দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন এমপি সেলিম ওসমান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা উন্নীত করতে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের ধীরগতি, কাজ আটকে যাওয়া সহ বিদ্যমান সকল সমস্যা এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষের আকাঙ্খা মেডিকেল কলেজের দাবির কথা জানাতে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর শরনাপন্ন হবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসামন। এ বিষয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিদ্যমান সকল সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় করনীয় ও দাবী দাওয়া সহ আগামী ১৫ নভেম্বর এমপির কাছে আবেদন জমা দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

২২ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডক্টরস ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্যোগে হাসপাতালটির ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এমপি এসব কথা বলেন। বক্তব্য শেষে কেক কেটে হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

এর আগে সভাপতির বক্তব্যে হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডাক্তার আবু জাহের হাসপাতালের বিদ্যমান সমস্যাবলীর কথা তুলে সংসদের সদস্যের কাছে সেগুলো সমাধানের দাবী জানান। আবু জাহের বলেন, হাসপাতালের প্রবেশ মুখে অনেক দোকানপাট রয়েছে যার জন্য হাসপাতালে রোগীদের সমস্য সহ নিরাপত্তা জনিত অনেক সমস্যা দেখা যায়। হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে অভ্যন্তরে একটি আনসার ক্যাম্প স্থাপন করা, রোগীর কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে ২০০জন চিকিৎসকের পদ নিশ্চিত করা বর্তমানে যেখানে মাত্র ৫৩ জন চিকিৎসক রয়েছে, এছাড়াও হাসপাতালটিতে বার্ণ, ডায়লাসিস, হার্ট সহ প্রয়োজনী বিভাগ চালু করা, নতুন আধুনিক ভবনটির নির্মাণ কাজের ধীরগতি, হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য একটি বাসের বরাদ্দ সহ হাসপাতালটিকে একটি পূণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার দাবী তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন সে সকল ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যের সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করেন ডাক্তার আবু জাহের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, অন্যান্য জেলাগুলোতে দেখা যায় হাসপাতালের বারান্দাতেও রোগীর জায়গা হয়না। আর আমাদের এখানে অনেক সময় রোগীর সংকট দেখা যায়। এর মূল কারন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরে এবং হাসপাতালের আশেপাশে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এসকল ক্লিনিকের নিয়োগকৃত দালালরা হাসপাতাল থেকে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে দালালদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এমন অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করন অবশ্যই জরুরি এ ব্যাপারে মাসিক

সভায় হাসপাতালের ভেতরে একটি আনসার ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত রেজুলেশন ভুক্ত করা হয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলকে ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা নিয়ে আনসার ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করছি। পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষনের জন্য যে ৬৩টি সিটি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়ে ছিল সে গুলো আগামী মাস থেকে সবগুলোই পুণরায় চালু হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি।

হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক সিদ্দিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি হাসপাতালের জন্ম লগ্ন থেকে এখানে চাকরিরত রয়েছেন। এই হাসপাতালের সকল সমস্যাবলী এবং তা সমাধানে কি কি করনীয় হতে পারে তার সবই আপনার নখ দর্পনে। এতোদিন নারায়ণগঞ্জে চাকরি করার পর আপনার মাঝে অবশ্যই নারায়ণগঞ্জের প্রতি নারায়ণগঞ্জের মানুষের প্রতি ভালবাসা জন্মে থাকে তাহলে আপনি সকল সমস্যার কথা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আমার কাছে লিখিত আকারে দিবেন। আপনার কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নাই। আমি আপনার পাশে আছি। আর যদি না দেন তাহলে বলবো আপনি অন্যত্র বদলী নিয়ে চলে যাবেন।

তিনি আরো বলেন, এখানে যারা চাকরি করতে আসেন দেখা যায় উনারা স্থানীয়দের ভয়ে অনেক সময় কঠোর হতে পারেন না। প্রয়োজনে এই হাসপাতালে স্থানীয় ব্যক্তিদের কোন কাজের টেন্ডার দেওয়া হবেনা। আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউ হাসপাতালে কোন স্লাপাই কাজ করতে পারবে না। যদি কেউ করে থাকে এবং সেটা প্রমানিত হয় তাহলে তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হবে।

হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম ৩৩ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রথম ডাক্তার ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। আমি বলবো এ আয়োজন আরো বড় পরিসরে হওয়া দরকার ছিল। তবে বলবে সকলের প্রচেষ্টায় এবার শুরু হয়েছে। এই হাসপাতালের জন্য রনদা প্রসাদ সাহা জমি দান করে ছিলেন যার ফলে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে প্রয়াত নাসিম ওসমানের মাধ্যমে জাপানি অর্থায়নে হাসপাতালটি নির্মিত হয়ে ছিল। অথচ আমরা আরপি সাহাকে যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। উনার নামে একটি স্মরণ সভাও করিনি। আগামী বছর এ অনুষ্ঠান আরো বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে এবং সেটা প্রতিবছর পালন করা হবে। গত ৩৩ বছরের ভূলত্রুটি শুধরে নিয়ে হাসপাতালটি নতুন করে আবারো যাত্রা শুরু করবে। আগামী ২০২০সালে জানুয়ারী মাসটি আমরা সেবার মাস ঘোষণা করে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করবো। মাসে অত্যন্ত ১ থেকে ২ বার বিকেল ৩টার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আমি বিএমইএ এবং স্বাচিপ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান রাখলাম।

৫০০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজের ধীর গতি ও থমকে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে আমার জন্য লজ্জাজনক। এমনকি এটা সরকারের জন্য ও লজ্জার বিষয়। আপনারা সকল সমস্যাবলি এবং দাবী গুলো আমাকে প্রস্তাবনা দেন। আমি সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় যাবে। জানতে চাইবো কেন নির্মাণ কাজের এমন ধীর গতি কেন নির্মাণ কাজ আটকে আছে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বিষয়টি অবহিত করবো। ইতোমধ্যে আমি নারায়ণগঞ্জে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। এখানে আমাদের জায়গার কিছু সমস্যা রয়েছে। যদি সরকার আমাদের হাসপাতালের পাশে জায়গাটি হাসপাতালের নামে বরাদ্দ দেন এবং ৫০০ শয্যা কাজ সম্পন্ন হয় তখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষে জোড়ালো দাবী করতে পারবো মেডিকেল কলেজ দেওয়ার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সব জেলায় হলে আমাদের নারায়ণগঞ্জে হবেনা কেন। অবশ্যই এ থেকে নারায়ণগঞ্জ বঞ্চিত হবেনা।

হাসপাতালের মেডিকেল চিকিৎসক শামসুদ্দোহা সঞ্চয় এর সঞ্চালনা ও হাসপাতালের তত্ত্ববধায় ডাক্তার আবু জাহের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীস সাহা, স্বাধীন চিকিৎসক পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দার, ডক্টর ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম, পিএ সিদ্দিকুর রহমান সহ অন্যান্যরা।

প্রসঙ্গত, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালটি ১৯৮৬ সালে সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের হাত ধরে জাপানী অর্থায়নে খানপুর ২০০ শয্যা হাসপাতালটি নির্মিত হয়। পরে প্রয়াত নাসিম ওসমানের মাধ্যমে ২০১৩ সালে হাসপাতালটি ২০০ শয্যা থেকে ৩০০ শয্যায় উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের মাধ্যমে হাসপাতালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক বহুতল ভবনের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে।