আবারো টার্গেটে সোনারগাঁয়ের সেলিম হোসেন দিপু!

সান নারায়ণগঞ্জ

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের একান্ত বিশ্বস্থ ও বিএনপির নিবেদিত কর্মী সেলিম হোসেন দিপু। সেলিম যুবদল, কৃষকদল ও মৎস্যজীবী দলে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। আছেন উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক পদে। রাজনীতির সঙ্গে সমানতালে মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন নিষ্ঠার সাথে। সোনারগাঁয়ে মান্নানের রাজনৈতিক অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। আর এই পাকাপোক্ত অবস্থানে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছেন সেলিম হোসেন দিপু। সেই মান্নানের রাজনৈতিক অবস্থানকে দূর্বল করতে হলে সবার আগে মান্নানের পাশ থেকে সরাতে হবে সেলিম হোসেন দিপুকে। এ কারনে মান্নানবিরোধীদের এমন ষড়যন্ত্রে ও চক্রান্তে বারবার টার্গেটে পরিনত হয়েছেন সেলিম হোসেন দিপু।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর দলের কঠিন সময়েও বারবার চক্রান্ত ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন সেলিম। ৫ আগস্টের পর থেকে একাধিকবার সেলিমকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চলেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক ক্ষেত্রে সেলিমের বিরুদ্ধে মান্নানের কানভারী করার চেষ্টাও করেছেন। এবার সেলিমকে দমাতে ডাকাত দলের দুই সর্দারের উপর ভর করেছে মান্নানবিরোধীরা। সোনারগাঁয়ের বারদীর চিহ্নিত ডাকাত সর্দার হাবু ডাকাত ও নূরা পাগলা ডাকাত দলের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে বক্তব্য দেয়ায় সেলিম হোসেন দিপুর বিরুদ্ধে ভাড়ায় অসহায় নারী পুরুষ নিয়ে মানববন্ধনের নামে ফটোসেশন করেছে হাবু ডাকাত গং। ডাকাত দলের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে কথা বলতে গিয়ে এখন বিপাকে সেলিম। তিনি ডাকাত দলের হুমকি ধমকিতে বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করেছেন এবং করেছেন সংবাদ সম্মেলন।

রাজপথের নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে ওঠে আসা সেলিম হোসেন দিপু। স্থানীয় সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান হয়েও নিরেট একজন সাধারণ মানুষের মত চলাফেরা তার। অহমিকা অহংকার দাম্ভিকতা তার দ্বারে কাছেও নাই। দলের জন্য অঢেল ত্যাগ স্বীকার করে আসলেও নিজেকে বিএনপির একজন সামান্য কর্মীই মনে করেন তিনি। সেই বিএনপির একজন সামান্য কর্মীকেই টার্গেট করেছে চক্রান্তকারীরা। বিএনপির রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় করতে বারবার তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা আরো বলেন, বিভিন্ন কারনে দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে বেশকটি চক্র ষড়যন্ত্র করে আসছে। এর মুল কারন সেলিম হোসেন দিপু আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিশ্বস্ত কর্মী। মান্নানের নির্দেশনায় কাজগুলো সম্পন্ন করার কারনে সকলেই তাকে পিএস সেলিম নামে সম্বোধন করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে তার পরিচিতিও পিএস সেলিম হোসেন দিপু নামে।

মান্নানের পুত্র জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীব এ প্রতিবেদকের কাছেও স্বীকার করেছেন, “সেলিম হোসেন দিপুকে আমরা আমাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করি।” নেতাকর্মীরা বলেন, আজহারুল ইসলাম মান্নানের শক্তিকে দূর্বল করার লক্ষ্যেই সেলিম হোসেন দিপুর বিরুদ্ধে বারবার এমন চক্রান্ত করা হয়। মুলত যেসব চক্রান্তকারীরা মান্নানের শক্তিকে দুর্বল করতে চেষ্টা করছেন এবং যারা মান্নানবিরোধী ও মান্নানের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত ষড়যন্ত্রকারী মুলত তাদের টার্গেটে পরিনত হয়েছেন বারবার এই সেলিম হোসেন দিপু।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১/১১ এর সময় থেকে সেলিম হোসেন দিপু আজহারুল ইসলাম মান্নানের ঘনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। উপজেলা বিএনপির প্রতিটা নেতাকর্মীদের মুখে সেলিম হোসেন দিপুর নামটি সুপরিচিত। বিগত সাড়ে ১৫ বছর সেলিম হোসেন দিপু সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা মামলা নির্যাতনের বিষয়ে অবগত। কারন মান্নানের নির্দেশনায় সেলিম হোসেন দিপু নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনজীবীর কাছে দৌড়ানো, কাগজপত্র সরবরাহ করা, কারাবন্দী নেতাকর্মীদের বাসায় মান্নানের বার্তা ও শুভেচ্ছা উপহার পৌছে দেয়া, প্রতিটি ঈদে কারাবন্ধি নেতাকর্মীদের বাসায় মান্নানের শুভেচ্ছা উপহার পৌছানো, জেলখানায় নেতাকর্মীদের জন্য খরচ পাঠানো, জেলখানার ভেতরে নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখা, জামিনের জন্য নারায়ণগঞ্জ কোর্ট থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত দৌড়ানো, মামলার নথিপত্র নিয়ে দৌড়ানো, জামিননামা নিয়ে কোর্ট থেকে জেলখানায় পৌছানোর ব্যবস্থা করা, জেলগেটে নেতাকর্মীদের রিসিভ করা, নেতার্মীদের রিমাণ্ডে নেয়া হলে থানায় নেতাকর্মীদের গারদে খাবারের ব্যবস্থা করা সহ হাজারো রকমের কাজগুলো করেছেন সেলিম হোসেন দিপু, যা লিখে বলে শেষ করা যাবে না।

