আসন বিন্যাসে ধানের শীষ প্রত্যাশীদের উলট-পালট সমীকরণ

সান নারায়ণগঞ্জ

২০০৯ সালের পর আবারো নারায়ণগঞ্জে আসন বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন খসড়া প্রকাশও করেছে। আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে যৌক্তিক আপত্তি দাখিলের জন্য আহ্বানও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান এই বিন্যাসে উলট-পালট হয়েছে বিএনপির ধানের শীষ প্রত্যাশী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি। নতুন করে ভোটের হিসেব নিকেশ শুরু করেছেন তারা। সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থীরাও এক আসন ছেড়ে অন্য আসনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। অনেকেই স্থির করতে পারছেন না কে কোন আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যদিকে যেমন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বলছেন জেলার ৫টি আসন থেকেই তার নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। দল যেখানে দিবে সেখানেই তিনি নির্বাচন করবেন। অর্থাৎ তিনি তার আসন নিয়ে চূড়ান্তভাবে জানাতে পারেননি। এ রকম অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কে কোন আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। আসন বিন্যাসে অনেক প্রার্থীর উপর অতিরিক্ত চাপ যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে চাপ কমে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দিগুন হয়ে ওঠেছে। যেমন ফতুল্লা থানাধীন ৫টি ইউনিয়ন ও সদর থানাধীন ২টি ইউনিয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন চুড়ান্ত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমের সম্ভাবনা বেড়েছে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি আসনে পুণরায় বিন্যাস করা হয়েছে। যেখানে রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ ও আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-২ আসন বহাল রাখা হয়। তবে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন গঠনে বিন্যাস করা হয়। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এবং সদর থানাধীন দুটি ইউনিয়ন ও ফতুল্লা থানাধীন ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিন্যাস করা হয়। এর আগে ২০১৪ সাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এবং নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে নারায়ণঞ্জ-৫ আসন নির্বাচনী এলাকা ছিল। যদিও ২০০৯ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন গঠিত হয়েছিল। একই সালে শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এভাবে সন্নিবিসিত থাকলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন হবে বিএনপির ধানের শীষ প্রত্যাশী হেভিওয়েট প্রার্থীদের তুমুল লড়াই। কারন সিটি কর্পোরেশন আসনে এমপি মনোনয়ন না পেলেও পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়ার সুযোগ থাকছে। এই সুযোগ সম্ভাব্য প্রার্থীরা হাতছাড়া করবে না। সিদ্ধিরগঞ্জের ভোট ব্যাংক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন গিয়াসউদ্দীন। ২০১৬ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের জন্যও থাকছে সেই সুযোগ। এখানে আছেন বিএনপির সাবেক ৪বারের এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামও।

একই আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ। এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহামুদও। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও নাসিকের ৪ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনিও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন চাওয়ার দৌড়ে আছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুও। কারন এই আসনে এমপি মনোনিত না হলেও পরবর্তীতে মেয়র নির্বাচনের সুযোগ থাকছে সবার ক্ষেত্রে। হেভিওয়েট প্রার্থীদের ছড়াছড়ির কারনে এই আসনে মনোনয়ন লড়াই হবে বেশ জোরেসোরে।

অন্যদিকে বন্দর উপজেলাকে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করায় নির্বাচনী চাপ বাড়ছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের উপর। কারন তাকে বন্দর উপজেলায় নতুন করে যাতায়াত ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যদিও সোনারগাঁও উপজেলায় তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ওদিকে স্বস্থিতে আছেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তার নির্বাচনী এলাকায় শক্তিশালী প্রতিযোগী কিংবা প্রতিদ্বন্ধি তেমন নেই বললেই চলে। যদিও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু এখান থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী দল থেকে আছেন বহিষ্কৃত। দলে ফিরতে পারলে সুযোগ থাকছে তারও। থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভুঁইয়া আগে থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।