আড়াইহাজারে ডাকাত আতংকে প্রহরা বসিয়েছে এলাকাবাসী

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত সাত দিনে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল বসতবাড়িতে ঢুকে স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিচ্ছে। বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। শীতের তীব্রতায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। নিজেদের জানমাল রক্ষা করতে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। প্রতি রাতে ডাকাতি রোধে থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে পাহাড়া তদারকি করছেন থানা পুলিশ।

সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর রবিবার রাত আড়াইটার দিকে ২০-২৫ জনের ডাকাত দল উচিৎপুরা ইউনিয়নের ভৈরবদী এলাকায় রাজন রায়ের বাড়িতে হানা দেয়। তাঁর ভবনের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তাদের বেঁধে রেখে ৬০ হাজার টাকা, সাড়ে ছয় ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, পাঁচ ভরি রুপা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য মালপত্র লুট করে।

এর পর তাঁর ভাই দয়াল রায়ের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। পরিবারের লোকজনকে জিম্মি করে এক ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। ডাকাত দল চলে যাওয়ার সময় পরিবারের লোকজন ডাক-চিৎকার করলে দয়াল রায়, তাঁর ভাগনি রাজন রায়, ভাগনি জামাই সুজন রায় ও প্রতিবেশী সিয়াম হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে পাশের স্বর্ণকার নিতু রায়ের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে ডাকাল দল। এ সময় ডাকাতির ঘটনা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগের দিন শনিবার রাত ১২টার দিকে গ্রামীণ টেক গার্মেন্ট শ্রমিকদের কারখানার গাড়ি দিয়ে খাগকান্দা ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে শ্রমিকরা হেঁটে বাড়ি যাওয়ার সময় ‘মনির হোসেন মাদ্রাসা মোড়ে’ ১০-১২ জনের ডাকাত দলের কবলে পড়েন। অস্ত্রের মুখে শ্রমিকদের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুটে নেওয়া হয়।

শ্রমিক মাহমুদা আক্তার জানান, কারখানার গাড়ি থেকে নামার পর হেঁটে বাড়ি যাওয়ার সময় মাদ্রাসার সামনে তাদের ঘিরে ধরে মুখোশ পরা ডাকাত দল। বড় বড় দা উঁচিয়ে যার কাছে যা আছে দিয়ে দিতে বলে। প্রাণের ভয়ে সবার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা দিয়ে দেয়।

গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের খিরদাসাদী এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুর রব মিয়ার বাড়িতে হানা দেয় ১৫-২০ সদস্যের ডাকাত দল। ভুক্তভোগী আব্দুর রব জানান, ডাকাত দল বাড়ির কলাপসিবল গেট ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে। এর পর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ সাত লাখ ২০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তাঁকে ও তাঁর টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক আব্দুল মিয়াকে কুপিয়ে জখম করে।

আহত শ্রমিক আব্দুল মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ব্যবসায়ী আব্দুর রব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডাকাতির সময় তাদের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন থানায় খবর দিলে টহল পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসে। ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়, এক পর্যায়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ডাকাতদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। কোনো ডাকাতকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের ভাষ্য, সোমবার সুজন মিয়া নামে এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। ডাকাতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। টহল কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতরা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় পাহারা দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী।