ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতৃত্বের অপেক্ষায় সোনারগাঁবাসী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার রাজনীতিতে তিনটি দলেই সিনিয়র নেতাদের নিয়ে রয়েছে বিরোধ বিভক্তি সহ বেশকজনের বিরুদ্ধে নানা ধরণের ঘটনা। কারো কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লালনেরও অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন সোনারগাঁবাসীর ঘাড়ে। সোনারগাঁবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন অতীতে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসা ব্যক্তিরা এবং যারা উপজেলার রাজনীতির নেতৃত্ব দেন।

কিন্তু ক্লিন ইমেজের অনেকেই রাজনৈতিক মারপ্যাচে ওঠে আসতে পারেনি নেতৃত্বে। অনেকেই চেষ্টা করছেন। আবার অনেকেই নোংরা রাজনীতির ছায়াতল থেকে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই পড়েছেন কালো টাকার থাবায় মাইনাস ফর্মূলায়। কিন্তু সোনারগাঁয়ের মানুষ চায় ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব যাদের ভেতরে থাকবে সততা নিষ্ঠা এবং জনগণমনা, চেয়ার টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে যারা সোনারগাঁয়ের মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে না। তবে ্এত্তসব হতাশার মাঝেও বেশকজন তরুণ নেতৃত্ব এখন সোনারগাঁবাসীর আশার আলো। যাদের অনেকেই নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং অনেকেই সুযোগ পেলে সোনারগাঁবাসীর জন্য সঠিক নেতৃত্ব দিবেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ইতিমধ্যে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে পরিচিত পেয়েছেন এএইচএম মাসুদ দুলাল। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। অনেক সম্ভাবনাও তার দিকে উকি দিয়েছিল।

অনন্যা হুসাইন মৌসুমী। তিনি জাতীয় মহিলা পার্টির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ জেলায় তাকে এরশাদের পালিতা কন্যা হিসেবেই তাকে চিনেন। ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেও নিজ দলের নেতা লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে পেরে ওঠতে পারেননি। সোনারগাঁয়ের কোমর ভাঙ্গা জাতীয়পার্টিকে সোজা করেছিলেন মৌসুমী। কিন্তু এখানে টানা দুইবার এমপি হয়ে গেলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। প্রথমবার এমপি হওয়ার পর মৌসুমী তার কার্যালয়ে হামলার শিকার হন। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার আগে মৌসুমীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন ছাত্র সমাজের নেতা ফজলুল হক মাস্টার। বর্তমানে সোনারগাঁয়ে মৌসুমীর যাতায়াত কম। তবে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সোনারগাঁয়ে আলোচনায় আসেন ড. সেলিনা আক্তার। তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। ক্লিন ইমেজের এই নেত্রী গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে গত নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশিরা সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দিলেও এখনও সেলিনা আক্তার রয়েছেন বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয়। ভবিষৎের বিষয়ে তিনি হাল ছাড়েননি। তার পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশা উপজেলা আওয়ামীলীগের মুল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। নিয়মিত সোনারগাঁয়ে পদচারণায় রয়েছেন সেলিনা আক্তার।

গাজী মজিবুর রহমান। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতি করেছেন। যুবলীগের সভাপতি পদে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কখনও সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি ভুমিদস্যূতার মত অভিযোগ ওঠেনি। যে কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষের কাছে তিনি এখনও ক্লিন ইমেজের একজন নেতা। বিএনপি জামাত সরকার আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকারও হয়েছিলেন তিনি। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে মার খেয়েছেন। বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসার পর তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। তবে এসবের অবদানে তাকে সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থন দেয়া হয়। কিন্তু আওয়ামীলীগের বিরোধের কারনে হেরে যান তিনি। পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে হলেও তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তবে সোনারগাঁয়ে তার ব্যাপক কর্মী সমর্থক রয়েছে।

অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির টানা দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি। এর আগেও তিনি দুইবার সেক্রেটারি সহ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের ১২’শ আইনজীবীদের কাছে তিনি ডায়নামিক আইনজীবী লিডার। আইনজীবীদের জন্য ৮তলা বিশিষ্ট ডিজিটাল বার ভবন নির্মাণের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। সোনারগাঁয়ের এই কৃতি সন্তান এখনও সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হননি। তবে তার মত একজন আইনজীবী নেতাকে সোনারগাঁয়ের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন সোনারগাঁয়ের মানুষ। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদেও রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ও একেএম সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন এই আইনজীবী।

এ ছাড়াও ঢাকায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছোবহান খন্দকার এখন নিয়মিত সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বর্তমানে ঢাকায় একটি থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবস্থায় কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার স্কাউটের খ্যাতি অর্জন করেন এই আইনজীবী। তার লেখা বিভিন্ন আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই সহ আন্তর্জাতিক জার্নালে আর্টিক্যাল প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার মালিবাগ আবজর গিফারী বিশ^বিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতায়ও রয়েছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছোবহান খন্দকার। তিনি ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায়ও রয়েছেন। রয়েছেন ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্যও। তিনি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতিতে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিন শাহজাহানপুুর থানা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তিনি দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ আদালতে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী তিনি। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি এলাকায় এখনও তার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা তাকে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে দেখতে চান। তবে সোনারগাঁয়ে রাজনীতির বর্তমানে পরিস্থিতিতে এই সাদা মনের আইনজীবী নামতে চান না। তবে তিনি পরিকল্পনা করছেন সোনারগাঁয়ের মানুষের জন্য কিছু করার। সেই স্বপ্ন দেখছেন এখনও।

অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিএনপি জামাত সরকার আমলে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলনে ছিলেন তিনি। পুলিশ আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ হত্যা মামলার আসামিও হয়েছিলেন এই আওয়ামীলীগ নেতা। এখনও নিয়মিত সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।

অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়কক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সোনারগাঁও পৌরসভার গত নির্বাচনে তিনি নৌকাপ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়াই করেছিলেন। জয়ের কাছাকাছি গিয়েও দলীয় বিরোধের কারনে তিনি হেরে যান। তিনি সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে এখনও সক্রিয় রয়েছেন।

অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি সক্রিয়। ক্লিন ইমেজের এই নেতা রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে তেমন একটি সক্রিয় না থাকলেও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছিলেন। মাঠের রাজনীতি তিনি গুছিয়ে নিয়েছেন। বিএনপির বলয় ভিত্তিক রাজনীতিতে তিনি সুবিধা করতে পারেননি।

আজিজুল হক আজিজ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা। ২০১৪ সাল থেকে তিনি সোনারগাঁয়ের বিএনপির রাজনীতিতে মাঠে নামেন। তবে দলীয় পদ পদবী তার ভাগ্যে জুটেনি। এখনও তিনি রয়েছেন রাজনীতিতে। বিএনপির রাজনীতিতে বেশ আলোচিত এই নেতা। তিনিও বিএনপির গ্রুপিং এর কারনে পোক্তভাবে দাড়াতে পারেননি।