মান্নানের নির্দেশনায় আধিষ্ট হয়ে এসব হরেক রকম কাজগুলো সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য কাজ সেলিম হোসেন দিপু। শুধু এসবই নয়, দলের প্রতিটা কর্মসূচিতে ব্যানার ফ্যাস্টুন তৈরি করা, গাড়ি ভাড়া করা, নেতাকর্মীদের জমায়েত করানোর ব্যবস্থা, নিরাপদ স্থান নির্ধারণ করা, নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে গোপনে গিয়ে উপস্থিত করানো সহ এসব পুরো কাজগুলো করেছেন সেলিম হোসেন দিপু। সরকারের কঠোর ভুমিকার সময়ও নেতাকর্মীদের নিয়ে কখনো নারায়ণগঞ্জে কখনো ঢাকায় সমাবেশগুলোতে গোপনে নেতাকর্মীদের নিয়ে জমায়েত হয়েছেন তিনি। রাতভর নেতার্মীদের নিয়ে বনে বাদারে জঙ্গলে ঘুমিয়েছেন, আবার ভোর হলেই দলের কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে কিংবা ঢাকায়। এভাবে হরতাল অবরোধ বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে আবার নেতাকর্মীদের যার যার মত করে নিরাপদে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং অনেক নেতাকর্মীদের নিয়ে আবার রাতের আধারে বনে বাদারে জঙ্গুলে ঘুমিয়েছেন।

৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পূর্বে জুলাই মাসব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনেও সরব ছিলেন সেলিম হোসেন দিপু। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার আগে থেকেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড ও সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর এলাকায় ছাত্র জনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ওই সময় মান্নানের নির্দেশনায় সেলিম হোসেন দিপু আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি সরবত ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে হাতে লাঠিসোটা হাতে আন্দোলনও করেছেন সমানতালে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ পর্যন্ত রাজপথে থেকেছেন সেলিম। গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে হরতাল অবরোধ পালন করতে গিয়ে নদীর পাড়ে, বন বাদানে জঙ্গলে ঘুমিয়েছিলেন সেলিম। তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে ছাত্রদল নেতা সামিকে নিয়ে জঙ্গলে নদীর পাড়ে ঘুমানোর দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশিত হলে তা নিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

করোনাকালে সেলিম হোসেন দিপু কর্মকাণ্ড ছিল আরো চোখে পড়ার মত। মান্নানের খাদ্য সামগ্রী উপজেলার অসহায় দুস্থ পরিবারের মাঝে নিজে কাধে বস্তা নিয়ে পৌছে দিয়েছেন। যখন ধান কাটার জন্য কৃষকেরা শ্রমিক পাচ্ছিলোনা তখন কৃষকদলের, মৎস্য দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন মান্নানের নির্দেশনায় সেলিম হোসেন দিপু।

এসব কর্মকাণ্ডগুলো দলের জন্য এবং মান্নানের নির্দেশনায় আধিষ্ট হয়ে বিচক্ষণতার সহিত কাজগুলো করতে পারায় মান্নানের বিশ্বস্ত কর্মীতে পরিনত হোন সেলিম। কেউ কেউ মনে করেন সেলিম হোসেন দিপু তার দক্ষতায় কাজকর্মে মান্নানের শরীরের একটা অংশে পরিনত হয়েছেন তিনি। সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নানান বিষয়ে মান্নান পিএস সেলিম হোসেনের কাছ থেকেও খোঁজখবর নেন। আর এতেই সেলিম হোসেন দিপুকে নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ শুরু হয়। অনেকে মনে করেন সেলিম ওসমানের কথায় মান্নান অনেকের পদ আটক রেখেছেন, অনেককে বড় পদে বসাচ্ছেন না। কিন্তু সেলিম হোসেন দিপু এসবের দ্বারে কাছেও নাই। মান্নান তার নিজস্ব আরো অনেকের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে এবং অনেকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন। সেলিম হোসেন দিপু কখনও মান্নানের কাছে কারো বিরুদ্ধে কানপড়া দেন না।

এসব কারনে মান্নানের কাছ থেকে সেলিম হোসেন দিপুকে সরাতে বিএনপির একটি চক্রান্তকারী গোষ্টি মাঝে মাঝে সেলিম হোসেন দিপুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে আসছেন। মান্নানবিরোধীদের অনেকে মনে করে, মান্নানের কাছ থেকে সেলিমকে সরাতে পারলে মান্নানের হাতকে দূর্বল করা যাবে। কারন সেলিমের মত আরেকজন কর্মঠ ও পরিশ্রমী বিশ্বস্ত লোক পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে মান্নানের জন্য।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সেলিমকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে মান্নানের কাছ থেকে তাকে সরানোর অপচেষ্টা চলে। সেলিম হোসেন দিপু শুধুমাত্র মান্নানের পিএস হিসেবেই কাজ করছেন তা নয়, বরং বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথের অগ্রনী সৈনিক হিসেবে রাজনীতি করছেন। দুই ডজন মামলার আসামী হয়েছেন সেলিম। সেলিমের পিতা, চাচা, জেঠা, খালু, ফুফাসহ আত্মীয় স্বজনদের পুরুষ সকলেই রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়েছেন এবং অনেকে জেল খেটেছেন। সেলিম জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক আহ্বায়ক, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়কসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। বর্তমানের তিনি উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক পদেও রয়েছেন। রাজনীতিও করছেন সমানতালে। এর আগে বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন সেলিম হোসেন দিপু।