাছ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট আখতার হোসেন এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট মেরিনা বেগম, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম ও সুখচাঁদ সরকার।