বুড়িগঙ্গায় বাল্কহেড ডুবে ৪ শ্রমিকের মৃত্যু, নিহত পরিবারের পাশে ইউএনও

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বুড়িগঙ্গা নদীতে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ডুবে ৪জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এসময় বাল্কহেডের মাস্টার সহ দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

৩ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকাস্থ বুড়িগঙ্গা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। আর ঘটনার সংবাদ পেয়ে নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ডুবে যাওয়ার বাল্কহেড সহ নিহত ৪জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে বাল্কহেড ডুবে ৪জনের মৃত্যুর সংবাদে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদা বারিক, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফিন।

বাল্কহেড ডুবে নিহত হওয়া শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবারকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে নগদ ২০ হাজার করে টাকা ও দুটি করে কম্বল দেন ইউএনও নাহিদা বারিক। এছাড়াও তিনি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি নোঙর করা বাল্কহেড ডুবে ৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে নিহতের খোঁজখবর নেয়া হয়। পরে নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে নগদ ২০ হাজার করে নগদ অর্থ প্রদান সহ দুটি করে কম্বল ও খাবার দেয়া হয়। এছাড়াও লাশ গুলো বাড়িতে নিয়ে যেতে এ্যাম্বলেন্স এর ব্যবস্থা করা হয়। বুড়িগঙ্গা নদীটি কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার সিমানা হওয়ায় সেই থানা পুলিশ আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে লাশগুলো পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।

নিহতরা হলো- ঝালকাঠির নলছেটির কান্দেবপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে লুৎফর রহমান(৩৯), পিরোজপুরের কাউখালীর চাষেরকাঠি এলাকার আব্দুর রব তালুকদারের ছেলে মোস্তফা(৫৫), ফিরোজপুরের বটবাড়ির ছোট আরজি এলাকার রাশেদ হাওলাদারের ছেলে বাবু (১৮) ও বরিশালের বানাড়ীপাড়ার ইলুহার এলাকার মহিবুল্লাহ(৬০)। আহত হয়েছে বাল্কহেডের মাস্টার আমির হোসেন (৫৫) ও কুতুব উদ্দিন (২৯)।

বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়শনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বুড়িগঙ্গা নদীতে নোঙর করা একটি বাল্কহেড ডুবে ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ার সংবাদে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে নিহতের পরিবারের খোজখবর নেয়া হয়। তার পর কিভাবে লাশ তাদের বাড়িতে পৌছানো যায় সেই বিষয়ে প্রশাসনের লোকজনের সাথে আলোচনা করে এবং নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর নৌ-শ্রমিক আইনে নিহতের পরিবারকে দুই লাখ টাকা প্রদান করা সহ বাড়িতে লাশ নেয়া থেকে শুরু করে দাফন করা পর্যন্ত সকল খরচ বহন করবে কোম্পানী।

কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে আমার সিনিয়র অফিসারের সাথে আলোচনা করে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাশগুলো নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে কোন মামলা মোকদ্দমা করবে না বলে জানিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ কাজল মিয়া বাল্কহেডের মাস্টারের বরাত দিয়ে জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকাস্থ বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি বাল্কহেড পরিস্কার করার জন্য নদীর তীরে নোঙর করে রাখে এবং বাল্কহেড কিছু অংশ ছিদ্র করে দেয়। যাতে করে ময়লা গুলো বের হয়ে যায়। আর বাল্কহেডের সেই ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে আস্তে আস্তে নোঙর করা বাল্কহেড তলিয়ে গিয়ে ডুবে যায়। আর বাল্কহেডের থাকা ৬জনের মধ্যে নিচে থাকা ৪ শ্রমিক ঘুমিয়ে থাকার কারনে পানিতে ডুবে মারা যায়। আর বাল্কহেডের উপরে থাকা দুইজন তীরে আসতে সক্ষম হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ কাজল মিয়ার নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ডুবে যাওয়া বাল্কহেড হতে ৪ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশগুলো নিহতের পরিবারের মাঝে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুলিশ হস্তান্তর করেন।