সান নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিরোধের জের ধরে বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে পিটিয়ে বিবস্ত্র করে দেয় সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু সহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ডন বজলু সহ ১৬ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
৮ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো: আবু শামীম আজাদের আদালত আসামীদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগের দিন ৭ আসামীরা আত্মসমর্পন করে জামিনের প্রার্থনা করলে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগের দিন ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার আদালতে কাছে আত্মসমর্পন করেন আসামীরা। আদালত মূলনথী প্রাপ্তি সাপেক্ষে সোমবার শুনানির দিন ধার্য্য করেন। এদিন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত আসামীদের জামিন প্রদান করেন।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাসুদ রানা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, আসামীরা হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে ছিলেন। জামিনের সময় শেষ হলে তারা ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পন করেন। কিন্তু আদালত মূল নথি প্রাপ্তি সাপেক্ষে সোমবার শুনানির দিন ধার্য্য করেন। আজ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত আসামীদের জামিন প্রদান করেন আদালত।
অন্যদিকে এই ঘটনা সুত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভার হোলিংয়ের ঠিকাদারি কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক লীগের নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হাজী আলাউদ্দিন। আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারি কাজ চালু করতে এসে গত ২৯ জুন দুপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেটের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ে লাঞ্ছিত হন আতাউর রহমান মুকুল। আতাউর রহমান মুকুলের বিবস্ত্র করা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মুকুলের বিবস্ত্র ছবি ছিল দিনের টক অব দ্য নারায়ণগঞ্জ।
ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কুঁড়িপাড়ায় হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভার হোলিং (শাটডাউন) পরিষ্কারের কাজ পায় আওয়ামীলীগ নেতা হাজী আলাউদ্দিন। দ্বিতীয় হয় স্থানীয় বিএনপির আরেক নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের গ্রাম কুতুবপুরের বাসিন্দা বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু সে সময় জানান, এ কাজের টেন্ডার হয়। আতাউর রহমান মুকুল আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আলাউদ্দিনের পক্ষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আসেন। তাকে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিনকে সহযোগিতা না করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা অনুরোধ জানান; কিন্তু তিনি কথা না শুনে তার পক্ষে (আলাউদ্দিন হাজী) একটি মাইক্রোবাসে করে কাজটি চালু করতে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে আসেন। এ সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী আলাউদ্দিনের কয়েকজন আত্মীয়ও তার সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় বিএনপি নেতা ডন বজলুর নেতৃত্বে বন্দর ও কুতুবপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুকুলের সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। একপর্যায়ে মুকুল কাজ চালু করা হবে এমন কথা জানালে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে মুকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। পরে তাকে মহানগরীর সিলভার ক্রিসেন্ট নামে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।