সাখাওয়াতের উপর দায় চাপাতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন কালাম কামাল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কথিত কমিটির কার্যক্রম বাঁচাতে না পেরে এবার ওই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে গোজামিলের মনগড়া কমিটি গঠন করে নিয়ে এসে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামাল। ইতিমধ্যে আদালত তাদের এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।

এই মামলার বাদী গোলজার খান হলেন আবুুল কালামের ঘনিষ্ঠজন যাকে নিয়ে কালাম কক্সবাজার ভ্রমণেও যেতেন এক সময়। অথচ মামলার বাদী গোলজার খান আর কেন্দ্রে অভিযোগ দিচ্ছেন সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দিতে গিয়ে উল্টো কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরা খেয়েও যেতে পারেন কালাম ও কামাল। কারন তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে গোজামিলের মনগড়া দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কমিটি গঠন করিয়ে নিয়ে আসেন।

আবুল কালাম ও এটিএম কামাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাবর সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাাবি করা হয়। তবে তারেক রহমানের কাছে এই অভিযোগ পৌছাবার আগেই মিডিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারনে নেতাকর্মীরা বলছেন- মুলত সাখাওয়াতকে বিতর্ক করার জন্যই কালাম ও কামালের এই কাজটি। কারন কেন্দ্রে তারা অভিযোগ দিলে সেই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হলে কালাম ও কামালই উল্টো ফেঁসে যেতে পারেন। কারন কমিটি গঠন করা হয়েছে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত, কমিটির শীর্ষ পদে থাকা বেশকজন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির হয়ে রাজনীতি করছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছিলেন এমন লোকজনদেরকেও কমিটিতে রাখেন কালাম ও কামাল।

এদিকে মিডিয়াতে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন খানকে বহিষ্কারের আবেদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কথিত কমিটি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার জন্য সেই সাথে মূলদল সহ অঙ্গ সংগঠনের গ্রুপিং এবং দলের মহাসচিব এর বিরুদ্ধে মামলা করে দলকে আইনগতভাবে বেকায়দায় ফেলানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার কারণে অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে এই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করেছে ভুয়া এই কমিটি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ পত্রটিতে স্বাক্ষর করেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও এটিএম কামাল।

অন্যদিকে জানাগেছে, দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে মোকাবেলা বিবাদী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালকে মুল বিবাদী করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা ও গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলেও অভিযোগ করে ওই মামলা করা হয়।

মামলা দায়েরের পর বাদী গোলজার খান অভিযোগ করেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটিতে অল্প ক’জন নেতা স্থান পেলেও মহানগরের কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডের কোনো নেতাই পদ পদবি পাননি। এই ১০টি ওয়ার্ডের মূল দলের নেতাকর্মীরা দলীয় পদ পদবির ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। দলের জন্য প্রাণপন কাজ করলেও দলের নেতারা তাদের কোনো পরিচয় দিচ্ছেন না। আমাদেরকে পদ পদবি যেন দেয়া হয় সেজন্যই এ মামলা। আমরা তো জাগোদল থেকেই যুক্ত বিএনপির সঙ্গে।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটি গঠনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডকে জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা বিএনপির আওতাধীন এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন, সদর মডেল থানার আরও দুটি ইউনিয়নকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন- জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক সুবিধার বিষয়টি হিসেবে করেই দুটি কমিটি গঠন করা হয়।

অন্যদিকে এমন কমিটি নিয়ে বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে যুবদলের অপর অংশের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন। তারা দাবি করেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি জেলা যুবদলের আওতাধীন। এ নিয়ে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সহ বেশকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মহানগর যুবদলের নেতা মঞ্জুরুল হক মুছা। ২০ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি যেভাবে হয়েছে একইভাবে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করতে হবে।

কিন্তু রিজভীর এই নির্দেশনা মানেনি নারায়ণগঞ্জ যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার নেতাদের রেখেই মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে মহানগর ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের কমিটিও গঠন করা হয়। যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু ও মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলামকে রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড জেলা বিএনপিতে রাখা হয় যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পান। আবার জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রিজভীর নির্দেশনা মানা হয়।

এদিকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা।