নির্বাচনী মাঠ কায়সারের দখলে

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
কোন অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তার সিংহ প্রতীক বরাদ্ধের পর সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। এখানে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা রয়েছেন ব্যাকফুটে। মাঠ গুছাতেই পারেননি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাদের চেয়ে বেশি লোক সমাগম দেখা যাচ্ছে কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী প্রচারনায়। সোনারগাঁয়ের নির্বাচনী মাঠ এখন কায়সার হাসনাতের দখলে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সাংবাদিকদের বলেছেন, কোন অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা নেই। দলের উপর মহল থেকে আমাকে নির্বাচন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকছি এটাই কথা। সেই লক্ষ্যেই আমি দিন রাত প্রতিটি এলাাকায় যাচ্ছি।’

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সেতু পরিদর্শনে এসেছিলেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাযদুল কাদের। ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। আমি ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা আছেন তারা তো প্রত্যাহার করতে পারবেন না। তারা প্রেস কনফারেন্স করে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থনের ঘোষণা দিবেন। নতুবা আমরা পরে দলীয় ব্যবস্থা নিব।’

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সিংহ প্রতীকে লড়াই করতে যাচ্ছেন। গত ১০ ডিসেম্বর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়ার হাত থেকে সিংহ প্রতীক তুলে নেন কায়সার হাসনাত। ফলে এ আসনে মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার জয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এখানে লিয়াকত হোসেন খোকার জয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে এ আসনের বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর নেই মান্নানের পক্ষে।

যদিও ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ। গত ১৬ ডিসেম্বর সোনারগাঁয়ে জনসভা করে উপজেলা আওয়ামীলীগ। ওই জনসভায় বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি একেএম শামীম ওসমান। ওইদিন শামীম ওসমান বলেন, আমার ভাতিজা কায়সার হাসনাত আশা করছি সে এই মঞ্চে এসে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাইবে। সে আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। সে আওয়ামীলীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়ে যাকে সেটা আমরা চাইনা। তবে শামীম ওসমান এমন বক্তব্য সহ আরও কিছু বক্তব্য কায়সার হাসনাতের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কে কি বললো সেটা শোনার সময় এখন আর নাই। নির্বাচন করছি নির্বাচন করব এবং শেষ পর্যন্ত থাকবো।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।

এবার মোশারফ হোসেনও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। মোশারফ হোসেন এখন মাঠে নেমেছেন ভাতিজা কায়সার হাসনাতের পক্ষে। মোশারফ হোসেন একটি সমাবেশে বলেছেন, এমপি খোকা আপনি বাড়ি গিয়ে ঘুমান। সোনারগাঁয়ে আপনার ১০ পারসেন্ট ভোটও নাই। আপনি ১০ পারসেন্ট ভোট পেলেই আমরা ধরে নিব আপনি এমপি হয়ে গেছেন। তাই খেলা বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমান। আপনি যে খেলা খেলতে চান সেই খেলা আমরা ৬০ বছর আগেই শেষ করে এসেছি।’

এ আসন থেকে জাতীয়পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন এরশাদের পালিত মেয়ে ও কেন্দ্রীয়মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। তবে তার মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি আপীল করেন। আপীলেও তার মনোনয়ন বাতিল করা হলে তিনি এখন আর নির্বাচনী আলোচনায় নেই। কারো পক্ষেই এখনও তিনি মাঠে নামেননি। সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতিও ছিলেন তিনি। গত ২০ নভেম্বর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজকে কেন্দ্র করে মৌসুমীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামাল দায়ের করে এমপি খোকা অনুগামী উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি ফজলুুল হক মাস্টার। ওই মামলার পর দিন সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টি থেকে মৌসুমীকে বাদ দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা জাতীয়পার্টি।